ডাম্বুলার টার্নিং উইকেটে নিউ জিল্যান্ডকে ১৩৫ রানে গুটিয়ে ৪ উইকেটে জিতল শ্রীলঙ্কা।
Published : 09 Nov 2024, 11:36 PM
প্রবল চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যামিও ইনিংসের পর বল হাতেও আলো ছড়ালেন জ্যাক ফউকস। তবে যথেষ্ট হলো না তার প্রচেষ্টা। বোলারদের নৈপুণ্যে নিউ জিল্যান্ডকে অল্পে থামানোর পর অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার দায়িত্বশীল ইনিংসে জিতল শ্রীলঙ্কা।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটের জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। ডাম্বুলায় শনিবার ১৩৬ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা পেরিয়ে গেছে ৬ বল হাতে রেখে।
টার্নিং উইকেটে রান করা সহজ ছিল না ব্যাটসম্যানদের জন্য। যার সাক্ষী স্কোরকার্ডও। দুই দলের কেউ স্পর্শ করতে পারেনি চল্লিশ। আসালাঙ্কার ২৮ বলে অপরাজিত ৩৫ রান ম্যাচের সর্বোচ্চ। ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতিও পান তিনিই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বাদশ ওভারে ৬৭ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। নবম উইকেটে ইশ সোধির সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতে দলকে লড়ার মতো পুঁজি এনে দেন ফউকস।
নিজের স্রেফ তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯ নম্বরে নেমে ১৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পরে বল হাতে তিন ওভারে ৩ উইকেট নেন ২২ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে বিশ ছাড়াতে পারেন স্রেফ একজন। ২৪ বলে ২৭ রান করেন মাইকেল ব্রেসওয়েল।
শ্রীলঙ্কার তিন স্পিনার মিলে নেন ৬ উইকেট। ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে। লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ২টি ও অফ স্পিনার মাহিশ থিকশানা ধরেন একটি শিকার। দুই পেসার নুয়ান থুশারা ও মাথিশা পাথিরানা নেন ২টি করে উইকেট।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর নিউ জিল্যান্ডের প্রথম সীমিত ওভারের সিরিজ এটি। বিশ্বকাপের পর কেন উইলিয়ামসন সাদা বলের নেতৃত্ব ছাড়ার পর দুই টি-টোয়েন্টি ও তিন ওয়ানডের এই সফরে অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক করা হয়েছে অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টনারকে। শুরুটা ভালো হলো না তাদের। সম্প্রতি ভারতে তাদের স্মরণীয় টেস্ট সিরিজ জয়ের স্কোয়াড থেকে শ্রীলঙ্কা সফরের দলে আছেন ৬ জন।
তৃতীয় ওভারেই নিউ জিল্যান্ড হারায় টিম রবিনসনকে। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ওয়েলালাগে। পরের ওভারে থুশারার শিকার মার্ক চ্যাপম্যান।
১৯ বলে ১৯ রান করে উইল ইয়াং ফেরেন পাওয়ার প্লের শেষ বলে। ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে কেবল ৩১ রান তুলতে পারে নিউ জিল্যান্ড।
চারে নেমে ১৩ বলে ১৩ রান বিদায় নেন গ্লেন ফিলিপস। অভিষেকে মিচেল হে ফেরেন শূন্য রানে। তাকে ফেরানোর পর নিজের পরের ওভারে জশ ক্লার্কসনকেও বিদায় করেন পাথিরানা।
ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনারের জুটি এরপর দলকে এগিয়ে নেয় কিছুটা। ১০ রানের মধ্যে বিদায় নেন দুজনই। কিউইদের স্কোর তখন ৮ উইকেটে ৯৬। সেখান থেকেই সোধির সঙ্গে ফউকসের জুটিতে ১৩৫ পর্যন্ত যেতে পারে তারা। শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে সোধি ও জ্যাকব ডাফিকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন ওয়েলালাগে।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটাও ভালো ছিল না। দলের ৩ রানে কুসাল মেন্ডিস ফেরেন স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।
দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিসাঙ্কা ও কুসাল পেরেরার ৪০ রানের জুটি এগিয়ে নেয় দলকে। ১৪ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ১৯ রান করা নিসাঙ্কাকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন ফউকস।
পরের ওভারে পেরেরা ফেরেন ১৭ বলে ২৩ রান করে। এই ইনিংসের পথে তিলাকরাত্নে দিলশানকে (১ হাজার ৮৮৯ রান) ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে যান পেরেরা (১ হাজার ৯০৪ রান)।
চারে নেমে ১৬ বলে ২৩ রান করেন কামিন্দু মেন্ডিস। ভানুকা রাজাপাকসা ফেরেন দ্রুতই। ৮৭ রানে শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নাটকীয় কিছুর আভাস দেয় নিউ জিল্যান্ড। তবে ষষ্ঠ উইকেটে আসালাঙ্কা ও হাসারাঙ্গার ৩৮ রানের জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় সফরকারীদের।
২৩ বলে ২২ রান করে ফেরেন হাসারাঙ্গা। ওয়েলালাগেকে নিয়ে বাকিটা সারেন আসালাঙ্কা। ২ ছক্কা ও এক চারে গড়া তার ৩৫ রানের ইনিংসটি।
একই মাঠে রোববার হবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ১৩৫ (রবিনসন ৩, ইয়াং ১৯, চ্যাপম্যান ১, ফিলিপস ১৩, ব্রেসওয়েল ২৭, হে ০, ক্লার্কসন ৩, স্যান্টনার ১৬, ফউকস ২৭*, সোধি ১০, ডাফি ০; থিকশানা ৪-০-২১-১, থুশারা ৩-০-১৪-২, ওয়েলালাগে ৩.৩-০-২০-৩, হাসারাঙ্গা ৪-০-২০-২, আসালাঙ্কা ২-০-২৫-০, পাথিরানা ৩-০-২৫-২)
শ্রীলঙ্কা: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (নিসাঙ্কা ১৯, কুসাল মেন্ডিস ০, পেরেরা ২৩, কামিন্দু মেন্ডিস ২৩, আসালাঙ্কা ৩৫*, রাজাপাকসা ৪, হাসারাঙ্গা ২২, ওয়েলালাগে ১১*; ডাফি ৪-০-২৯-০, স্যান্টনার ৪-০-৩০-১, ব্রেসওয়েল ৪-০-৩১-১, ফউকস ৩-০-২০-৩, সোধি ২-০-১৭-০, ফিলিপস ২-০-১২-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা