আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি তালেবান সরকারের দমন নীতির কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জনের ডাক উঠেছিল ইংল্যান্ডে।
Published : 22 Jan 2025, 01:54 PM
আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছেন জস বাটলার। সেখানে শিশু ও নারীদের ওপর তালেবান শাসনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছেন তিনি, কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও। তবে আফগানদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ম্যাচ বর্জন করাকে সমাধানের পথ মনে করেন না ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
২০২১ সালের অগাস্টে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই আফগান নারীদের রুদ্ধ করে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে একের পর এক। নারীদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ একদম সীমিত করা হয়েছে। খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এসব কারণে অস্ট্রেলিয়া দুই দফায় আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাতিল করেছে। বৈশ্বিক আসরে অবশ্য আফগানদের সঙ্গে খেলছে তারা।
ইংল্যান্ডে লেবার পার্টির সাংসদ টোনিয়া অ্যান্টোনিয়াজি কিছুদিন আগে ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গুল্ডের কাছে চিঠিতে অনুরোধ করেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি যেন তারা বর্জন করেন। ইসিবি যদিও সেটায় রাজি হয়নি। তার সঙ্গে একমত বাটলারও।
ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে কলকাতায় বাটলার বললেন, সব বাস্তবতায় মাথায় রেখেও ম্যাচ বর্জন করা সঠিক পথ হতে পারে না।
“খেলোয়াড় হিসেবে যতটা সম্ভব এই ধরনের রাজনৈতিক অবস্থার খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা এর চেয়ে আরও বেশি জানে। আমি চেষ্টা করছি রব কি (ইংল্যান্ডের ছেলের দলের মহাপরিচালক) ও ওপরের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটি বোঝার জন্য যে, তারা এটিকে কীভাবে দেখেন। আমার মনে হয় না, ম্যাচ বর্জন করা এটির পথে কোনো সমাধান।”
২০০৩ বিশ্বকাপের নজির অবশ্য বাটলারদের সামনে আছে। রবার্ট মুগাবের বিতর্কিত শাসনামলে জিম্বাবুয়েতে গিয়ে ম্যাচ না খেলার চাপ ছিল ইংল্যান্ড দলের ওপর। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েতে না গিয়ে ম্যাচটি ছেড়ে দেয় নাসের হুসেইনের নেতৃত্বাধীন দল। সম্ভাব্য দুটি পয়েন্ট না পাওয়ায় পরে টুর্নামেন্টে তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয় প্রবলভাবে।
তবে এবার ততটা চাপ নেই বলে জানালেন বাটলার। ক্রিকেটকে রাজনীতির বাইরে রাখার পক্ষে তিনি।
“ক্রিকেটারদের এই ব্যাপারটি নিয়ে দুর্ভাবনা খুব একটা নেই। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে নিজেকে আরও শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করতে হয়, এই সংক্রান্ত নানা কিছু পড়ার চেষ্টা করতে হয়। এটা নিয়ে বেশ কিছু ভালো লেখা আছে, যা আমার নজরে পড়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলেছি বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার জন্য।”
“এই ধরনের পরিস্থিতিতে ওই বিশেষজ্ঞদের মতামতক অনুসরণ করি আমি। তবে খেলোয়াড় হিসেবে, কেউই চায় না খেলাধুলায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়ুক। আমাদের স্রেফ আশা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাব, ম্যাচটি খেলব এবং ভালো একটি টুর্নামেন্ট কাটাব।”
সাংসদ টোনিয়া অ্যান্টোনিয়াজি তার চিঠিতে লিখেছিলেন, তালেবানদের শাসনে আফগানিস্তানের ১৪ লাখ নারীকে ‘প্রতারণামূলক স্বপ্নলোকে’ রাখা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত লিঙ্গবৈষম্যের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। ইংল্যান্ড দলের কাছে তিনি আকুতি জানান, ‘তালেবানদের অধীনে আফগান মেয়ে ও নারীদের যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হচ্ছে’, সেসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। তার মতে, আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচটি বর্জন করলে তা একটি পরিষ্কার বার্তা দেবে যে, ‘এই ধরনের ভয়ানক আচরণ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।’
অ্যান্টোরিয়াজির সেই চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল ১৬০ জন সাংসদের।
তবে ম্যাচ বর্জন করা সম্ভব নয় জানিয়ে ইসিবি প্রধান নির্বাহী গুল্ড সেই চিঠির জবাবে বলেন, ‘আইসিসির নেতৃত্বে একটি সমন্বিত উদ্যোগ’ প্রয়োজন আফগানিস্তানের ব্যাপারটি নিয়ে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও আইসিসির কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক সংস্থাটির উচিত নিজেদের আইনের প্রয়োগ করা।
উল্লেখ্য যে, টেস্ট মর্যাদা পাওয়া ও আইসিসির রাজস্বের ভাগ পাওয়ার একটি শর্ত হলো নারী ক্রিকেট কার্যক্রম চালু থাকা। কিন্তু সেই শর্ত দীর্ঘদিন ধরেই মানছে না আফগানিস্তান। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থমকে গেছে নারী ক্রিকেট দল গঠনের প্রক্রিয়া।
ইংল্যান্ডের সাংসদদের ওই দাবির পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া মন্ত্রীও তাদের তাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি আহবান জানান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জন করতে। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা যদিও কোনো সাড়া দেয়নি এখনও।