১২৫ রানের ইনিংস খেললেন লিটন, ১০৮ করলেন তানজিদ, দুজনের কারও সমান রান করতে পারল না গোটা রাজশাহী দল মিলেও, টানা ছয় হারের পর প্রথম জয়ের স্বাদ পেল ঢাকা ক্যাপিটালস।
Published : 12 Jan 2025, 09:58 PM
ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ও তুলনামূলক ছোট সীমানা মিলিয়ে চলতি বিপিএলে রানের জোয়ার বইছে শুরু থেকেই। এবার লিটন কুমার দাস ও তানজিম হাসানের সৌজন্যে যা দেখা গেল, সেটিকে বলা যায় মহাপ্লাবন। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সবুজ প্রান্তর চিরে সাদা বল ছুটে গেল বাউন্ডারিতে, আলোর ঝিলিক হয়ে উড়ে গেল গ্যালারিতে। সেঞ্চুরি, রান, রেকর্ড, সবকিছুর ধুন্দুমার লেগে গেল যেন। ঢাকা ক্যাপিটালসের সে ডামাডোলে স্রেফ চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেল দুর্বার রাজশাহী।
টানা ছয় ম্যাচ হারার পর বিপিএলে বহু আকাঙ্ক্ষিত জয়ের স্বাদ অবশেষে পেল ঢাকা ক্যাপিটালস। সেই জয়টিও এলো প্রবল প্রতাপে। দুর্বার রাজশাহীকে বিধ্বস্ত করল তারা ১৪৯ রানে হারিয়ে।
রানের হিসাবে বিপিএলে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়ের রেকর্ড এটি। রেকর্ড আরও কতশত হলো, সেই হিসাব রাখাও কঠিন!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দল থেকে বাদ পড়ে দিনজুড়ে আলোচনায় ছিলেন যিনি, সেই লিটন দাস দেখালেন নিজের বিধ্বংসী সেরা রূপ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিতে গোটা ২০ ওভার খেলে অপরাজিত রইলেন তিনি ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ৫৫ বলে ১২৫ রান করে।
স্রেফ তিন বলের জন্য পুরো ২০ ওভার টিকতে পারলেন না তানজিদ হাসান। যখন ফিরলেন, তার নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছে ৬৪ বলে ১০৮।
দুর্বার রাজশাহীর দুর্বল বোলিং গুঁড়িয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস তোলে ২০ ওভারে ১ উইকেটে ২৫৪ রান। বিপিএলে যা সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
লিটন ও তানজিদ মিলে গড়েন ২৪১ রানের জুটি। উদ্বোধনী জুটিতে তো বটেই, যে কোনো জুটিতেই এটি বিপিএলের সেরা।
রান তাড়ায় গোটা রাজশাহী দল মিলে ছুঁতে পারেনি লিটন কিংবা তানজিদের ব্যক্তিগত রানও।
রেকর্ড আর রেকর্ড
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা প্রথম চার ওভারে তুলতে পারে ২২ রান। লিটন-তানজিদ একটু সাবধানী ছিলেন শুরুতে। ভূমিকা আছে তাসকিন আহমেদের বোলিংয়েরও। রাজশাহী দলে বোলার বলতে তো এই একজনই! তার দুই ওভার থেকে আসে আট রান।
সানজামুল ইসলামের বলে ৫ রানে লিটন রক্ষা পান কিপার আকবর আলি ক্যাচ নিতে না পারায়।
এরপর বোলিং থেকে সরে যান তাসকিন। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তানজিদ ও লিটন। পরের দুই ওভারেই আসে ৩৭ রান।
রানের এই ধারা চলতে থাকে। দলের শতরান আসে নবম ওভারে। রাজশাহীর আলগা বোলিং ও ফিল্ডিংক সাজা দিয়ে দুজনের ব্যাটে বয়ে যায় রানের স্রোত।
একের পর এক মাইলফলক ও রেকর্ড পেরিয়ে যান দুজন। সপ্তদশ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে দুইশ।
বিপিএলে শুরুর জুটিতে দুইশ রান এলো এই প্রথম। অতীত হয়ে গেল এক যুগ আগে শাহরিয়ার নাফীস ও লু ভিনসেন্টের ১৯৭ রানের রেকর্ড।
বিপিএলে যে কোনো জুটিতে ২০৫ রানের রেকর্ড একটু পরই পেরিয়ে যান দুজন।
লিটন শতরানে পা রাখেন ৪৪ বল খেলে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলে যা দ্রুততম সেঞ্চুরি। ১০৪ রানে তিনি আরেক দফায় বেঁচে যান সানজামুল ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ায়।
তানজিদ সেঞ্চুরি পূরণ করেন শেষ ওভারের প্রথম বলে। পরের বলে ছক্কা মারেন আরেকটি। তবে গত বিপিএলে খেলা ১১৬ রানের ইনিংস টপকে যেতে পারেননি তরুণ ওপেনার। আউট হয়ে যান তিন বল বাকি রেখে।
সাব্বির রহমান ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই মারেন বিশাল এক ছক্কা। শেষ বলে লিটনের আরেকটি ছক্কায় শেষ হয় ইনিংস। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে প্রথমবার আড়াইশ ছাড়ায় কোনো দল।
রানের পথে পিষ্ট রাজশাহী
ম্যাচের ভাগ্য তো গড়া হয়ে যায় প্রথম ভাগেই। দেখার ছিল, রান উৎসবে রাজশাহী শামিল হতে পারে কি না। কিন্তু প্রথম থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তারা এগিয়ে যায় বড় হারের দিকে। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ ২০ পর্যন্ত যেতে পারেননি।
সাতে নেমে রায়ান বার্ল ৯ চারে ৩৪ বলে ৪৭ রান করে রাজশাহীর রান একশ পার করান। বড় জয়ের আগের রেকর্ড দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে নতুন কীর্তি গড়ে ঢাকা ক্যাপিটালস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস : ২০ ওভারে ২৫৪/১ (লিটন ১২৫*, তানজিদ ১০৮, সাব্বির রহমান ৭*; সানজামুল ৩-০-৩৫-০, তাসকিন ৪-০-২৯-০, মেহরব ২-০-৩৪-০, শফিউল ৪-০-৬২-১, সোহাগ ৪-০-৫৬-০, সাব্বির ১-০-১৭-০, বার্ল ২-০-২১-০)।
দুর্বার রাজশাহী: ১৫.২ ওভারে ১০৫ (হারিস ০, সাব্বির হোসেন ১১, এনামুল ০, ইয়াসির ১৭, আকবর ১, মেহরব ২, বার্ল ৩৭*, সোহাগ ০, সানজামুল ১১, তাসকিন ৯, শফিউল ০; আবু জায়েদ ৩-০-১৫-২, মুকিদুল , মুস্তাফিজ ৩-০-২৭-১, মোসাদ্দেক ৩-০-১৬-২, ফারমানউল্লাহ ৩-০-২৬-২)।
ফল: ঢাকা ক্যাপিটালস ১৪৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস।