আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে প্রথম সেমি-ফাইনালে ৫ উইকেটে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ১৬৬ রান ছাড়িয়ে গেছে ৬ বল বাকি থাকতে। ২০ ওভারের বৈশ্বিক আসরে এই প্রথম ফাইনালে উঠল তারা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে একবারই দেড়শ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড। ২০১৪ আসরে চট্টগ্রামে নেদারল্যান্ডসের ১৫১ ছাড়িয়েছিল ৬ বল বাকি থাকতে।
এই জয়ে হয়ত ২০১৯ বিশ্বকাপে হারের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়বে। লর্ডসের সেই ফাইনালে মূল ম্যাচের পর সুপার ওভারও টাই হয়েছিল। কম বাউন্ডারির জন্য ইংল্যান্ডের কাছে শিরোপা হারিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। এর আগে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হেরেছিল এই ইংল্যান্ডের কাছেই।
স্কোর কার্ড যতটা বলছে ম্যাচ মোটেও তত সহজ ছিল না। শেষ ৪ ওভারে কিউইদের প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। মিচেল আর নিশামের খুনে ব্যাটিংয়ে কঠিন সমীকরণ ৩ ওভারেই মিলিয়ে ফেলল নিউ জিল্যান্ড!
ম্যাচের শেষ দিকে রানের বন্যা বয়ে গেলেও শুরুতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে ঝড় তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া জেসন রয়ের জায়গায় ওপেনিংয়ে নামা জনি বেয়ারস্টো ও জস বাটলারকে বেঁধে রাখেন নিউ জিল্যান্ডের বোলাররা।
ষষ্ঠ ওভারে ৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন অ্যাডাম মিল্ন। মাত্রই আক্রমণে আসা এই পেসারের বলে মিড অফে ধরা পড়েন বেয়ারস্টো। কাভার ড্রাইভ নিচে রাখতে পারেননি তিনি।
অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি বাটলার। লেগ স্পিনার ইশ সোধিকে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় এই কিপার-ব্যাটসম্যান ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
দাভিদ মালানের সঙ্গে মইনের পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিতে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ঝুঁকি নেননি দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কেউই। এক-দুই নিয়ে সচল রাখেন রানের চাকা। বাজে বলে মারেন বাউন্ডারি।
৩৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশিদূর এগোয়নি তাদের জুটি। টিম সাউদিকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে থামেন মালান। তার ৩০ বলে খেলা ৪১ রানের ইনিংস গড়া চারটি চার ও একটি ছক্কায়। ভাঙে ৪৩ বল স্থায়ী ৬৩ রানের জুটি।
একটি করে ছক্কা-চারে ১০ বলে ১৭ রান করা লিভিংস্টোনকে শেষ ওভারে বিদায় করেন নিশাম। পরের বলে তাকে চার মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন মইন। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের ৩৭ বলে খেলা ৫১ রানের ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে চার তিনটি।
রান তাড়ায় শুরুতেই মার্টিন গাপটিলকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। ক্রিস ওকসকে চার মেরে শুরু করা ওপেনার ইনিংসের তৃতীয় বলে ধরা পড়েন মিড অনে। নেমেই বেশ কিছু ডট বল খেলে ফেলা উইলিয়ামসন চাপ সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন র্যাম্প শটে। ঠিক মতো পারেননি নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক, শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ মুঠোয় জমান আদিল রশিদ।
১৩ রানের মধ্য গাপটিল ও উইলিয়ামসনকে হারিয়ে চাপে পড়া নিউ জিল্যান্ডকে টানেন মিচেল ও ডেভন কনওয়ে। শুরুতে একটু সময় নিলেও পরে শট খেলতে শুরু করেন দুই জনই। ৪৬ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে তাদের জুটি।
লিভিংস্টোনকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় কনওয়ে স্টাম্পিং হলে ভাঙে ৬৭ বল স্থায়ী ৮২ রানের এই জুটি। কনওয়ে ৩৮ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় করেন ৪৬। লিভিংস্টোনের পরের ওভারে লং অনে ক্যাচ দেন গ্লেন ফিলিপস।
নিশামের পর রশিদকে ছক্কা মারেন মিচেলও। ওভারের শেষ বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় নিশামের ক্যামিও। ১১ বলে তিন ছক্কা ও এক চারে তিনি করেন ২৭।
শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। ওকসকে দুই ছক্কার পর চার মেরে এক ওভারেই কাজ সেরে ফেলেন মিচেল। নিশ্চিত করেন রোববারের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের খেলা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালের জয়ী দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৬/৪ (বাটলার ২৯, বেয়ারস্টো ১৩, মালান ৪১, মইন ৫১*, লিভিংস্টোন ১৭, মর্গ্যান ৪*; সাউদি ৪-০-২৪-১, বোল্ট ৪-০-৪০-০, মিল্ন ৪-০-৩১-১, সোধি ৪-০-৩২-১, স্যান্টনার ১-০-৮-০, নিশাম ২-০-১৮-১, ফিলিপস ১-০-১১-০)
নিউ জিল্যান্ড: ১৯ ওভারে ১৬৭/৫ (গাপটিল ৪, মিচেল ৭২*, উইলিয়ামসন ৫, কনওয়ে ৪৬, ফিলিপস ২, নিশাম ২৭*, স্যান্টনার ১*; ওকস ৪-০-৩৬-২, জর্ডান ৩-০-৩১-০, রশিদ ৪-০-৩৯-১, উড ৪-০-৩৪-০, লিভিংস্টোন ৪-০-২২-২)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ড্যারিল মিচেল