এনামুলের ৭৮ আর জানাতের শেষের ঝড়ে শীর্ষে বরিশাল

বরিশালকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত পারল না চট্টগ্রাম।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2023, 05:31 PM
Updated : 27 Jan 2023, 05:31 PM

কার্টিস ক্যাম্পারের বলটি উড়িয়ে মারলেন করিম জানাত। কিন্তু টাইমিং হলো না ঠিকঠাক। লং অফ সীমানা থেকে ছুটে হাতে জমানোর চেষ্টা করলেন মেহেদি হাসান রানা। মোটামুটি সহজ ক্যাচ। বোলার দুই হাত উঁচিয়ে উদযাপনও শুরু করলেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই অবাক হয়ে দেখলেন, ক্যাচ হয়নি। উল্টো বল গড়িয়ে গেল বাউন্ডারিতে। শুধু ক্যাচই নয়, ফসকে গেল চট্টগ্রামের জয়ের শেষ সম্ভাবনাটুকুও।

ভীষণ দুরূহ হয়ে ওঠা ম্যাচে বিধ্বংসী ক্যামিওতে বরিশালকে জয়ের কাছে নিয়ে যান সেই জানাতই। পরে শেষ ওভারে যখন ফিরলেন এই আফগান, জয় তখন প্রায় নিশ্চিত। বাগে পেয়েও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স হারাল সুবর্ণ সুযোগ। ৩ উইকেটের দারুণ জয়ে ফরচুন বরিশাল উঠে গেল শীর্ষে।

বিপিএলের ম্যাচে শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম ২০ ওভারে তোলে ১৬৮ রান। রান তাড়ায় নাটকীয়তার নানা মোড় পেরিয়ে বরিশাল শেষ পর্যন্ত জিতে যায় চার বল বাকি থাকতে।

৬টি করে চার ও ছক্কায় এনামুল হকের ৫০ বলে ৭৮ রানের ইনিংস বরিশালকে এগিয়ে নেয় শুরুতে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার নিহাদউজ্জামানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে চট্টগ্রাম। একসময় তারাই ছিল সম্ভাবনায় এগিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিলেন করিম জানাত।

তিনি যখন উইকেটে যান, বরিশালের প্রয়োজন ছিল ২৬ বলে ৫২ রান। বাইরে ছিল না আর কোনো ব্যাটসম্যান। তাকেই করতে হতো বিশেষ কিছু। তিনি তা করে দেখালেন সালমান হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে।

স্রেফ ১২ বলে ৩১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন তিনি। সালমানের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে তার জুটির পঞ্চাশ আসে স্রেফ ২০ বলে! শেষ দিকে দারুণ কয়েকটি শট খেলে সালমান অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ১৮ রানে।

ম্যান অব দা ম্যাচ যদিও এনামুল। টুর্নামেন্টে আগের ৭ ম্যাচ খেলে তার মোট রান ছিল ১১৭। এ দিন আসরে প্রথমবার ৩০ রান পেরিয়ে সেটিকে রূপ দেন কার্যকর ইনিংসে।

তার শুরুটা ছিল সাবধানী। শুরুতে ১১ বলে রান ছিল স্রেফ ১। পরে মেহেদি হাসান রানার দুটি শর্ট বল পেয়ে পুল শটে উড়িয়ে দেন ছক্কায়। এক ওভার পর আবার টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি শুভাগতকে।

পঞ্চম ওভারে মেহেদি রানার কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন সাইফ হাসান। তবে দলের রান ততক্ষণে উঠে গেছে ৫ ওভারে ৪৮।

সেটিকে পরে আরও বাড়িয়ে নেন এনামুল। বিপিএলে অভিষিক্ত আইরিশ পেসার কার্টিস ক্যাম্পারের টানা চার বলে মারেন তিনি এক ছক্কা ও তিন চার। এর শেষটিতে তার ফিফটি হয়ে যায় ২৭ বলে।

পাওয়ার প্লেতে বরিশাল তোলে ৬৭ রান। তাতে এনামুলের অবদানই ৫২।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন নিহাদউজ্জামান। তার ঝুলিয়ে দেওয়া বল ইয়র্ক বানিয়ে বোল্ড হয়ে যান সাকিব (৬ বলে ২)।

পরের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্রিজ ছেড়ে বেরোতে দেখে অনেক বাইরে বল করেন নিহাদ। ব্যাট বাড়িয়েও নাগাল পাননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওয়াইড বলে স্টাম্পড! নিজের পরের ওভারে প্রায় একইভাবে ফেরান তিনি চতুরাঙ্গা ডি সিলভাকেও।

এনামুল অবশ্য এক প্রান্ত থেকে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ক্যাম্পারের আরেকটি শর্ট বলে ছক্কা মারেন তিনি পুল শটে, চার মারেন আরও দুটি।

শেষ পর্যন্ত তার ইনিংস থামান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। নতুন স্পেলে ফেরা বাঁহাতি পেসারকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান এনামুল।

পরের ওভারে নিহাদের বলে যখন ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হলেন ইফতিখার আহমেদ, চট্টগ্রামের জয়কেই তখন মনে হচ্ছিল সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল। কিন্তু সব বদলে দিলেন করিম জানাত আর সালমান হোসেন।

প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেন জানাত। পরের ওভারে মেহেদি রানাকে ছক্কা মারেন টানা দুটি। ক্যাম্পারের বলে মারেন টানা দুই চার, যেটির শেষটিতেই পান জীবন। সমীকরণ চলে আসে নাগালে।

সালমান তখনও পর্যন্ত ছিলেন দর্শক হয়ে। ১৯তম ওভারে তিনি বিশাল একটি ছক্কার সঙ্গে দুটি চার মারেন মৃত্যঞ্জয়কে।

শেষ ওভারের প্রথম বলে উন্মুক্ত চাঁদের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন জানাত। তবে পরের বলেই বাউন্ডারিতে কাজ শেষ করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।

ম্যাচের শেষের মতো শুরুটাও ভালো ছিল না চট্টগ্রামের। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা দ্বিতীয় ওভারে হারায় মেহেদি মারুফকে। স্লিপে জীবন পাওয়ার পরের বলেই মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফিরতি ক্যাচ দেন আসরে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা ওপেনার।

পরের ওভারে দুটি চার মেরে চাপ সরানোর চেষ্টা করেন ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে তিনি বা তিনে নামা উন্মুক্ত চাঁদ পারেননি রানের গতি বেশি বাড়াতে। ১৩ বলে ১৬ রান করে ফেরেন চাঁদ। পাওয়ার প্লেতে ১৯ বল খেলে ও’ডাউড করতে পারেন কেবল ১৮ রান।

চট্টগ্রামের বিপদ আরও বাড়তে পারত। আফিফ হোসেন সহজ ক্যাচ দেন প্রথম বলেই। তবে থার্ডম্যানে তা নিতে পারেননি কামরুল ইসলাম রাব্বি। জীবন পেয়ে আফিফ দম দেন রানের গতিতে। সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে র‌্যাম্প শটে ছক্কার পর চার মারেন কাট শটে। তখনও পর্যন্ত ২৪ বলে ২০ রানে থাকা ও’ডাউড একটু জেগে উঠে ছক্কায় ওড়ান ইফতিখার আহমেদকে।

দুজনের কেউই বড় করতে পারেননি ইনিংস। ও’ডাউড থামেন ৩৪ বলে ৩৩ করে। আফিফের সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৩ বলে ৩৭ রানে। এই দুজনের মাঝে বাজে শট খেলে বিদায় নেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক শুভাগতও।

কার্টিস ক্যাম্পার ও ইরফান শুক্কুর সেখান থেকে এগিয়ে নেন দলকে। ক্যাম্পার শুরুতে একটু সময় নেওয়ার পর শেষ দিকে তোলেন ঝড়। ইরফান অবশ্য দ্রুত রান করতে ধুঁকছিলেন। তবে টিকে থেকে সঙ্গ দেন ক্যাম্পারকে।

সাকিবের করা শেষ ওভারে ক্যাম্পারের ছক্কা-চার ও ইরফানের ছক্কায় আসে ১৮ রান। শেষ ৪ ওভার থেকে আসে ৫৭ রান। ক্যাম্পার অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ৪৫ রান করে, ১০ বলে ২০ ইরফান।

তখন এটিকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর বলেই মনে হচ্ছিল। লড়াই হয়েছেও। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সফল ক্যাম্পার নিজের আসল কাজ বোলিংয়ে ছিলেন খরুচে। পারেনি তার দলও।

৮ ম্যাচে ৬ জয়ে সিলেটের সমান ১২ পয়েন্ট নিয়েও বরিশাল শীর্ষে রান রেটে এগিয়ে থাকায়। ৮ ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি ষষ্ঠ হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাস চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৬৮/৫ ( মারুফ ৫, ও’ডাউড ৩৩, চাঁদ ১৬, আফিফ ৩৭, শুভাগত ২, ক্যাম্পার ৪৫*, ইরফান ২০*; সাকিব ৩-০-৩৫-০, ওয়াসিম ৪-০-২২-১, চতুরাঙ্গা ১-০-৭-০, খালেদ ৪-০-২৬-২, জানাত ৩-০-২৭-০, ইফতিখার ১-০-১০-০, কামরুল ৪-০-৩৮-২)

ফরচুন বরিশাল: ১৯.২ ওভারে ১৭১/৭ (এনামুল ৭৮, সাইফ ১০, সাকিব ২, মাহমুদউল্লাহ ০, চতুরাঙ্গা ৩, ইফতিখার ১৩, সালমান ১৮*, জানাত ৩১, ওয়াসিম ৪*; মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-২০-১, মেহেদি রানা ৩.২-০-৪২-২, শুভাগত ১-০-১৯-০, ক্যাম্পার ৪-০-৫৩-০, বিজয়াকান্থ ৩-০-১৩-০, নিহাদউজ্জামান ৪-০-১৭-৪)

ফল: ফরচুন বরিশাল ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক