মাশরাফির কাছেই হারল শেখ জামাল

দুঃসময়ের বৃত্তে থাকা কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে জাগাতে প্রয়োজন ছিল দারুণ কিছু। সেটাই করে দেখালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এর আগে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ৪ উইকেট নিয়েও জেতাতে পারেননি দলকে। এবার দলকে জিতিয়েই ছাড়লেন ব্যাট হাতে অসাধারণ কীর্তিতে!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2016, 12:39 PM
Updated : 14 May 2016, 01:54 PM

ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়া শতকের পর বোলিংয়ে প্রথম ওভারেই শিকার প্রতিপক্ষের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান; মূলত মাশরাফির কাছেই হেরে গেল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ফতুল্লায় দুই দলের লড়াইয়ে কলাবাগান জিতেছে ২১ রানে।

৩১৬ রানের জবাবে ২৯৫ রানের স্কোরলাইন বোঝাতে পারে ম্যাচটি ছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আদতে ম্যাচের উত্তেজনা শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। শেষ ২ ওভারে শেখ জামাল ৪১ রান তুলে ফেলাতেই ব্যবধান হয়েছে এত কম।

কলাবাগানের সম্ভাব্য মাঝারি স্কোর খুব দ্রুতই বড় স্কোরে রূপ নেয় মাশরাফির খুনে ব্যাটিংয়ে। ৫০ বলে করেছেন শতক, ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে যেটি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের দ্রুততম। ছক্কা মেরেছেন ১১টি, যেটিও লিস্ট এ-তে বাংলাদেশের রেকর্ড!

ওপেনার জসিমউদ্দিন (৯৭ বলে ৬৪) ও তিনে নামা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (৪৭ বলে ৪৪) ভালোই এগিয়ে নিয়েছেন কলাবাগানকে। তবে রান রেট ছিল পাঁচের আশেপাশে। রানের গতিতে জোয়ার আনতেই ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাশরাফি।

উইকেটে যাওয়ার খানিক পরই টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন নাজমুস সাদাতকে। পঞ্চাশ হওয়ার আগে মেরেছেন আরও ৩টি ছক্কা। ৩৫ বলে করেন অর্ধশতক। পরে তাণ্ডব বেড়ে যায় আরও। পরের পঞ্চাশ করতে লাগে আর মাত্র ১৫ বল! ছক্কা আরও ৭টি।

৪৫ ওভার শেষেও মাশরাফির রান ছিল ৫৮। পরের ৩ ওভারের টর্নেডোতে চোখের পলকে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক। মুক্তার আলির এক ওভারে মেরেছেন তিন ছক্কা। বাঁহাতি স্পিনার ওয়াহিদুল আলমের এক ওভারে চারটি ছক্কায় শতক।

শেষ পর্যন্ত ৪৯তম ওভারে শফিউল ইসলামের বলে মাশরাফি ধরা পড়েন মার্শাল আইয়ুবের হাতে। ২টি চার ও ১১ ছক্কায় ৫১ বলে ১০৪!

লিস্ট এ-তে মাশরাফির আগের সর্বোচ্চ ছিল ৬৯। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অবশ্য সেঞ্চুরি আছে একটি (১৩২*)।

শেষ ১০ ওভারে কলাবাগান তোলে ১০৮ রান। কলাবাগানের ৩১৬ রান এবারের লিগে এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান।

বোলিংয়ে তুলোধুনো হওয়া মুক্তার ও ওয়াহিদুল পরে ঝড় তুলেছেন ব্যাট হাতে। তবে শেখ জামালের হার নিশ্চিত হয়ে গেছে এর আগেই।

আবাহনীর বিপক্ষে ১১০ বলে ১৩০ রান করা মাহবুবুল করিমকে শূন্য রানেই ফেরান মাশরাফি। আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রমোশন পেয়ে তিনে নামা সোহাগ গাজী ৭০বলে ৭১ রানের জুটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় উইকেটে।

তবে এবার শেখ জামালের হন্তারক হয়ে ওঠেন মাসাকাদজা। টানা স্পেলে ৪ উইকেট তুলে নেন এই জিম্বাবুইয়ান। ২৬তম ওভারে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যখন আউট হলেন, শেখ জামালের রান ৬ উইকেটে ১২৪।

পরে উইকেট কিপার জাবিদ হাসান অপরাজিত থেকে যান ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক করে (৫২*)। প্রথম অর্ধশতক করেন মুক্তারও (৩৮ বলে ৫১)। আর ১১ নম্বরে নেমে ছয়টি ছক্কায় ২৭ বলে ৪৯ করেন ওয়াহিদুল। ইনিংসের শেষ ওভারে নিহাদুজ্জামানকে মারেন ৩ ছক্কা, আগের ওভারে শরিফুল্লাহকে ২ ছক্কা, ১ চার।

এসবে শুধু কমেছে ব্যবধান, আর বিনোদন পেয়েছেন মাঠে থাকা দর্শকেরা। ম্যাচের ভাগ্য তো আগেই লিখে দিয়েছেন মাশরাফি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কলাবাগান ক্রীড়া চক্র: ৫০ ওভারে ৩১৬/৭ (সাদমান ১৭, জসিমউদ্দিন ৬৪, মাসাকাদজা ৪৪, তাসামুল ৩৩, মেহরাব ১৬, মাশরাফি ১০৪, শরিফুল্লাহ ১৫, তানভির ৯*, রাজ্জাক ০*; শফিউল ১/৬৩, সোহাগ ২/৩৯, ওয়াহিদুল ০/৫৭, সানি ০/৩৭, মুক্তার ০/৪১, মাহমুদউল্লাহ ২/৫৬, সাদাত ১/১৮)।

শেখ জামাল: ৫০ ওভারে ২৯৫ (আব্দুল্লাহ ৪০, মাহবুবুল ০, সোহাগ ৪৭, মার্শাল ১, মাহমুদউল্লাহ ২৭, সাদাত ৭, জাবিদ ৫২*, মুক্তার ৫১, সানি ১১, শফিউল ৩, ওয়াহিদুল ৪৯; মাশরাফি ১/৪২, সাব্বির ১/৩৫, রাজ্জাক ১/৫৫, মাসাকাদজা ৪/৩৭, নিহাদুজ্জামান ১/৭৩, শরিফুল্লাহ ০/২৬, তানভির ১/২৫)।

ফল: কলাবাগান ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা।