প্রতিবছর বিপিএলের আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের সঙ্গে 'এনসিএল টি-টোয়েন্টি' টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী বিসিবি।
Published : 23 Nov 2024, 08:52 PM
‘বিসিবি আয়োজিত টি-টোয়েন্টির বোনাস উত্তেজনা’- অডিও ভিজুয়ালের শুরুতে ভেসে উঠল বড় পর্দায়। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি মানে শুধুই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। তবে এবার আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চলেছে বিসিবি। জমকালো আয়োজনে সেটিরই জানান দিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের পাশাপাশি ২০ ওভারের এই টুর্নামেন্টের কথা আগেই জানিয়েছিল বিসিবি। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে শনিবার জমকালো আয়োজনে ‘এনসিএল টি-টোয়েন্টি’ নামের এই টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো, সেই সঙ্গে মঞ্চে ব্যাট-বলের প্রতীকী লড়াই দেখিয়ে উন্মোচন করা হয় লোগো।
আগামী ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ২৪ ডিসেম্বর। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে লিগ পর্বের ২৮ ম্যাচ। পরে প্লে-অফ পর্বের চার ম্যাচ হবে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও পরিচালক ফাহিম সিনহার সঙ্গে টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাইটেল স্পন্সর আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরমান আর চৌধুরি। এছাড়া পাওয়ার্ড বাই স্পন্সর ওয়ালটনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক ও চিত্রনায়ক আমিনুল ইসলাম খান (আমিন খান নামে পরিচিত), সিলভার পার্টনার রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের শুভেচ্ছাদূত ও চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের উপস্থিতিতে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা।
সাধারণত বিপিএল জমজমাট করতে নানান আয়োজন রাখে বিসিবি। এবার শুধুই স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে হতে যাওয়া এনসিএল টি-টোয়েন্টির আগেও বর্ণিল উদ্যোগে একরকম চমকই দেখাল তারা। টুর্নামেন্ট শুরুর অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটাররা ভিডিওবার্তায় শুভকামনা জানান। আয়োজনের শেষ অংশে ভিন্ন সাতটি গান ও চমৎকার নৃত্য প্রদর্শনীতে সাতটি বিভাগীয় দল এবং ঢাকাইয়া গান ও নাচের সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয় ঢাকা মেট্রোকে।
স্বাগত বক্তব্যে এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে প্রতি বছর এই টুর্নামেন্ট করার ব্যাপারে আশাবাদী মন্তব্য করেন বিসিবি প্রধান।
“বিসিবির তত্ত্বাবধানে এবারই প্রথম সম্ভবত এমনভাবে টিভি সম্প্রচারসহ প্রথমবার বিপিএলের বাইরে কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হতে চলেছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে হয়তো দুই-একবার হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তাই এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
“প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জাতীয় লিগ আমাদের ক্রিকেটের মেরুদণ্ডও বটে। এর সঙ্গে আমরা এই বছর থেকে নিয়মিত জাতীয় ক্রিকেট লিগের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগী হয়েছি।”
২০১৯ ও ২০২১ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হয়েছে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। এর বাইরেও ২০১০ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগেই চার দিনের সংস্করণের সঙ্গে হয় ছয় দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সেবার অবশ্য প্রতি দলে দুজন করে বিদেশি ক্রিকেটারও খেলেছিলেন। ওই বছরের পর আর দেখা যায়নি জাতীয় লিগের টি-টোয়েন্টি সংস্করণের খেলা।
এছাড়া বিপিএলের বাইরেও ২০১৩ সালে বিজয় দিবস কাপ টি-টোয়েন্টি, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করে বিসিবি। ২০০৯ ও ২০১০ সালে পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগ নামেও একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়। তবে কোনোটিই ধারাবাহিক হয়নি। এক-দুই আসরে থেমে গেছে সব উদ্যোগ।
ফারুকের আশা, এখন থেকে নিয়মিত এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে বিপিএলে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভালো করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
“বিপিএল ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের আর টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তাই এই সংস্করণে এখনও আশানুরূপ ফল পাইনি। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। তবে এটা অন্যতম কারণ। তাই আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিপিএলের বাইরে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করব।”
“এখন থেকে প্রতি বছর বিপিএলের আগে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। যেখানে শুধু স্থানীয় ক্রিকেটাররা অংশ নেবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই ড্রেসিং রুমে খেলার আগে তৈরি হওয়ার যে ব্যাপারটা, সেটি এই টুর্নামেন্ট থেকে ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। আমাদের ক্রিকেটাররাও টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবে।”
জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নেওয়া সাত বিভাগীয় দল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ঢাকা মেট্রো খেলবে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আট দলের ৩২ ম্যাচের টুর্নামেন্টে প্রথম পর্বে প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে একটি করে খেলবে মোট ৭ ম্যাচ।
পরে পয়েন্ট টেবিলের সেরা চার দলকে নিয়ে হবে প্লে-অফ পর্ব। সেরা দুই দল পাবে ফাইনালে ওঠার জন্য দুটি সুযোগ। আর তৃতীয় ও চতুর্থ দলকে নিয়ে হবে এলিমিনেটর ম্যাচ। ওই ম্যাচের জয়ী দলকে ফাইনালে উঠতে লড়তে হবে কোয়ালিফায়ার-১ ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের সঙ্গে।
টুর্নামেন্টের অন্তত ১৮টি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের একমাত্র খেলাধুলার চ্যানেল টি স্পোর্টস। তবে সবগুলো ম্যাচই সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টস অ্যাপে। ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্যানকোড’ ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।
এরই মধ্যে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে টুর্নামেন্টের জন্য ঠিক করা হয়েছে আট দলের ২০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড। জাতীয় দলের নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে ১৫ জনের দল।
বিপিএলের আগে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে আলোচনা করে আকর্ষণীয় প্রাইজমানির ব্যবস্থা করছে বিসিবি। এছাড়া আরও কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টাও করছে তারা। লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানের শেষে টুর্নামেন্ট আয়োজন সংশ্লিষ্ট একজন যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘অপেক্ষা করুন, চমক আরও আসছে।’