‘এমন নয় যে রান আউট করেছে আমার শত্রু’

দুই ব্যাটসম্যান ছুটছেন একই প্রান্তে। বিভীষিকাময় কয়েকটি সেকেন্ড। দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট ছুঁইয়েছেন একই ক্রিজে! দুঃস্বপ্নের একটি চিত্র, যেটি পাল্টে দিয়েছে ম্যাচের মোড়; বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ভাগ্য। সেই রান আউটের দুই অনুঘটক এটিকে কিভাবে দেখছেন?

ক্রীড়া প্রতিবেদক নেলসন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2016, 07:38 AM
Updated : 30 Dec 2016, 12:51 PM

২৫২ রান তাড়ায় বাংলাদেশ যখন ১ উইকেটে ১০৫, তখনই সেই ভূতুড়ে রান আউট। সেটি দিয়েই ধসের শুরু। ১০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৪১। অলআউট ১৮৪ রানে।

রান আউটটি এতই বিভ্রান্তিকর ছিল যে শুরুতে হাঁটা শুরু করেছিলেন ইমরুল। তাকে থামান আম্পায়াররা। সিদ্ধান্ত নেন টিভি রিপ্লে দেখে। যেখানে দেখা যায়, স্ট্রাইক প্রান্ত থেকেও দৌড়ে গিয়ে আগে ক্রিজে পৌঁছে গেছেন ইমরুল। খুব কাছে থেকেও আগেভাগে ক্রিজে ব্যাট আনতে ভুলে গিয়েছিলেন সাব্বির। পারেননি শেষ মুহূর্তে।

শুরুতে ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় পেছন ফিরে সাব্বিরকে কিছু বলছিলেন ইমরুল। রিপ্লে দেখে পরে যখন আউট দেওয়া হলো সাব্বিরকে, এবার তার বিস্ময়ের শেষ নেই!

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, ওই রান আউটেই ঘুরে গেছে মোড়। নিউ জিল্যান্ডের সেঞ্চুরিয়ান নিল ব্রুমও একমত। ম্যাচের পর থেকে সেই রান আউট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়ছে তুমুল।

তবে ইমরুল ও সাব্বির দুজনই সেটি পেছনে ফেলে তাকাতে চাইছেন সামনে। শুক্রবার নেলসনের টিম হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ভুলটা মেনে নিলেন ইমরুল।

“রান আউট খেলারই অংশ। রান আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ভালোই চলছিল, দুজনের বোঝাপড়া ভালো ছিল। একটা ভুল হয়ে গেছে। ওটা অবশ্যই টার্নিং পয়েন্ট ছিল। সাব্বির ও আমি আর কিছুক্ষণ খেলতে পারলে ম্যাচ সহজ হয়ে যেত। তবে এটা খেলারই অংশ। মেনে নিতেই হবে।”

সাব্বির ওই সময় যেভাবে খেলছিলেন, তাতে আর কয়েক ওভার উইকেটে থাকলেই নিউ জিল্যান্ড হয়ত আস্তে আস্তে জয়ের আশা ছেড়ে দিত। তিন ছক্কায় ৩৮ রান করা সাব্বিরের বিদায়ে মোমেন্টামও চলে যায় বাংলাদেশের হাত থেকে।

রান আউটের ভুল বোঝাবুঝিতে দায় যার বেশি বা কম থাকুক, কাছে থেকেও ক্রিজে ফিরতে না পারার দায় সাব্বিরকেই নিতে হবে। দলে হয়ত ওই সময় তাকেই বেশি প্রয়োজন ছিল! সাব্বির অবশ্য বলছেন উল্টো কথা। তিনি বরং আক্ষেপ করছেন, আগেই ইমরুলের জন্য নিজে উইকেট ছেড়ে না আসায়!

“ব্যাট প্লেস করা নিয়ে কোনো ভাবনা ছিল না যে আগে করব না পরে। ইমরুল ভাই আগে চলে গেছেন, এজন্য উনি বেঁচে গেছেন। আমি আউট হয়েছি। উনি সেট ব্যাটসম্যান। আমার উচিত ছিল উনাকে ক্রিজ ছেড়ে দেওয়া।”

“আমরা সব সময় একসঙ্গে থাকি। অন্য রকম কোনো আলোচনা হয়নি। এমন নয় যে রান আউট করেছে আমার শত্রু। রান আউটটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে গেছে; ক্রিকেটে এমন অনেক কিছুই হয়। ভবিষ্যতে আর হবে না।”

ভবিষ্যতে আর হোক বা না হোক, এটা নিশ্চিত, এই রান আউট তাড়িয়ে বেড়াবে অনেক দিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হতাশার সেই শেষ তিন বলের মত না হোক, এই রান আউটের স্মৃতিও অনেক দিন মনে করিয়ে দেবে, হাতছাড়া হয়েছে বড় একটি সুযোগ!