সেই ১৯৯৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাঠে প্রথমবার টেস্ট জয়ের আশা জাগিয়েছে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 10 Mar 2024, 12:07 PM
মুখোমুখি লড়াইয়ে সবশেষ ৩২ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের জয় স্রেফ একটি। ২০১১ সালে সেই জয়টি ধরা দিয়েছিল ব্রিজবেনে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাঠে কিউইদের সবশেষ জয়টি এসেছিল ১৯৯৩ সালের মার্চে। দীর্ঘ সেই খরা এবার কাটানোর আশা জাগিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ের পর ম্যাট হেনরির দারুণ বোলিংয়ে স্মরণীয় এক জয়ের হাতছানি তাদের সামনে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ৬ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার জিততে লাগে ২০২ রান।
সিরিজের আগের তিন ইনিংসে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়া নিউ জিল্যান্ড শেষ ইনিংসটিতে তোলে ৩৭২ রান। ওপেনিংয়ে টম ল্যাথামের দারুণ ইনিংস উপহার দেন রাচিন রাভিন্দ্রা। ফিফটি আসে ড্যারিল মিচেলের ব্যাট থেকেও।
প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৯ রান। রোববার তৃতীয় দিন শেষ করে তারা ৪ উইকেটে ৭৭ রান নিয়ে।
প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট শিকারি ম্যাট হেনরি দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরান অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারকে। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এক ম্যাচে ১০ উইকেট ছুঁতে তার লাগে আর একটি মোটে উইকেট।
হেনরির বোলিং ও ল্যাথাম-উইলিয়ামসনের ফিফটিতে আগের দিনই দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরেছিল নিউ জিল্যান্ড। তৃতীয় দিনে সেই ধারাই ধরে রাখে তারা।
২ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে শুরু করা দল অবশ্য দিনের শুরুর দিকে একটি ধাক্কা খায়। ৬৫ রানে অপরাজিত থাকা টম ল্যাথাম বিদায় নেন আর ৮ রান যোগ করে।
এরপর এখনও পর্যন্ত ম্যাচের সেরা জুটি গড়েন রাভিন্দ্রা ও মিচেল। ব্যাটিংয়ের জন্য এ দিন উইকেট সহজ হয়ে আসে অনেকটাই। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতাশ করে রান বাড়াতে থাকেন দুজন। জুটি পেরিয়ে যায় শতরান। ৯৪ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন রাভিন্দ্রা, ৯৬ বলে মিচেল।
১২৩ রানের এই জুটি শেষ পর্যন্ত থামে দ্বিতীয় নতুন বলে। মিচেল ফেরেন ৫৮ রানে। একটু পর নতুন স্পেলের প্রথম বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রাভিন্দ্রাকে ৮২ রানে থামান প্যাট কামিন্স।
ক্যামেরন গ্রিন আক্রমণে এসে আলগা এক বলে উপহার পান টম ব্লান্ডেলের উইকেট। কাভারে ঝাঁপিয়ে ভালো ক্যাচ নেন মার্নাস লাবুশেন। তবে একটু পর গ্রিনের বলেই স্লিপে স্কট কুগেলাইনের ক্যাচ ছাড়েন লাবুশেন। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ বলে ৪৪ করে খেসারত বুঝিয়ে দেন কুগেলাইন।
শেষ দিকে তিনটি উইকেট নেন ল্যাথান নায়ন। নিউ জিল্যান্ড শেষ তিন উইকেট হারায় এক রানের মধ্যে।
সিরিজে আগের তিন ইনিংস মিলিয়ে দুটি উইকেট পাওয়া কামিন্স এবার শিকার করেন চার উইকেট।
উইকেটের পেছনে ম্যাচে ১০টি ক্যাচ নিয়ে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অস্ট্রেলিয়ান রেকর্ড স্পর্শ করেন অ্যালেক্স কেয়ারি। ১১ ক্যাচের বিশ্বকরেকর্ড যৌথভাবে জ্যাক রাসেল, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রিশাভ পান্তের।
২৭৯ রানের লক্ষ্যে নেমে প্রথম সাত ওভার নিরাপদে কাটাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এরপরই স্টিভেন স্মিথকে ফেরান ম্যাট হেনরি।
বেশ কিছুদিন ধরেই নিজেকে হারিয়ে খোঁজা স্মিথ কাটালেন ভুলে যাওয়ার মতো একটি সিরিজ। চার ইনিংসে তার রান মোট ৫১। ওপেনিংয়ে উঠে আসার পর দুই সিরিজের আট ইনিংসে তার ফিফটি মোটে একটি। সবশেষ শতরানের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি ২১ ইনিংস আগে।
হেনরি পরে ফিরিয়ে দেন উসমান খাওয়াজাকেও। স্লিপে অসাধারণ ক্যাচ নেন অধিনায়ক টিম সাউদি।
আরেক প্রান্তে জ্বলে ওঠেন অভিষিক্ত বেন সিয়ার্স। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার এক বল পরই লাবুশেন ফিরতি ক্যাচ দেন এই পেসারকে। একটু পরই তার শিকার ক্যামেরন গ্রিন। খেলবেন নাকি ছাড়বেন, এই দোনাটায় পড়েই বোল্ড হয়ে যান তিনি।
অস্ট্রেলিয়া তখন ধুঁকছে ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে।
এরপর মিচেল মার্শ নেমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। আগের দুই ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা ব্যাটসম্যান এবার শুরু করেন প্রথম বলেই চার মেরে। ট্রাভিস হেডের সঙ্গে মিলে শেষ সময়টাও কাটিয়ে দেন নিরাপদে।
তবে তাদের সামনে এখনও দীর্ঘ বন্ধুর পথ। যেখানে অপেক্ষায় কিউই পেসারদের চোখরাঙানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৬২
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৫৬
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১০৮.২ ওভারে ৩৭২ (আগের দিন ১৩৪/২) (ল্যাথাম ৭৩, রাভিন্দ্রা ৮২, মিচেল ৫৮, ব্লান্ডেল ৯, ফিলিপস ১৬, কুগেলাইন ৪৪, হেনরি ১৬, সাউদি ০, সিয়ার্স ০*; স্টার্ক ২২-৩-৯৪-১, হেইজেলউড ২৬-৬-৭০-১, কামিন্স ২৪-৩-৬২-৪, গ্রিন ১১-২-৪৮-১, লায়ন ১৬.২-১-৪৯-৩, মার্শ ৬-১-১৯-০, হেড ২-০-৭-০, লাবুশেন ১-০-৯-০)।
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭৯) ২৪ ওভারে ৭৭/৪ ( স্মিথ ৯, খাওয়াজা ১১, লাবুশেন ৬, গ্রিন ৫, হেড ১৭*, মার্শ ২৭*; সাউদি ৭-১-১২০-০, হেনরি ৯-১-৩৭-২, সিয়ার্স ৬-১-২২-২, ফিলিপস ২-০-৪-০)।