ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে রংপুর রাইডার্সকে টানা দ্বিতীয় জয় এনে দিলেন নাহিদ রানা।
Published : 31 Dec 2024, 09:47 PM
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগের ছয় ম্যাচে নাহিদ রানার উইকেট ছিল মাত্র ৪টি। কোনো ইনিংসে ছিল না ১টির বেশি উইকেট। সেই রানাই এবার হয়ে উঠলেন বিধ্বংসী এক শিকারি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং লণ্ডভণ্ড করে এক ম্যাচেই নিলেন ৪ উইকেট। ক্যাচ না ছুটলে তো ৫ উইকেট পেতে পারতেন তরুণ গতিতারকা! সেটি না হলেও নাহিদের সৌজন্যে মাঝারি পুঁজি নিয়েও রংপুর রাইডার্স পেল সহজ জয়।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সিলেটের বিপক্ষে রংপুরের জয় ৩৪ রানে।
দুই ম্যাচে রংপুরের এটি দ্বিতীয় জয়। বোলারদের কল্যাণে রংপুরের রান নাগালে রাখলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় পরাজয়ে আসর শুরু করল সিলেট।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রংপুরের ইনিংস থামে ১৫৫ রানে। চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন নুরুল হাসান সোহান। ইফতিখার আহমেদ অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৪৭ রান করে।
সিলেট ইনিংসের পুরোটা জুড়ে নাহিদের গতির প্রদর্শনী। পাওয়ার প্লেতে ২টির পর শেষ দিকে তিনি নেন আরও ২ উইকেট। ৪ ওভারে ২৭ রানে ৪ উইকেট তার ছোট্ট ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। সিলেটের হয়ে ৩৫ বলে ৪১ রান করেন রনি তালুকদার। ২৪ রান করতে ৩৩ বল খেলে ফেলেন জাকের আলি।
ফের ব্যর্থ হেলস, রংপুরের বিপর্যয়
প্রথম দুই ওভারে চারটি বাউন্ডারিতে দারুণ শুরুর আভাস দেন অ্যালেক্স হেলস ও স্টিভেন টেইলর। কিন্তু দুজনের কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসানের বলে আলতো ড্রাইভে মিড অফে ক্যাচ দেন হেলস। আগের ম্যাচে ৬ বলে ৫ রান করা ইংলিশ ওপেনার এবার থামেন ৭ বলে ৬ রানে।
ইনিংসের প্রথম বলে চার মেরে শুরু করা টেইলরকে থামান আল আমিন হোসেন। ৩ চারে ১২ রান করতে ১৫ বল খেলেন তিনি।
একই ওভারে এর আগে সাইফ হাসানকেও আউট করেন আল আমিন। প্রথম দুই ওভারে ২১ রান করা রংপুরের পাওয়ার প্লেতে স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩১ রান।
ইফতিখার-খুশদিলের প্রতিরোধ
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর খুশদিল শাহকে নিয়ে চাপ সামাল দেন ইফতিখার আহমেদ। চতুর্থ উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ৩৮ বলে ৪১ রান।
দশম ওভারে সামিউল্লাহ শিনওয়ারির বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন খুশদিল। শিনওয়ারির পরের ওভারে চার মেরে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি।
১১.২ ওভারে রংপুরের সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ৬৮ রান। ২৩ বলে তখন ২১ রান ইফতিখারের।
সোহানের পাল্টা আক্রমণ
খুশদিলের বিদায়ের পর ক্রিজে গিয়ে কিছুটা সময় নেন সোহান। ইফতিখার তখনও পর্যন্ত খোলস থেকে বের হতে পারেননি। ১৫ ওভারে তাদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৯১ রান।
শেষ ৫ ওভারে ইনিংসের চিত্র বদলে দেন নুরুল হাসান সোহান। ইফতিখারও পরিস্থিতির দাবি মেটান। পঞ্চম উইকেটে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৪১ বলে ৬৫ রানের জুটি।
১৬তম ওভারে নিহাদউজ্জামানের বল ছক্কায় ওড়ান ইফতিখার। পরের ওভারে রিস টপলির ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন সোহান। দুইটি চারের মাঝে ছক্কা মারেন রংপুর অধিনায়ক।
পরের ওভারে তানজিমের অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল টস বল ওয়াইড লং দিয়ে ছক্কায় ওড়ান সোহান। তবে ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি তিনি। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৪১ রান করে ফেরেন রংপুর অধিনায়ক। টপলির বলে লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে ডাইভিং ক্যাচ নেন আরিফুল হক।
শেষ দিকে ৮ বলে ১৬ রানের ক্যামিও খেলেন শেখ মেহেদি হাসান। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন ইফতিখার।
তানজিম-আল আমিনের দারুণ বোলিং
নতুন বলে দারুণ শুরু করা তানজিম ও আল আমিন নেন ২টি করে উইকেট। শেষ দিকে অবশ্য খরুচে ছিলেন তানজিম। প্রথম দুই ওভারে এক মেডেনসহ ৪ রান দেওয়া তরুণ পেসার বাকি দুই ওভারে দেন ২৩ রান। বাঁহাতি পেসার টপলি প্রথম দুই ওভারে খরচ করেছিলেন তিন রান। তার শেষ দুই ওভার থেকে ৩০ রান নেয় রংপুর।
কামরুলের শুরুর ধাক্কার পর নাহিদের তোপ
দ্বিতীয় ওভারে জর্জ মানজিকে ফিরিয়ে রংপুরকে দারুণ শুরু এনে দেন কামরুল ইসলাম। তবু দমে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রনি তালুকদার ও জাকির হাসান।
ওই ওভারেই কামরুলের বলে দুটি চার মারেন রনি। শেখ মেহেদি হাসানের বলে জাকির মারেন দুটি বাউন্ডারি।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই জাকিরের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেন নাহিদ। ১২ বলে ১৮ রান করতে পারেন জাকির।
দুই বল পর ফুল টস পেয়ে ছক্কায় ওড়ান পল স্টারলিং। পরের বলেই তাকে আউট করে গর্জে ওঠেন নাহিদ।
রনি-জাকেরের মন্থর প্রতিরোধ
শুরুর ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়েন রনি তালুকদার ও জাকের আলি। কিন্তু রানের গতিতে দম দিতে পারেননি তারা। ৪৮ রানের জুটি গড়তে তাদের লাগে ৫৬ বল। দশম ওভারে মেহেদির বলে চার মারেন জাকের। এরপর ৩৪ বলে আর বাউন্ডারি হয়নি।
হয়েও হলো না খুশদিলের হ্যাটট্রিক
১৫তম ওভারে রনিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন খুশদিল। পরের বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন আরিফুল হক। খুশদিলের হ্যাটট্রিক বলে টার্নে পরাস্ত হন শিনওয়ারি। বল প্যাডে লাগতেই জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতে রংপুর।
তবে রিভিউ নেন শিনওয়ারি। রিপ্লেতে দেখা যায় স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেত বল। তাই বদলে যায় সিদ্ধান্ত। থেমে যায় রংপুরের উচ্ছ্বাস।
৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ২ উইকেট নিয়ে নিজের স্পেল শেষ করেন খুশদিল।
আবার নাহিদের তোপ
১৬তম ওভারে আক্রমণে ফেরা নাহিদের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন জাকের। জবাব দিতে সময় নেননি নাহিদ। পরের বলেই জাকেরকে ফিরিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন তরুণ পেসার।
এক বল পর তানজিমের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন রকিবুল হাসান।
পরের ওভারে সাইফ উদ্দিন নেন ২ উইকেট। ম্যাচ ততক্ষণে রংপুরের হাতের মুঠোয়। নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে শিনওয়ারিকে ক্যাচ আউট করেন নাহিদ।
নাহিদের ৪ উইকেট, খুশদিল-সাইফের ২
সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে নেওয়া ৪ উইকেটে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন নাহিদ। এছাড়া খুশদিল ও সাইফ উদ্দিন নেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৫৫/৬ (টেলর ১২, হেলস ৬, সাইফ ৪, ইফতিখার ৪৭*, খুশদিল ২১, সোহান ৪১, মেহেদি ১৬, সাইফ ২*; তানজিম ৪-১-২৭-২, আলআমিন ৪-০-৩১-২, টপলি ৪-০-৩৩-১, নিহাদউজ্জামান ৪-০-২৬-০, শিনওয়ারি ২-০-১৬-১, আরিফুল ২-০-১৬-০)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১২১/৯ (রনি ৪১, মানজি ২, জাকির ১৮, স্টারলিং ৬, জাকের ২৪, আরিফুল ০, শিনওয়ারি ৮, তানজিম ৩, নিহাদউজ্জামান ১, টপলি ৫*, আলআমিন ৩*; সাইফউদ্দিন ৪-০-১৮-২, কামরুল ২-০-২১-১, মেহেদি ২-০-১৭-০, রকিবুল ৪-০-২৭-০, নাহিদ ৪-০-২৭-৪, খুশদিল ৪-০-১০-২)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৩৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদ রানা