ম্যান অব ম্যাচ হয়ে নিজেই অবাক রাহুল

ভারতের এই ওপেনারের মতে, সূর্যকুমার যাদবের ইনিংস ছিল আরও প্রভাববিস্তারী।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 07:40 AM
Updated : 3 Oct 2022, 07:40 AM

২৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংস দারুণ ব্যাপারই বটে। এমন পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে তবু বিস্মিত লোকেশ রাহুল। তার মতে, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সূর্যকুমার যাদবের ইনিংসটি ছিল আরও বেশি কার্যকর। 

গুয়াহাটিতে রোববার এই ম্যাচে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন রাহুল ও রোহিত শর্মা। রাহুল ফিফটি করেন ২৪ বলে। রোহিত অবশ্য অতটা গতিময় হতে পারেনি। ভারতীয় অধিনায়ক আউট হন ৩৭ বলে ৪৩ করে। রাহুলের সৌজন্যে তবু রানের গতি রয়ে যায় ভালোই। ৯৬ রানে থামে উদ্বোধনী জুটি। 

১০ ওভারে ৯৬ রান তোলা দল পরের সময়টায় তাণ্ডব চালায় ক্রিজে। পরের ১০ ওভারে আসে ১৪১ রান! রাহুল সেটির অংশ হতে পারেননি। তিনি বিদায় নেন ফিফটির পরপর। কিন্তু সূর্যকুমার যাদব ও বিরাট কোহলি ছড়ি ঘোরান দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের ওপর। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সূর্যকুমার আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস খেলে স্রেফ ২২ বলে ৬১ রান করেন ৫টি চার ও ছক্কায়। 

কোহলি অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৪৯ রান করে। শেষ দিকে দিনেশ কার্তিক করেন ৭ বলে অপরাজিত ১৭। শেষ ৬ ওভারে ১০৫ রান তুলে ভারত ২০ ওভারে করে ২৩৭ রান! 

ম্যাচ শেষে রাহুল জানালেন, শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল ১৮০ রানের আশেপাশে কোনো স্কোরে। সূর্যকুমারের সৌজন্যে রান চলে আসে ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। শেষ পর্যন্ত সেটিই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। কারণ ডেভিড মিলারের ৪৭ বলে ১০৬ রানের অসাধারণ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে যায় ২২১ পর্যন্ত। রান তাড়ায় হেরে যায় তারা স্রেফ ১৬ রানে। 

ম্যাচ শেষে রাহুল এজন্যই বললেন, পুরস্কারটি প্রাপ্য ছিল সূর্যকুমারের। 

“আমাদের মনে হচ্ছিল ১৮০-১৮৫ বেশ ভালো স্কোর হতে পারে। তবে ক্রিকেটে খেলাটা অনেক সময়ই বিস্ময় উপহার দেয়… আর সত্যি বলতে, আমি বেশ অবাক হয়েছি যে এটা (ম্যান অব দা ম্যাচের ট্রফি) পাচ্ছি। কারণ, সুর্য (সূর্যকুমার) যেভাবে ব্যাট করেছেন, খেলায় প্রভাব বেশি ছিল সেই ইনিংসের। খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ইনিংসটি।” 

ধারাভাষ্যকার ও সঞ্চালক হার্শা ভোগলে তখন ব্যাখ্যা করেন, কেন রাহুলকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছে ধারাভাষ্য দল, “ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা খুব সিনিয়র একজন সাবেক ওপেনার বলেছেন, ওপেন করার কাজটিই সবচেয়ে কঠিন…!” হার্শার ইঙ্গিত কিংবদন্তি ওপেনার সুনিল গাভাস্কারের দিকে। 

রাহুল তখন হাসতে হাসতে আবারও তুলে ধরলেন, এই ম্যাচে ভারতের পরের দিকের ব্যাটসম্যানরাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। 

“উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে আমরা সবসময়ই মনে করি, আমাদের কাজটা কঠিন। তবে ওয়ানডেতে কিছু ইনিংস মিডল অর্ডারে ব্যাট করে দেখেছি, ওখানে খেলাও কঠিন। তাই যেটা বললাম, সূর্যর ইনিংস ছিল বেশি প্রভাববিস্তারী, বিরাটও (কোহলি) দারুণ ব্যাট করেছে। দিনেশের (কার্তিক) কাজটাও সহজ নয়। সে যখন নামে, খুব বেশি বল থাকে না। কিন্তু প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে ওরা।” 

নিজের ম্যাচ সেরা হওয়া নিয়ে আপত্তি থাকলেও রাহুলের জন্য এই ইনিংসটি তার জন্য জরুরি ছিল অন্য কারণে। সম্প্রতি ওপেনিংয়ে তার স্ট্রাইক রেট ও খেলার ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল কিছু। সেই প্রশ্নগুলো আরও উচ্চকিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে। 

১০৭ রান তাড়ায় সেই ম্যাচে রাহুল অপরাজিত ৫১ করেন ৫৬ বল খেলে। আরেকপ্রান্তে সূর্যকুমার ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন ৩৩ বল খেলে। সেদিন উইকেট ছিল কঠিন, লক্ষ্য বড় ছিল না। রাহুলের এত বল খেলায় তাই সমস্যা হয়নি। তবে তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্নগুলো আবার উসকে দেয় ইনিংসটি। 

সেই রাহুল পরের ম্যাচেই ঝড় তুললেন দুইশর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলে। দুই ম্যাচে দুই রূপ নিয়ে রাহুলের ব্যাখ্যা, তিনি কেবল দলের চাওয়া আর ম্যাচের পরিস্থিতির রূপটুকুই দেখেন। 

“উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে এটা বোঝা জরুরি যে কোন দিন কেমন ব্যাটিং দরকার। দলের জন্য সেভাবেই খেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। আমি সেটাই চেষ্টা করি। এই মানসিকতা নিয়েই সবসময় খেলি এবং খেলে যাব।”