সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করল খুলনা টাইগার্স।
Published : 23 Jan 2025, 10:41 PM
প্রায় মরা ম্যাচে প্রাণের ছোঁয়া লাগল শেষ ওভারে। জয়ের জন্য খুলনার প্রয়োজন ছিল স্রেফ পাঁচ রানের। কিন্তু সিলেটের ইংলিশ পেসার রিস টপলি প্রথম চার বলে দিলেন মোটে দুই রান। ম্যাচে তখন হঠাৎ উত্তেজনা। গ্যালারিতে থাকা গুটিকয় দর্শকও নড়েচড়ে বসলেন রোমাঞ্চের দোলায়। কিন্তু নাটকীয়তা আর জমতেই দিলেন না উইলিয়াম বোসিস্টো। অস্ট্রেলিয়ান রক্ত বলে কথা! চাপ-টাপ পাত্তা না দিয়ে পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে তিনি শেষ করে দিলেন ম্যাচ।
বিপিএল চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৬ উইকেটে হারাল খুলনা টাইগার্স।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার জর্জ মানজির ঝড় সামলে সিলেটকে ১৫২ রানে আটকে রাখে খুলনা। পরে মেহেদী হাসান মিরাজের ৭০ রানের ইনিংস খুলনাকে ্রগিয়ে নেয় জয়ের পথে।
৯ ম্যাচে খুলনার এটি চতুর্থ জয়। পয়েন্ট টেবিলে চার নম্বরে উঠে গেছে তারা। সমান ম্যাচে মাত্র দুই জয় নিয়ে সবার নিচে সিলেট।
বল হাতে শুরুতেই ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা খুলনা অধিনায়ক মিরাজ।
শুরুতে মানজি-ঝড়
টস জিতে ব্যাটিং নেমে প্রথম ওভারেই রনি তালুকদারের উইকেট হারায় সিলেট। তবে দলের ওপর চাপ আসতে দেননি জর্জ মানজি। পাল্টা আক্রমণে রানের চাকা সচল রাখেন স্কটিশ ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় ওভারে আবু হায়দারের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন মানজি। পঞ্চম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর ঝড় বইয়ে দেন তিনি। টানা চারটি চারের পর ওভারের শেষ বল ওড়ান ছক্কায়। চার বাউন্ডারির তিনটি ছিল রিভার্স সুইপে।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মানজির সামনে দুই চারের পর ছক্কা হজম করেন হাসান মাহমুদ।
৬ ওভারে ৫৮ রান করে ফেলে সিলেট। মানজি চলতি বিপিএলে দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন বাঁহাতি ওপেনার ২৮ বলে।
অষ্টম ওভারে আরেকটি ছক্কা হজম করার পর অবশেষে মানজির ঝড় থামান আবু হায়দার। স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হন ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারা ওপেনার।
তার বিদায়ে ভাঙে ৪০ বলে ৭৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। যেখানে জাকিরের অবদান ১২ বলে ১৪ রান।
জাকিরের চেষ্টা, ব্যর্থ বাকিরা
মানজির বিদায়ের পর একপ্রান্ত ধরে রেখে খেলতে থাকেন জাকির। পরপর দুই ওভারে মিরাজ ও আমির জামালের বলে একটি করে ছক্কা মারেন ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানদের থেকে সমর্থন পাননি তিনি।
বিপিএল অভিষেকে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কাদিম অ্যালেইন। জাকের আলিও ১০ রান করার আগে ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ।
চতুর্দশ ওভারে জামালের বলে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন জাকির। সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার মাহমুদুল হাসান জয়। ৩২ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এরপর আরিফুল হক, সামিউল্লাহ শিনওয়ারিও হতাশ করেন। ঝড়ো শুরুর ভিত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় সিলেট। শেষ দিকে সুমন খানের ১২ রানের ইনিংসে কোনোমতে দেড়শ ছাড়িয়ে যায় তারা।
তিন পেসারের ছোবল
হালকা চোটের কারণে আগের ম্যাচটি খেলতে পারেননি আবু হায়দার ও হাসান। ফেরার ম্যাচে সিলেটের ব্যাটিং নাড়িয়ে দিয়ে দুজনই নেন ২টি করে উইকেট। আরেক পেসার সালমান ইরশাদের ঝুলিতেও জমা হয় ২ শিকার।
মিরাজের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা
রিস টপলির চতুর্থ বলে চমৎকার কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে যাত্রা শুরু করেন মিরাজ। বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারে তিনি মারেন দুটি চার। রুয়েল মিয়ার বলে ছক্কার পর চার মেরে রান রেট দশের ওপরে তোলেন খুলনা অধিনায়ক।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ব্রেক থ্রুর সুযোগ তৈরি করেন সুমন খান। কিন্তু মিরাজের ক্যাচ নিতে পারেননি সিলেট অধিনায়ক আরিফুল হক। পরের বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বড় ছক্কা মেরে সুমনকে হতাশায় ডোবান মিরাজ।
পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৯ রান করে খুলনা।
নাঈম-আফিফের হতাশা
সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ফিরিয়ে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নিহাদ উজ জামান। ১৭ বলে ২০ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
তিনে নেমে টিকতে পারেননি আফিফ হোসেন (৩)। তবে মিরাজ ছুটতে থাকেন। এবারের আসরে দ্বিতীয় ফিফটি করতে তার লাগে ২৯ বল।
পঞ্চাশের পর যেন খোলসে ঢুকে যান খুলনা অধিনায়ক। পরের সময়টায় আর মাত্র দুটি চার মারতে পারেন তিনি। এই সময়ে ২১ বলে করেন ২০ রান।
চতুর্দশ ওভারে নিহাদের বলে স্লগ সুইপ খেলে সীমানায় ধরা পড়েন তিনি।
জয়ের আগে একটু নাটক
মিরাজের বিদায়ের সময় জয় থেকে ৪৭ রান দূরে খুলনা, বল বাকি ৩৮টি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাহিদুল ইসলাম ও অ্যালেক্স রসের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেন সিলেটের বোলাররা। চতুর্থ উইকেটে ২১ বলে ২৬ রান যোগ করেন মাহিদুল ও রস।
অষ্টাদশ ওভারে সুমনের প্রথম বলে বড় শটের চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন ১৩ বলে ১৭ রান করা মাহিদুল। তার বিদায়ে সিলেট দলে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়। তবে বসিস্টো ও অ্যালেক্স রস খুলনাকে এগিয়ে নেন অনায়াসে। এরপর শেষ ওভারের ওই মৃদু উত্তেজনা। টপলির প্রথম বলে সিঙ্গল নেন বসিস্টো, পরের বলে রান নিতে পারেননি রস। তৃতীয় বলে তিনি সিঙ্গল নেন, চতুর্থ বলে পারেননি বসিস্টো। এরপর ছক্কায় ম্যাচের ফয়সালা।
২৩ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন রস। একটি করে চার-ছক্কায় ১১ বলে ১৯ রান করেন বসিস্টো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৫২/৯ (মানজি ৫৮, রনি ০, জাকির ৪৪, আলিন ৯, জাকের ৮, আরিফুল ১, শিনওয়ারি ৯, নিহাদ উজ জামান ৫, সুমন ১২, রুয়েল ১*, টপলি ১*; মিরাজ ৪-০-৪০-১, আবু হায়দার ৪-০-২৭-২, হাসান ৪-০-৩৪-২, জামাল ৩-০-২৫-১, সালমান ৪-০-২৪-২, নাসুম ১-০-১-১)
খুলনা টাইগার্স: ১৯.৫ ওভারে ১৫৬/৪ (মিরাজ ৭০, নাঈম ২০, আফিফ ৩, রস ২০*, মাহিদুল ১৭, বসিস্টো ১৯*; টপলি ৩.৫-০-৪২-০, রুয়েল ৪-০-৩৮-০, নিহাদ উজ জামান ৪-০-২৫-২, সুমন ৪-০-২৯-১, শিনওয়ারি ৩-০-১৫-১, আলিন ১-০-৭-০)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ