শেষের বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ

নিজেদের ৪০০তম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১০৫ রানে হারাল জিম্বাবুয়েকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 11:30 AM
Updated : 10 August 2022, 11:30 AM

হোয়াইটওয়াশের চোখরাঙানিতে শুরু হয়েছিল ম্যাচ। প্রথম ইনিংস শেষে সেই শঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত। স্কোরবোর্ডে যে পুঁজি আগের দুই ম্যাচের চেয়েও কম! তবে এবার বোলিং হলো ক্ষুরধার ও গোছানো। ভেঙে পড়ল জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং। শঙ্কার মেঘ সরিয়ে শতরানের জয়ে খানিকটা স্বস্তিতে সিরিজ শেষ করতে পারল বাংলাদেশ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ৪০০তম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ এড়াল হোয়াইটওয়াশ। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে হারল ১০৫ রানে।

আগের দুই ম্যাচে ৩০৩ ও ২৯০ রান করেও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেখানে ৫০ ওভারে দল তুলতে পারে কেবল ২৫৬।

তবে এবার মুখ থুবড়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং। এক পর্যায়ে একশ রানের নীচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল তারা। তবে শেষ জুটির রেকর্ডে শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারে ১৫১ রান।

চোটের কারণে রেজিস চাকাভা ছিটকে পড়ায় এই ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দেন আগের দুই ম্যাচের নায়ক সিকান্দার রাজা। তবে টানা দুই ম্যাচে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত সেঞ্চুরির পর নেতৃত্বের অভিষেকে তিনি আউট হয়ে যান প্রথম বলেই।

আগের ম্যাচগুলির মতো আবারও টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। টসের সময় ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বলেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দুর্দান্ত। কিন্তু সেই ২২ গজে ভালো কিছু করতে পারেননি তামিম-মুশফিকরা। বাংলাদেশ আড়াইশ পার করে মূলত এনামুল হক ও আফিফ হোসেনের দারুণ ব্যাটিংয়ে।

ইনিংসের প্রথম ২৫ ওভারে দলকে টেনে নেন এনামুল। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭১ বলে তিনি করেন ৭৬ রান। তিন বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরার সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস।

ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগে দলকে বয়ে নেন আফিফ। আরেকপাশ থেকে সহায়তা খুব একটা না পেলেও পরিণত ব্যাটিংয়ে ৮১ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৬ চার ও ২ ছক্কার এই ইনিংসই দলকে লড়ার মতো রান এনে দেয়।

তামিমের ব্যাটে শুরুটা ছিল আগ্রাসনের ইঙ্গিত দিয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন তিনি কাট শটে। চতুর্থ ওভারে বাউন্ডারি আদায় করেন ভিক্টর নিয়াউচির টানা দুই বলে।

কিন্তু এরপর একটু খোলসে ঢুকে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। সেখান থেকে বের হওয়ার আগেই তাকে ফিরতে হয় ড্রেসিং রুমে (৩০ বলে ১৯)। রান আউট হয়ে যান তিনি এনামুল হকের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে। সঙ্গীর দিকে না তাকিয়ে এনামুল তাকিয়ে ছিলেন ফিল্ডারের দিকে!

এক বল পরই দুর্দান্ত এক ছক্কায় পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন এনামুল। তবে আরেকপ্রান্তে জোড়া ধাক্কায় চুপসে যায় দল। ব্র্যান্ড ইভান্সের চার বলের মধ্যে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম।

দুজনই আউট শূন্য রানে এবং দুজনেই উইকেট ছুঁড়ে আসেন বাজে বলে। স্টাম্পের বেশ বাইরে বাউন্ডারির মারার মতো বলটি পয়েন্টে তুলে দেন শান্ত। প্রায় একই ধরনের বলে আপার কাট করেন মুশফিক, থার্ডম্যান সীমানা থেকে ছুটে দারুণ ক্যাচ নেন এনগারাভা।

পরের ওভারে এনগারাভাকেই আবার ছক্কায় উড়িয়ে চাপ সরানোর চেষ্টা করেন এনামুল। ব্র্যাড ইভান্সের লেগ স্টাম্পে থাকা বল তিনি আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে।

তবে চার-ছক্কাগুলোর মাঝে বরাবরের মতোই সিঙ্গেলস-ডাবলস খুব একটা বের করতে পারেননি এনামুল। আরেকপাশে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন যেন ঘুমিয়ে।

এনামুল যখন ছুটছেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে, মাহমুদউল্লাহর রান তখন ৩৯ বলে ১৪!

লুক জঙ্গুয়ের স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে এনামুল থামেন একটু পরই। আফিফ উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই বরাবরের মতো ছিলেন ব্যস্ত। তবে মাহমুদউল্লাহর ঝিমুনি আর কাটেনি। তার যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষ হয় এনগারাভার বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে। দৃষ্টিকটূ ব্যাটিংয়ে ৬৯ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন তিনি।

এরপর এক পাশে উইকেট পড়েছে নিয়মিত। আরেকপাশে রান বাড়িয়েছেন আফিফ। স্রেফ ২ রানেই অবশ্য তিনি বেঁচে পান অনিয়মিত স্পিনার ইনোসেন্ট কাইয়াকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। সেই জীবন কাজে লাগান দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দারুণ সব শটের পসরা মেলে ধরে।

শেষ ১০ ওভারে ৬৭ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আফিফই করেন ৩১ বলে ৪৬। তাতে আড়াইশ ছাড়াতে পারে দল।

এই পুঁজি নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। নতুন বলের দুই বোলার হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম দুই ওভারেই দলকে এনে দেন উইকেট।

জিম্বাবুয়ে বড় ধাক্কা খায় আরেকটু পর। ওয়ানডে অভিষেকে ইবাদত হোসেন দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে টানা দুই বলে ফেরান ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজাকে।

সিমে পিচ করা বাড়তি লাফানো বলে ক্যাচ দেন মাধেভেরে। অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা রাজাকে ফেরাতে প্রয়োজন ছিল বুঝি বিশেষ কিছু। তেমন একটি ডেলিভারিই করেন ইবাদত। তার গতিময় ইয়র্কার চমকে দেয় রাজাকে। আগের দুই ম্যাচের অপরাজিত সেঞ্চুরিয়ান এবার বোল্ড প্রথম বলেই।

ম্যাচের ভাগ্যও অনেকটা গড়া হয়ে যায় তখনই। বাধা বলতে তখন কেবল ইনোসেন্ট কাইয়া। তিনিও করতে পারেননি ভালো কিছু। তাইজুল ইসলাম আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই ফেরান প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানকে।

৩১ রানে ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পরেও। খানিকটা লড়াই করেন কেবল ক্লাইভ মাডান্ডে। অভিষিক্ত কিপার-ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।

পঞ্চশ বোলার হিসেবে আক্রমণে আসা মুস্তাফিজ এক পর্যায়ে ২ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট নিলে জিম্বাবুয়ের রান হয়ে যায় ৯ উইকেটে ৮৯। বাংলাদেশ তখন রেকর্ড ব্যবধানে জয়ের আশায়। কিন্তু রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিয়াউচি অপেক্ষায় রাখেন তামিমদের।

মাঠে আসা দর্শকদের দারুণ বিনোদন জুগিয়ে জিম্বাবুয়ের ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান খেলতে থাকেন একের পর এক চোখধাঁধানো শট। বাংলাদেশের বোলাররাও অধৈর্য হয়ে লাইন-লেংথ হারান। তাতে বাড়তে থাকে রান।

বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ উইকেট জুটির রেকর্ড রান এসে যায়। জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট জুটির রেকর্ডও গড়া হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজ চতুর্থ উইকেট নিয়ে থামান ৬৮ রানের জুটি।

শেষটা বড় জয় দিলে হলেও গত কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে হতাশার সফর হয়ে রইবে এটি। খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের কাছে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ হেরে ফিরছে দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৯ (তামিম ১৯, এনামুল ৭৬, শান্ত ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, আফিফ ৮৫*, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, হাসান ০, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ০*, এনগারাভা ১০-১-৫১-১, নিয়াউচি ৬-০-২৪-০, ইভান্স ৮-১-৫৩-২, রাজা ১০-০-৪২-১, জঙ্গুয়ে ৬-০-৩৮-২, কাইয়া ৪-০-১৬-০, মাধেভেরে ৬-০-২৭-০))।

জিম্বাবুয়ে: ৩২.২ ওভারে ১৫১ (কাইটানো ০, মারুমানি ১, কাইয়া ১০, মাধেভেরে ১, রাজা ০, মাডান্ডে ২৪, মুনিয়োঙ্গা ১৩, জঙ্গুয়ে ১৫, ইভান্স ২, এনগারাভা ৩৪*, নিয়াউচি ২৬; হাসান ৮-০-৩৮-১, মিরাজ ২-০-১৬-১, ইবাদত ৮-১-৩৮-২, তাইজুল ৯-০-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৫.২-০-১৭-৪)।

ফল: বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়ে ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: আফিফ হোসেন।

ম্যান অব দা সিরিজ: সিকান্দার রাজা।