অ্যান্ডারসন-লিচের ছোবলে এলোমেলো কিউই ব্যাটিং

ইংল্যান্ডের পেস-স্পিনের যৌথ আক্রমণে ফলো-অনে পড়ার শঙ্কায় নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 07:11 AM
Updated : 25 Feb 2023, 07:11 AM

৪০ বছর বয়সেও কীভাবে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার, আরও একবার তা দেখিয়ে দিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। সুইং বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে নাড়িয়ে দিলেন তিনি কিউই টপ অর্ডার। পরে স্পিনে চেপে ধরলেন জ্যাক লিচ। ইংল্যান্ডের পেস-স্পিনের যৌথ আক্রমণে দিশাহারা নিউ জিল্যান্ড শঙ্কায় ফলো-অনে পড়ার।

ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটিংয়ের দাপট ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিনে বয়ে এনেছে বোলিংয়েও। আগ্রাসী ব্যাটিং, চমকপ্রদ ইনিংস ঘোষণা আর বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা, আবারও এই সবকিছুর নিখুঁত প্রদর্শনীতে ম্যাচের লাগাম এখন তাদের হাতেই। টানা দ্বিতীয় দিনে অবশ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি।

৮ উইকেটে ৪৩৫ রান তুলে আগের টেস্টের মতো অনেকটা আচমকাই ইনিংস ঘোষণা করে দেন ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। এ দিন এক সেশনও পুরো ব্যাটিং করেননি তারা। যথারীতি এরপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ইংলিশ বোলাররা। বৃষ্টিতে শনিবার দিনের খেলা আগেই শেষ হওয়ার সময় নিউ জিল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ১৩৮।

বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়েছিল ৬৫ ওভারে। দ্বিতীয় দিনে হয়েছে ৬৪.১ ওভার।

১৮৪ রান নিয়ে হ্যারি ব্রুক দিন শুরু করেন ডাবল সেঞ্চুরি আশায়। তবে চাওয়া পূরণ হয়নি তার। আর স্রেফ ২ রান যোগ করেই ম্যাট হেনরিকে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি দিনের তৃতীয় ওভারে।

১০১ রানে দিন শুরু করা রুট অবশ্য তার চাওয়া বুঝিয়ে দেন দিনের শুরুতেই। তার প্রথম স্কোরিং শটই টিম সাউদিকে রিভার্স-র‌্যাম্প শটে চোখধাঁধানো ছক্কা! পরে তিনি স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন মাইকেল ব্রেসওয়েলকেও।

ব্রুক আউট হওয়ার পর ক্রিজে গিয়ে ওই ওভারেই টানা দুটি বাউন্ডারিতে নিজের ভাবনা বুঝিয়ে দেন বেন স্টোকস।

রুট-ব্রুকের ৩০২ রানে জুটি ভাঙার পর অবশ্য আর কোনো বড় জুটি পায়নি ইংল্যান্ড। তবে মূল চাওয়া তারা ঠিকই পূরণ করতে পারে-দ্রুত রান তোলা।

৫ চারে ২৭ রান করে ফিরে যান স্টোকস। বেন ফোকসকে রানের দেখা পেতে দেননি ব্রেসওয়েল। লোয়ার অর্ডারে স্টুয়ার্ট ব্রড, অলিভার রবিনসনরা ছোট ছোট অবদান রাখেন। আরেক পাশে রুট তুলতে থাকেন রান।

ম্যাট হেনরির বলে বাউন্ডারিতে রুট দেড়শ পেরিয়ে যেতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন স্টোকস। রুট অপরাজিত থাকেন ১৫৩ রানে। ২৯ টেস্ট সেঞ্চুরির ১৪টিতেই তিনি পেরিয়ে গেলেন দেড়শ।

এরপর অ্যান্ডারসনের পালা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তিনি ফিরিয়ে দেন ডেভন কনওয়েকে, পঞ্চম ওভারে তার শিকার কেন উইলিয়ামসন। ৭ ওভারে ২ উইকেটে ১২ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় নিউ জিল্যান্ড।

বিরতির পর খুব একটা সময় নেননি অ্যান্ডারসন। এবার তিনি বিদায় করেন এই টেস্টেই একাদশে ফেরা উইল ইয়াংকে। ২১ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড।

আগের দিন ঠিক ২১ রানেই ইংল্যান্ড হারিয়েছিল ৩ উইকেট। সেখান থেকে দুর্দান্ত পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন ব্রুক, তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন রুট। নিউ জিল্যান্ড পায়নি তেমন কাউকে।

একটু প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন টম ল্যাথাম। ৩৫ রানে তিনি আউট হন লিচকে রিভার্স সুইপ খেলে। তৃতীয় আম্পায়ার আলিম দার যদিও বারবার দেখেও বুঝে উঠতে পারছিলেন না, বল ল্যাথামের গ্লাভসে লেগেছে কি না। অনেকটা সময় পর তিনি সিদ্ধান্ত দেন, গ্লাভসের ব্যান্ডে সামান্য ছুঁয়ে গেছে বল। সিদ্ধান্তে যদিও অসন্তুষ্ট দেখা যায় ল্যাথামকে।

পাঁচে নামা হেনরি নিকোলস চেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণের। কিন্তু ল্যাথামের মতো তিনিও ফেরেন রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায়। ৫ চারে ৩৮ বলে ৩০ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দারুণ ক্যাচ নেন অলিভার পোপ।

একটু পরে পোপ ছাড়িয়ে যান নিজেকে। লিচের বলেই সিলি পয়েন্টে আরও দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে তিনি ফেরান ড্যারিল মিচেলকে।

বিপর্যস্ত নিউ জিল্যান্ডকে আরেকটি ধাক্কা দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। শেষ সেশনের শুরুতে তিনি বিদায় করেন মাইকেল ব্রেসওয়েলকে। নিউ জিল্যান্ডের রান তখন ৭ উইকেটে ১০৩। 

এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন টম ব্লান্ডেল। অধিনায়ক টিম সাউদি বরাবরের মতোই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দেন তাকে। জুটি গড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টিতে থেমে যায় সেই লড়াই।

আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ব্লান্ডেল অপরাজিত ২৫ রানে। সাউদি ১৮ বলে ২৩ রানের ইনিংসের পথে দুটি ছক্কায় স্পর্শ করেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। টেস্টে দুজনেরই ছক্কা এখন ৭৮টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৭.১ ওভারে ৪৩৫/৮ (ডি.) (আগের দিন ৩১৫/৩) (রুট ১৫৩*, ব্রুক ১৮৬, স্টোকস ২৭, ফোকস ০, ব্রড ১৪, রবিনসন ১৮, লিচ ৬*; সাউদি ২৪-৫-৯৩-১, হেনরি ২২.১-৩-১০০-৪, মিচেল ৯-১-৬১-০, ওয়্যাগনার ২১-১-১১৯-১, ব্রেসওয়েল ১১-০-৫৪-২)।

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪২ ওভারে ১৩৮/৭ (ল্যাথাম ৩৫, কনওয়ে ০, উইলিয়ামসন ৪, ইয়াং ২, নিকোলস ৩০, মিচেল ১৩, ব্লান্ডেল ২৫*, ব্রেসওয়েল ৬, সাউদি ২৩*; অ্যান্ডারসন ১০-১-৩৭-৩, ব্রড ১২-২-৫০-১, রবিনসন ৮-৪-৬-০, লিচ ১২-১-৪৫-৩)।