টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে।
Published : 23 Jun 2024, 08:23 PM
বিশ্বকাপ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পায় না আফগানিস্তান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার যেসব সম্ভাবনা জেগেছিল, সেগুলোও ভেস্তে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যা নিয়ে কম চর্চা হয়নি। বিশ্ব মঞ্চে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সেসব নিয়ে কথা বললেন রাশিদ খান। অতীতে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, তাদের বিপক্ষে খেলতে না পারার আক্ষেপও ঝরল আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোববার অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করে আফগানিস্তান। ১৪৮ রানের পুঁজি গড়ে ২০২১ আসরের চ্যাম্পিয়নদের তারা গুটিয়ে দেয় ১২৭ রানে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাসমান সাগর পাড়ের দলটির বিপক্ষে ছয় ম্যাচে এটি তাদের প্রথম জয়।
বৈশ্বিক আসর ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেবল একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছে আফগানিস্তান। ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে গিয়ে শারজাহতে আফগানদের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া।
এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একটি টেস্ট খেলার সুযোগ আসে আফগানিস্তানের সামনে। কিন্তু দেশটিতে ‘নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলে সেটা স্থগিত করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। পরে গত বছরের মার্চে আফগানদের সঙ্গে প্রস্তাবিত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও তারা স্থগিত করে দেয় একই কারণে।
আগামী অগাস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। যা আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর সূচির অংশ। সেটাও স্থগিত করে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর বন্ধ করে দেয় মেয়েদের ক্রিকেট। তখন থেকেই দেশটিতে মেয়েদের অধিকার প্রসঙ্গে সরব অস্ট্রেলিয়া। এর জেরে আফগান পুরুষ দলের বিপক্ষে একের পর এক সিরিজ স্থগিত করে দেয় তারা।
অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তগুলো ভালোভাবে নেয়নি আফগানিস্তান বোর্ড। সিএ-কে ‘বাইরের চাপে নতি স্বীকার’ না করার পরামর্শও দেয় তারা। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখনও আলোর মুখ দেখেনি দুই দলের কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয়ের পর এসব নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। ম্যাচ শেষে রাশিদের সংবাদ সম্মেলনেও উঠল প্রশ্ন। পেশাদার জায়গা থেকে নিজের ভাবনা জানানোর চেষ্টা করেন আফগান তারকা লেগ স্পিনার।
“আমরা খেলোয়াড় এবং খেলাধুলা ভালোবাসি। দেশের মানুষ খেলাধুলা ভালোবাসে। আগেও বলেছি, আমার দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেটই একমাত্র আনন্দের উৎস। আফগানিস্তানে এটাই একমাত্র উপলক্ষ, যেটা নিয়ে মানুষ উদযাপন করতে পারে। আর আমরা যদি সেটাকেই আমাদের থেকে দূরে রাখি, তাহলে আফগানিস্তানীদের আর কী থাকবে আমি জানি না।”
“আমরা খেলোয়াড়রা শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবি। সবাই বলে, খেলাধুলা একটা জাতিকে একত্রিত করে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। তাই আমার কাছে যেকোনো দলের বিপক্ষে খেলতে পারা সবসময়ই আনন্দের। আর এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দিন দিন উন্নতি করতে পারে। ক্রিকেটে কিছু জিনিস কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যা নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারি না। যদি কিছু করতে পারতাম, যদি কোনো সমাধান থাকত, আমরা খুশি হতাম, তবে আমি জানি না এর সমাধান কী।”
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ স্থগিত করায় বিগ ব্যাশ না খেলার হুমকিও দিয়েছিলেন রাশিদ। যদিও পরে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। তবে আগের মতোই জাতীয় দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে না পারার আক্ষেপ আছে তার। বিশ্বকাপে খেলতে পারলে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কেন নয়, প্রশ্ন তুলেছেন আফগান অধিনায়ক।
“আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় খেলতে ভালোবাসি। যেসব বিষয় (আমাদের) নিয়ন্ত্রণে নেই, ক্রিকেটও সেগুলোর সমাধান করতে পারবে না, সেইসব বিষয়ে খেলাধুলাকে আনা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। যদি অন্য কোনো সমাধান থাকে, সেটা প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এমনটা ভাববেন না যে, রাজনীতি ও এই ধরনের সমস্যার সমাধান ক্রিকেট।”
“তাই আমরা যদি বিশ্বকাপে খেলি, তাহলে কেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে খেলব না? আমি মনে করি, সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে পেরে আমরা খুশি। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখি। আমরা দিন দিন আরও ভালো হচ্ছি। কিন্তু আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি।”