রেকর্ড হ্যাটট্রিকে ভাস্বর হেরাথ

ধারাভাষ্যকক্ষে ব্রায়ান মারগাট্রয়েড বলছিলেন, ‘হ্যাটট্রিক সিদ্ধান্তের জন্য সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসেরই দীর্ঘতম অপেক্ষা’! আরেক ধারাভাষ্যকার ব্রেন্ডন জুলিয়ান সমালোচনা করছিলেন হ্যাটট্রিকের আকাঙ্ক্ষায় অযথা একটি রিভিউ নষ্ট করার। শ্রীলঙ্কানদেরও খুব আশাবাদী মনে হচ্ছিল না। কিন্তু রিভিউ চমকে দিল সবাইকে। আউট এবং রঙ্গনা হেরাথের হ্যাটট্রিক!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2016, 05:41 AM
Updated : 6 August 2016, 09:42 AM

প্রতিনিয়ত বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখয়ে চলা হেরাথ হ্যাটট্রিক করলেন ৩৮ বছর ১৩৯ দিন বয়সে। টেস্ট ক্রিকেটে এটি ৪২তম হ্যাটট্রিক। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখন হেরাথেরই। বয়স কেবলই সংখ্যা, আসলে তিনি ৩৮ বছরের ‘তরুণ!’

টেস্টে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক ছিল টম গডার্ডের। ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ইংলিশ এই অফ স্পিনার হ্যাটট্রিক করেছিলেন ৩৮ বছর ৮৬ দিন বয়সে।

শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গল টেস্টের দ্বিতীয় সকালে টানা তিন বলে হেরাথ ফেরান অ্যাডাম ভোজেস, পিটার নেভিল ও মিচেল স্টার্ককে। ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডের জনি ব্রিগসের পর এই প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন কোনো বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার।

শ্রীলঙ্কার মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করলেন হেরাথ। টেস্টে দেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন নুয়ান জয়সা। ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ইনিংসের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলে উইকেট নিয়েছিলেন দীর্ঘদেহী বাঁহাতি এই পেসার।

১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে এই গলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল হেরাথের। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭ বছর পূর্তির কাছাকাছি গিয়ে এই একই মাঠে, একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দারুণ এক কীর্তিতে নাম লেখালেন ইতিহাসে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই নিয়ে হ্যাটট্রিক হলো ৯টি। সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক তাদের বিপক্ষেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হয়েছে ৬টি।

২ উইকেটে ৫৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া সকাল থেকেই ধুঁকেছে লঙ্কান স্পিনে। দিলরুয়ান পেরেরা ফিরিয়ে দেন উসমান খাওয়াজাকে, হেরাথ বোল্ড করলেন স্টিভেন স্মিথকে।

মিচেল মার্শ ও অ্যাডাম ভোজেস চেষ্টা করছিলেন খানিকটা প্রতিরোধের। হেরাথের স্পিনে সব ভেঙে চুরমার।

হ্যাটট্রিক উইকেটের প্রথমটিতে বড় অবদান ফিল্ডারেরও। ভোজেসের ড্রাইভ এক্সট্রা কাভারে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় মুঠোবন্দি করেন দিমুথ করুনারত্নে। পরের বলটি আর্ম ডেলিভারি, নেভিল বুঝতেই পারেননি। সাদা চোখেই ধরা পড়েছে পরিষ্কার এলবিডব্লিউ।

হ্যাটট্রিক ডেলিভারিটি ছিল উল্টো। খালি চোখে মনেই হয়নি আউট। ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, অফ স্টাম্পের বাইরে। বলের উচ্চতা নিয়েও ছিল সংশয়। আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি আউট দেননি। হেরাথ বা অধিনায়ক ম্যাথিউসের শরীরী ভাষায়ও ছিল না আশার ইঙ্গিত। হ্যাটট্রিক ডেলিভারি বলেই হয়ত অনেকটা ভেবে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন ম্যাথিউস।

সেই রিভিউয়ের ফল লঙ্কানদের জন্য বয়ে আনে আনন্দময় বিস্ময়। আম্পায়ার সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে আউট দিতেই হেরাথকে আকাশে তুলে নেন সতীর্থরা। উল্লাস ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে, গ্যালারিতে। জয়সার হ্যাটট্রিকের সময় যিনি ছিলেন অধিনায়ক, এখন প্রধান নির্বাচক, সেই সনাৎ জয়াসুরিয়া দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তালি দিয়ে গেলেন ক্রমাগত।

বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পালায় হেরাথ নিজেকে তুলে নিলেন নতুন উচ্চতায়!