হতাশার বোঝা নিয়ে মাশরাফিদের শেষের লড়াই

ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তো বলেছেনই। আগে ও পরে বাইরেও বলেছেন বেশ কবার। ম্যাচের পরদিন দুপুরেও মাশরাফি বিন মুর্তজার কণ্ঠে সেই একই আক্ষেপের সুর। কথা-আড্ডার মাঝখানে হুট করেই বারবার আপন মনে বলে উঠছিলেন, “কী সুযোগটা হারালাম…!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিনেলসন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2016, 11:01 AM
Updated : 30 Dec 2016, 02:59 PM

নেলসনের টিম হোটেলের সামনে তখন একজন-দুজন করে আসতে শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা। পাশেই মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাবেন সবাই। ওদিকে মাশরাফির আফসোস-কাব্য চলছেই, “কালকে জিততে পারলে সিরিজটা অন্যরকম হতে পারত। আজকের দিনটিই অন্যরকম থাকত। আমারও একটি পরিকল্পনা ছিল…।”

বাংলাদেশ জিতলে একটি বিশেষ পরিকল্পনা ছিল মাশরাফির। জয়ের পথে দারুণভাবেই ছিল দল। কিন্তু নিজেরাই আবার ধরে উল্টো পথ। মাশরাফির পরিকল্পনা মারা যায় মাঠে, স্যাক্সটন ওভালে!

পরদিনই আরেকটা ম্যাচ। কিন্তু আগের দিনের হার ছাড়ছিল না পিছু। দল হয়ত হতাশায় আচ্ছন্ন নয়, তবে রেশটা আছে ঠিকই। মাশরাফির পাশে বসে তামিম ইকবালও বলছিলেন আফসোসের কথা। নিজের ভুলের কথাও স্বীকার করলেন অকপটে।

নিজেদের রান আউটের কাটাছেড়া করলেন ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। সুযোগ হাতছাড়ার হতাশা কম বেশি সবার কণ্ঠেই।

সিরিজের ফয়সালা হয়ে গেছে। শেষ ম্যাচের আগের দিন দুদলেরই ছিল না অনুশীলন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছিল ছুটি। সকাল থেকে তবু সবাই ছিলেন হোটেলেই। দুপুর ৩টার দিকে অবশ্য দল গিয়েছিল ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে। হারের হতাশা ভুলতে ও সবাইকে একটু ফুরফুরে করতে উদ্যোগটা কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের। জিম করার জন্য অবশ্য ঘুরতে যাননি মাশরাফি। যাননি তামিম, সাকিব ও মুশফিকও।

এই ঘোরাঘুরিতে দল কতটা চাঙা হলো, বলা কঠিন। তবে খুব একটা হওয়ার কথা নয়। আগের দিনের হারের ক্ষতটা যে বেশ গভীর! মাশরাফিও মেনে নিচ্ছেন, শেষ ওয়ানডেতে ভালো কিছু করাও সহজ হবে না।

“সবাই আশা করছিল ম্যাচটি আমরা জিতব। বিশেষ করে ম্যাচের মাঝ বিরতিতে ছেলেরা কেউই আশা করেনি হারবে। ভালো একটা শুরুর পর যেভাবে হেরেছি আমরা, ছেলেরা হয়ত এটা নিয়ে ভাবতেও পারে। সত্যি বলতে শেষ ম্যাচে কাজটা কঠিন হবে।”

তবে অধিনায়ক হয়ে তো আর শুধু আধারে ডুবে থাকলে চলে না। আলোর রেখা অনুসরণ করতে হয়। পথ বাতলে দিতে হয়। পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আগে কিছু খড়কুটো অন্তত জোগাড় করার চেষ্টা করতে হয়।

দেশের মাটিতে সবশেষ দুই সিরিজেই যে দলকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ, তাদের মাটিতে এসে এবার নিজেরা একই ভাগ্য মেনে নেওয়ার অপেক্ষায়। অন্তত সেটি রুখতে পারলেও কিছু একটা পাওয়া হয়! মাশরাফি করছেন সেই চেষ্টাই।

“এত দিন পর বিদেশ সফরে এসে নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা… এটিকেও ইতিবাচক ভাবে নেওয়া উচিত। পরের ম্যাচটিতেও যদি জিততে পারি, তাহলে সেটিও বড় পাওয়া হবে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। একটি ম্যাচ জিততে পারলেও বড় কিছু হবে। চেষ্টা করব সবাইকে গুছিয়ে আবার যেন স্বস্তির আবহে ম্যাচে নামতে পারি।”

শেষ ম্যাচের আগে এটিই আসলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নেলসনের উইকেট-কন্ডিশন বাংলাদেশের জন্য কঠিন নয় মোটেও। বরং এখানকার স্বাভাবিক উইকেটের চেয়ে এটি একটু মন্থর বলে এবং আগের ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনের কার্যকারিতায় নিউ জিল্যান্ড দলে ডেকেছে জিতান প্যাটেলকে। একাদশে থাকলে এই অফ স্পিনার ওয়ানডে খেলবেন ৭ বছর পর! বাংলাদেশ ফিরে পাবে আগের ম্যাচে বিশ্রাম থাকা মুস্তাফিজর রহমানকে। উইকেট একটুও গ্রিপ করলে খুশিই হওয়ার কথা তার।

তাই নিউ জিল্যান্ড বা নেলসন নয়, শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মূল প্রতিপক্ষ হতাশার বোঝা। আগের ম্যাচের ধাক্কায় টালমাটাল ভাবটা সামলে জয়ের আশায় মাঠে নামা। অধিনায়ক যেমন বলেছেন, সত্যিই যদি স্বস্তির তেমন আবহ গড়তে পারেন, কে জানে হয়ত অন্তত কিছু একটা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে!

নইলে বিদেশের মাটিতে অপেক্ষায় আরেকটি হোয়াইটওয়াশ।