অধিনায়ক শুবমান গিলকে দেখার অপেক্ষায় ‘পুরো ভারত’

তরুণ এই ব্যাটসম্যানের নেতৃত্বের অধ্যায় নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ভারতের সাবেক পেসার ও গুজরাট টাইটান্সের কোচ আশিস নেহরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 06:15 AM
Updated : 17 March 2024, 06:15 AM

ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তো বটেই, বর্তমানও বলা যায় শুবমান গিলকে। বিশ্ব ক্রিকেটেরও সবচেয়ে রোমাঞ্চকর তরুণ প্রতিভাদের একজন তিনি। সামনেই তাকে দেখা যাবে নতুন চ্যালেঞ্জ আলিঙ্গন করতে। এবারের আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। নতুন এই ভূমিকায় গিলকে দেখতে তর সইছে না গুজরাটের কোচ আশিস নেহরার। ভারতের সাবেক পেসারের ধারণা, নতুন ভূমিকায় গিলকে দেখার অপেক্ষায় আছে গোটা দেশই।

বিশেষ পরিস্থিতিতে এবার নেতৃত্ব পেয়েছেন গিল। ২০২২ আসরে আইপিএলে গুজরাটের অভিষেক আসরেই চমকপ্রদ নেতৃত্ব দিয়ে দলকে শিরোপা সাফল্য এনে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। গত আসরে এই অলরাউন্ডারের নেতৃত্বেই আবার ফাইনাল খেলে তারা হেরে যায় শেষ বলে। কিন্তু এবারের আসরের আগে নাটকীয় পালাবদলে পান্ডিয়া পাড়ি জমান তার পুরোনো দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে। সেখানে রোহিত শার্মাকে সরিয়ে অধিনায়কও করা হয় তাকে। গুজরাটের নেতৃত্ব দেওয়া হয় গিলকে।

ব্যাট হাতে এর মধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বে নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন তিনি সব সংস্করণে। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় তিন সংস্করণেই সফল ক্রিকেটারদের তালিকা ছোট হয়ে আসছে ক্রমেই। গিল সেখানে তিন সংস্করণেই নিজের উপযোগীতা প্রমাণ করে চলেছেন।

এবার আইপিএল দিয়ে তার ক্যারিয়ারে যোগ হচ্ছে নতুন অধ্যায়। যার কোচিংয়ে অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন পান্ডিয়া, সেই নেহরার সঙ্গে জুটি গড়েই শুরু করবেন গিল।

গুজরাটের কোচ ও সাবেক এই ভারতীয় পেসার বললেন, ভালো অধিনায়ক হওয়ার জন্য ভালো মানুষ হিসেবে গিলকে গড়ে তুলতে চান তারা।

“খুবই রোমাঞ্চিত এটা দেখতে যে, গিল কীভাবে এগোয় (অধিনায়ক হিসেবে)। পুরো ভারতই অপেক্ষায়, শুধু আমি নই।”

“সে এমন একজন, যে তিন সংস্করণেই খেলতে এবং ভালো করতে খুবই আগ্রহী। অধিনায়কের চেয়েও তাই ভালো একজন মানুষ হিসেবে তাকে গড়ে তুলতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে আমরা সত্যিই রোমাঞ্চিত। মানুষ হিসেবে সে যদি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে, সামনের পথচলায় অধিনায়ক হিসেবেও অবশ্যই আরও ভালো হয়ে উঠবে।”

গিলের সামর্থ্যে দারুণ আস্থা রাখছেন গুজরাটের ব্যাটিং কোচ গ্যারি কার্স্টেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ওপেনার ও ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী কোচ এটিও মনে করিয়ে দিলেন, শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে অপেক্ষায়।

“আমার মনে হয়, নেতৃত্ব তার জন্য হতে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা এবং আমি জানি, সে এই দায়িত্ব নিতে খুবই আগ্রহী। কোচ হিসেবে আমাদের কাজ তাকে সহায়তা করা এবং এটা নিশ্চিত করা যেন সতীর্থদের কাছ থেকে সেরাটা সে আদায় করে নিতে পারে এবং যথাযথভাবে ও যেভাবে আমরা তাকে দেখতে চাই, সেভাবে যেন নেতৃত্ব দিতে পারে।”

 “সে মানসম্পন্ন ক্রিকেটার, খুব ভালো ছেলে। সে ভারতের হয়ে খেলার সময় আমরা দেখেছি, প্রতিজ্ঞা ও প্রেরণা তার ভেতর ব্যাপকভাবে কাজ করে। তবে যে কোনো নতুন নেতার মতোই তাকে একদম শূন্য থেকে শুরু করতে হবে, চলার পথে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং কোচ হিসেবে আমাদের স্রেফ তাকে সহায়তা করতে হবে এই পথচলায়।”

গিলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই অভিজ্ঞতার ঘাটতি। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তার একদমই নেই। তবে সেটিকে বড় কিছু মনে করেন না নেহরা। পান্ডিয়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি, গুজরাটের অধিনায়ক হওয়ার আগে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তেমন একটা ছিল না এই অলরাউন্ডারের। কিন্তু এই ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে তিনি এতটাই দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব করেন যে, পরে জাতীয় দলেও তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়।

গিলও হতে পারেন একই পথের পথিক। নেহরার মতে, এরকম আরও অনেক নতুন অধিনায়ককেই এখন নিয়মিত দেখা যেতে পারে।

“গুজরাট টাইটান্সের আগে হার্দিকও কোথাও নেতৃত্ব দেয়নি। এখন দশ দলের টুর্নামেন্ট এটি। এটিই প্রথম উদাহরণ নয়। এরকম অনেককেই দেখা যাবে নতুন অধিনায়ক হিসেবে… শ্রেয়াস আইয়ারকে যেমন দেখা গেছে, এমনকি গতবার নিতিশ রানা কলকাতাকে নেতৃত্ব দিয়েছে।”

“এই ছেলেদের সবার জন্য এটা দারুণ অভিজ্ঞতার সুযোগ এবং দেখা যাক, সামনে এগিয়ে কে এটা বেশি কাজে লাগাতে পারে। তবে আবারও বলছি, খেলোয়াড়ের আগে মানুষ হিসেবে ভালো হয়ে উঠতে হবে।”

ব্যাটসম্যান হিসেবে গত দুই মৌসুমে গুজরাটের হয়ে অসাধারণ ছিল গিলের পারফরম্যান্স। গত দুই আসর মিলিয়ে প্রায় ১৪৮ স্ট্রাইক রেটে ১ হাজার ৩৭৩ রান করেছেন তিনি। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি রান আর করতে পারেননি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ। নেতৃত্বের পাশাপাশি এই ফর্ম ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও নিতে হবে তাকে এবার।