জাঁকজমকপূর্ণ এনসিএল টি-টোয়েন্টি: জানার আছে যা কিছু

অবশেষে বিসিবির আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু হতে যাচ্ছে, সিলেটে আট দলের আসর শুরু বুধবার।

দেশের ক্রিকেটের দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান অবশেষে হতে চলেছে। রাত পোহালেই নতুন সকালে শুরু হবে ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন টুর্নামেন্ট। শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেটের এই প্রতিযোগিতার নাম জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টি বা এনসিএল টি-টোয়েন্টি।

স্পন্সরদের নাম জুড়ে নিয়ে টুর্নামেন্টের কেতাবি নাম আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক প্রেজেন্টস এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠ ও আউটার মাঠে বুধবার শুরু হবে এই টুর্নামেন্ট। কিছুদিন আগে ঝলমলে আয়োজনে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার হয় ট্রফি উন্মোচন। প্রতিবার এই ট্রফিই দেওয়া হবে চ্যাম্পিয়ন দলকে। উদ্বোধনী ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার সিলেটে হলো দলগুলোর জার্সি উন্মোচন।

সব মিলিয়ে বেশ জাঁকালোভাবেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে বিসিবি। এক ঝলকে এখানে দেখে নিতে পারেন এই টুর্নামেন্টের আদ্যোপান্ত।

এনসিএল টি-টোয়েন্টি কী

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একমাত্র নিয়মিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএল। তবে সেটি মূলত দেশি-বিদেশির ক্রিকেটারদের মিলিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর। স্থানীয় ক্রিকেটারদের যথাযথ চর্চায় রাখা, টি-টোয়েন্টিতে নতুন প্রতিভা তুলে আনার জন্য অন্তত আরেকটি নিয়মিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের দাবি ছিল অনেক দিনের। সেই লক্ষ্যেই শুধু দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি শুরু করতে যাচ্ছে বিসিবি।

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হিসেবেই বিবেচিত হবে এই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলি। যেটির মানে, টুর্নামেন্টের সবকিছুই থাকবে রেকর্ডে।

জাতীয় লিগের টি-টোয়েন্টির আয়োজন অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ২০১০ সালে একবার হয়েছিল এটি। তবে পরে আর চালু থাকেনি।

২০১৯ ও ২০২১ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। এছাড়াও ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করে বিসিবি। ২০০৯ ও ২০১০ সালে পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগ নামেও একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়। কোনোটিই এক-দুই আসরের বেশি স্থায়ী হয়নি।

এবার বিসিবির আশা, এখন থেকে নিয়মিত এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজনের মাধ্যমে বিপিএলে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভালো করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারবেন দেশের ক্রিকেটাররা।

কয়টি দল খেলবে

জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের আট দলই খেলবে এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে। সাত বিভাগীয় দল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে অংশ নেবে ঢাকা মেট্রো।

২০১০ সালে ছয় দলের জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে কিংস অব খুলনাকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুলেছিল রাজশাহী রেঞ্জার্স। সেবার প্রতি দলে দুজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ ছিল।

টুর্নামেন্টের ভেন্যু

প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বের খেলা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই মাঠে হবে। পরে প্লে-অফ ও ফাইনাল হবে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

তবে পরে পরিকল্পনায় বদল আনা হয়। আগামী ২৩ ডিসেম্বর তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে ‘মিউজিক্যাল ফেস্ট’ হবে শের-ই-বাংলায়। এটির জন্য মূলত আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়েছিল বিসিবি। সেই অনুমতি পায়নি তারা। তাই এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট পুরোটাই হবে সিলেটে।

টুর্নামেন্টের ফরম্যাট

আট দলের অংশগ্রহণে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হবে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। প্রতিটি দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে একটি করে ম্যাচ।

লিগ পর্বের সাত ম্যাচ করে খেলার পর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চার দল পাবে প্লে-অফের টিকেট। বিপিএলের মতোই ফাইনালের প্রথম দল বেছে নিতে টেবিলের শীর্ষ দুই দল নিয়ে হবে প্রথম কোয়ালিফায়ার। তৃতীয় ও চতুর্থ দল খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচ।

পরে এলিমিনেটর জয়ী ও প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দল খেলবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার। ওই ম্যাচের জয়ী দল নামবে শিরোপার লড়াইয়ে।

টুর্নামেন্টের সূচি

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়ে দুই সপ্তাহের ব্যাট-বলের লড়াই শেষ হবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। প্রথম পর্বের খেলা চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২১ ও ২২ ডিসেম্বর হবে প্রথম কোয়ালিফায়ার, এলিমিনেটর ও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ২৪ ডিসেম্বর।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও এর আউটার মাঠে একসঙ্গে দুটি করে মোট চারটি ম্যাচ হবে প্রতিদিন। দুই দিন পরপর রাখা হয়েছে এক দিন বিরতি।

মূল মাঠে সকাল ৯টা ৩০ মিনিট ও দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। আউটার মাঠে সকাল ৯টা ও দুপুর ১টায় শুরু হবে দিনের দুই ম্যাচ।

প্লে-অফ পর্বের চার ম্যাচই হবে মূল মাঠে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচ শুরু বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে।

টুর্নামেন্টের প্রাইজ মানি

আট দলের দুই সপ্তাহের লড়াই শেষে চ্যাম্পিয়ন দল সুদৃশ্য একটি ট্রফির পাশাপাশি পাবে ২০ লাখ টাকা। রানার্স-আপ দলের জন্য থাকছে ১০ লাখ টাকা।

এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার ২ লাখ টাকা ও প্রতি ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার পাবেন ২০ হাজার টাকা।

তারার আলো

এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে প্রায় সাত মাস পর স্বীকৃত ক্রিকেটে ফিরছেন তামিম ইকবাল। গত মে মাসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর আর কোনো ধরনের ক্রিকেটে দেখা যায়নি তাকে। এবার চট্টগ্রামের হয়ে ৪-৫টি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের।

কুচকির চোটে পুনর্বাসনে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর অধিনায়কত্ব। তার অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা সংশয় এখনও রয়ে গেছে। দল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে তার খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ দলে থাকলে মাঝপথেই এনসিএল ছেড়ে যেতে হবে জাতীয় দলের অধিনায়ককে।

জাতীয় দলের দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় জাতীয় লিগের চার দিনের সংস্করণে একটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি জাকির হাসান। টি-টোয়েন্টিতে তার নেতৃত্বেই খেলবে সিলেট।

এছাড়া সদ্য অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিমকে রাখা হয়েছে খুলনার স্কোয়াডে। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হতে পারে যুব ওয়ানডেতে অভিষেকে সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়া ব্যাটসম্যানের।

টিকেট পাওয়া যাবে কোথায়

মাঠে বসে সরাসরি খেলা দেখার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা রেখেছে আয়োজকরা। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড ৩০০, ক্লাব হাউজ ১০০ ও পূর্ব গ্যালারির টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে ৫০ টাকা।

সিলেটে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সবগুলো শাখায় পাওয়া যাবে টিকেট। এছাড়া সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটকের বাইরে টিকেট কাউন্টারে ম্যাচের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা ও ম্যাচব্যতীত দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যাবে টিকেট।

কোথায় দেখা যাবে খেলা

এনসিএল টি-টোয়েন্টির ১৮টি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের একমাত্র খেলাধুলার চ্যানেল টি স্পোর্টস। সবগুলো ম্যাচই সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টস অফিসিয়াল অ্যাপে।

এর বাইরে ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্যানকোড’ ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।