বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
স্যাম কন্সটাসকে ভালো লাগলেও অনেক দিক বিবেচনা করে ন্যাথান ম্যাকসুয়েনিকে ওপেনিংয়ের লড়াইয়ে এগিয়ে রাখছেন অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
Published : 02 Nov 2024, 05:28 PM
টেস্টে নতুন ওপেনার খুঁজছে অস্ট্রেলিয়া। উসমান খাওয়াজার সঙ্গী হিসেবে আলোচনায় আসছে অনেকের নাম। তাদের মধ্যে ন্যাথান ম্যাকসুয়েনিকে ভালো লেগেছে রিকি পন্টিংয়ের। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন এই ক্রিকেটারকে ভারত সিরিজে ইনিংসের শুরুতে দেখতে চান অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
গত অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মে ডেভিড ওয়ার্নার টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর ওপেনার হিসেবে নিজের নাম তুলে ধরেন স্টিভেন স্মিথ। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় চার নম্বরে খেলা তারকা এই ব্যাটসম্যানকে সুযোগও দেয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু নতুন ভূমিকায় নিজেকে একদমই মেলে ধরতে পারেননি স্মিথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ৯১ রান ছাড়া ওপেনিংয়ে ৮ ইনিংসে ফিফটি ছুঁতে পারেননি আর একবারও।
আলোচনা-সমালোচনা মধ্যে সামনের সিরিজ থেকে স্মিথের মিডল অর্ডারে ফেরার কথা নিশ্চিত করেন অস্ট্রেলিয়া প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি। তাতে ফের শূন্য হয়ে পড়ে সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং পজিশন।
নতুন ওপেনার হিসেবে কদিন আগে স্যাম কন্সটাসের কথা বলেন পন্টিং। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত মাসের শুরুতে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে জোড়া সেঞ্চুরি করে নজর কাড়েন ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। এখন পর্যন্ত স্রেফ ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা এই তরুণকে ভারতের বিপক্ষে খেলানোর পরামর্শও দেন অস্ট্রেলিয়া সাবেক অধিনায়ক।
যদিও নিজের ভাবনায় দ্রুতই বদল আনেন পন্টিং। আইসিসি রিভিউয়ে কন্সটাসের ওপর আস্থা হারানোর কারণও তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে ওপেনিংয়ে তার নতুন পছন্দ ম্যাকসুয়েনির কথাও বলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং গ্রেট।
“সপ্তাহখানেক আগে ওপেনিংয়ের জায়গাটির জন্য আমাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল এবং আমি তাৎক্ষণিকভাবে তরুণ স্যাম কন্সটাসের নাম বলেছিলেম। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিল।”
“এরপর আমি এটা নিয়ে আরেকটু চিন্তা করি। সে (কন্সটাস) খুবই তরুণ এবং সম্ভবত সে অপটাস (পার্থ) স্টেডিয়াম বা গ্যাবার মতো মাঠেও খেলেনি। অ্যাডিলেইড ওভালে গোলাপি বলে ম্যাচ খেলতে সে পারবে না। সুতরাং এই তরুণের বিপক্ষে অনেক কিছুই আছে, যদিও তার প্রতিভা আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।”
ওপেনার হিসেবে আলোচনায় থাকা ক্যামেরন ব্যানক্রফট ও মার্কাস হ্যারিসের অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনা দেখেন না পন্টিং।
“আরেকটি ব্যাপার যেটা তখন বলেছিলাম, আমার মনে হয় না, তারা (নির্বাচকরা) ক্যামেরন ব্যানক্রফট কিংবা মার্কাস হ্যারিসকে ফেরাবে। কারণ, যদি এমন করার ইচ্ছা থাকত তাহলে গত বছরই এটা করত।”
সব মিলিয়ে ২৫ বছর বয়সী ম্যাকসুয়েনিকেই সেরা পছন্দ মনে হচ্ছে পন্টিংয়ের কাছে। ব্যাট হাতেও দারুণ ছন্দে আছেন এই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এই ক্রিকেটার। শেফিল্ড শিল্ডের গত মৌসুমে ১০ ম্যাচে তিনটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৭৬২ রান করেন তিনি। ব্যাটিং গড় ছিল ৪০.১। এবার এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলে তার রান ৯৭ গড়ে ২৯১, সেঞ্চুরি করেছেন একটি।
ঘরের মাঠে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক টেস্টেও ওপেনিংয়ের লড়াইয়ে থাকা বাকিদের চেয়ে ভালো করছেন ম্যাকসুয়েনি। অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের অধিনায়ক চার নম্বরে নেমে প্রথম ইনিংসে করেছেন সর্বোচ্চ ৩৯ রান। যেখানে কন্সটাস (০), হ্যারিস (১৭) ও ব্যানক্রফট (০) পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রান করে ফিরেছেন কন্সটাস, হ্যারিসের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ রান আর ব্যানক্রফট বিদায় নিয়েছেন ১৬ রান করে। তবে ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ২১১ রান করা ম্যাকসুয়েনি সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। তৃতীয় দিন শেষে ৪৭ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন তিনি। জয়ের জন্য আর ৮৬ রান চাই অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের, হাতে আছে ৭ উইকেট।
এখন পর্যন্ত ৩২ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা ম্যাকসুয়েনির রান ৩৭.২৫ গড়ে ২ হাজার ৮৬। সেঞ্চুরি করেছেন ৬টি, ফিফটি ১১টি। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ শিল্ড ম্যাচেও ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
পন্টিংয়ের চোখে, ভারতের বিপক্ষে আসছে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির জন্য ওপেনিং পজিশনে ম্যাকসুয়েনিই সবার চেয়ে এগিয়ে।
“তাই আমার কাছে একটি নামই বাকি আছে, ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি। যে কুইন্সল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করে এখন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছে। এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় ‘এ’ দলের খেলায় (ওপেনিংয়ের লড়াইয়ে থাকা) বাকিদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে সে।”
“আর সে অভিজ্ঞও। অতীতে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের অধিনায়কত্ব করেছে এবং এখনও তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মের শুরুতে ওপেনিংয়ের ভূমিকার জন্য আমি এখন ম্যাকসুয়েনির দিকে ঝুঁকছি।”
পার্থে আগামী ২২ নভেম্বর শুরু পাঁচ টেস্টের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির লড়াই।