ইংল্যান্ডের সামনে পাত্তা পেল না অস্ট্রেলিয়াও

একদিন আগে দেড়শ ছাড়ানো রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল ইংল্যান্ডের সামনে। পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত এক স্পেলে তাদের নাড়িয়ে দিলেন ক্রিস ওকস। সঙ্গত করলেন অন্য বোলাররাও। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে রেখে জস বাটলারের তাণ্ডবে ইংলিশরা তুলে নিল বড় জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2021, 05:04 PM
Updated : 30 Oct 2021, 09:29 PM

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয় ৮ উইকেটে।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া শেষ বলে অলআউট হয় ১২৫ রানে। ইংল্যান্ড তা পেরিয়ে যায় ৫০ বল বাকি থাকতেই!

মাত্র ৩২ বলে ৫টি করে ছক্কা ও চারে অপরাজিত ৭১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন বাটলার। পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করে ম্যাচের সেরা যদিও ক্রিস জর্ডান। ১৭ রানে এই পেসার নেন ৩ উইকেট।

আসরে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে জিতে সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে গেল ওয়েন মর্গ্যানের দল। টানা দুই জয়ের পর প্রথম হারের স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম ম্যাচে শিরোপাধারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৮.২ ওভারেই জিতে যায় ইংল্যান্ড। এরপর বাংলাদেশের ১২৪ রান ৩৫ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় তারা ৮ উইকেট হাতে রেখে। এবার তাদের বিপক্ষে পাত্তা পেল না অস্ট্রেলিয়াও।

বল (৫০) বাকি রেখে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় হার এটি। এর আগে তাদের বিপক্ষে ৩১ বল বাকি রেখে জিতেছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জেতার পর এবারই প্রথম বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয় দুই দল।

ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যা একটু লড়াই করতে পারেন কেবল অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। যদিও ৪৪ রান করতে তিনি খেলেন ৪৯ বল। আসরে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনের ৪৭ রানের জুটি ইনিংসের সর্বোচ্চ।

অস্ট্রেলিয়ার ১২৫ রান এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। ২০০৫ সালে ইতিহাসের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাউথ্যাম্পটনে ১৭৯ রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গিয়েছিল ৭৯ রানে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম চার ওভারে ১৫ রানের মধ্যে হারায় ৩ উইকেট।

আগের ম্যাচে দারুণ ফিফটি করা ডেভিড ওয়ার্নার এবার ওকসের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন ১ রানে। তিনে নেমে স্টিভেন স্মিথ ৫ বলে করেন ১। এই উইকেটেও বড় অবদান ওকসের। ক্রিস জর্ডানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পুল করেন স্মিথ। মিড অন থেকে কিছুটা পেছনে ছুটে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ওকস।

ডান হাতি এই পেসারের পরের ওভারে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৯ বলে ৬)।

পাওয়ার প্লেতে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তুলতে পারে কেবল ২১ রান। এই সময়ে তিন ওভারের স্পেলে মাত্র ৭ রান দিয়ে ওকসের প্রাপ্তি ২ উইকেট। দুই ওভারে ৭ রান দিয়ে জর্ডানের একটি।

পরের ওভারের প্রথম বলেই স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ২১। আক্রমণে ফিরে মার্কাস স্টয়নিসকে এলবিডব্লিউ করে দেন আদিল রশিদ।

সেখান থেকে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন ফিঞ্চ ও ম্যাথু ওয়েড। তবে বাড়াতে পারেননি তারা রানের গতি। ৩৩ বলে ৩০ রানের জুটি ভাঙে ওয়েডের বিদায়ে (১৮ বলে ১৮)।

এক প্রান্ত আগলে রাখা ফিঞ্চ এরপর দলকে এগিয়ে নেন অ্যাগারকে সঙ্গী করে। ম্যাচের প্রথম ছক্কা আসে মিচেল মার্শের জায়গায় সুযোগ পাওয়া অ্যাগারের ব্যাট থেকেই, ১৭তম ওভারে। পরপর দুই ছক্কা মারেন তিনি ওকসকে।

পরের ওভারে তিনি বিদায় নেন ডিপ মিডউইকেটে লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ দিয়ে (২০ বলে ২০)। উইকেটে এসেই টাইমাল মিলসের পরের দুই বলে দুই ছক্কা মারেন কামিন্স। দলের স্কোর ছাড়ায় একশ।

১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে ফিঞ্চ ও কামিন্সকে ফিরিয়ে দেন জর্ডান। লং অফে ধরা পড়া ফিঞ্চের ৪৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৪টি চারে। হ্যাটট্রিক বল ঠেকিয়ে দেওয়া অ্যাডাম জ্যাম্পা শেষ ওভারে হন রান আউট। মিলসকে ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ বলে আউট স্টার্ক। শেষ ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৬৭ রান।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় জেসন রয় ও বাটলারের ব্যাটে দারুণ সূচনা পায় ইংল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে বেরিয়ে এসে কামিন্সকে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কায় ওড়ান আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঝড়ো ফিফটি করা রয়। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার অ্যাগারকে লং অফ দিয়ে আছড়ে ফেলেন বাটলার। ৪ ওভারে ইংলিশরা তোলে ৩৭।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে স্টার্ককে পরপর দুটি বিশাল ছক্কায় বল গ্যালারিতে পাঠান বাটলার। ৬ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৬৬।

পরের ওভারে আক্রমণে এসে রয়কে (২০ বলে ২২) এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার জ্যাম্পা। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিয়ে পায় উইকেট।

তিনে নেমে টিকতে পারেননি দাভিদ মালান। জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে বাকিটা সারেন বাটলার। এর মাঝে জ্যাম্পাকে ছক্কায় উড়িয়ে বাটলার ফিফটি তুলে নেন মাত্র ২৫ বলে।

জ্যাম্পার পরের ওভারে তিনি ছক্কা মারেন আরেকটি, পরপর দুই বলে দুটি বেয়ারস্টো। প্রথম দুই ম্যাচে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার এবার তিন ওভারেই দেন ৩৭! তিন ওভারে সমান রান দেন স্টার্কও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১২৫ (ওয়ার্নার ১, ফিঞ্চ ৪৪, স্মিথ ১, ম্যাক্সওয়েল ৬, স্টয়নিস ০, ওয়েড ১৮, অ্যাগার ২০, কামিন্স ১২, স্টার্ক ১৩, জ্যাম্পা ১, হেইজেলউড ০*; রশিদ ৪-০-১৯-১, ওকস ৪-০-২৩-২, জর্ডান ৪-০-১৭-৩, লিভিংস্টোন ৪-০-১৫-১, মিলস ৪-০-৪৫-২)

ইংল্যান্ড: ১১.৪ ওভারে ১২৬/২ (রয় ২২, বাটলার ৭১*, মালান ৮, বেয়ারস্টো ১৬*; স্টার্ক ৩-০-৩৭-০, হেইজেলউড ২-০-১৮-০, কামিন্স ১-০-১৪-০, অ্যাগার ২.৪-০-১৫-১, জ্যাম্পা ৩-০-৩৭-১)

ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস জর্ডান