পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আবরার আহমেদ, তাই হয়তো আর তিন উইকেট দ্রুত তুলে নিতে পারলেই ইনিংস ব্যবধানে জিতে যাবে ইংল্যান্ড।
Published : 10 Oct 2024, 07:33 PM
ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিকে তিনশর ঠিকানায় নিয়ে গেলেন হ্যারি ব্রুক। জীবন পেয়ে আরেকটি দ্বিশতক উপহার দিলেন জো রুট। দুজনের ম্যারাথন জুটির সৌজন্যে ইংল্যান্ড চড়ল আটশ রানের পাহাড়ে। এরপর বল হাতেও দুর্বার তারা। পাকিস্তানকে চেপে ধরে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ইংলিশরা।
মুলতানের নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে প্রায় সাড়ে তিন দিন ধরে চলল দুই দলের প্রথম ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের ওই দাপটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই পথ হারিয়ে ফেলল পাকিস্তান। চতুর্থ দিনের পরের অংশে ১৫২ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কায় দলটি।
সফরকারীদের চেয়ে ১১৫ রান পিছিয়ে থেকে শেষ দিনের খেলা শুরু করবে স্বাগতিকরা। চতুর্থ দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আবরার আহমেদের এই ম্যাচে আর অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই বাকি আর তিন উইকেট দ্রুত তুলে নিতে পারলেই ইনিংস ব্যবধানে জিতে যাবে ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের ৫৫৬ রানের জবাবে ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ে ১৫০ ওভারে ৮২৩ রান করে ইংল্যান্ড। বৃহস্পতিবার চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে ২৬৭ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
টেস্ট ইতিহাসে এ নিয়ে মাত্র চতুর্থবার ইনিংসে ৮০০ রানের দেখা মিলল। চারবারের তিনটিই আবার ইংল্যান্ডের। ১৯৩৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৯০৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল তারা এবং ১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলটি করেছিল ৮৪৯ রান।
আর কলম্বোতে ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৯৫২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড এখনও নিজেদের করে রেখেছে শ্রীলঙ্কা।
ক্যারিয়ারের আগের সর্বোচ্চ ১৮৬ রান ছাপিয়ে ৩১৭ রানের ইনিংস খেলেন হ্যারি ব্রুক। ৩২২ বলের ইনিংসে ২৯ চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কা মারেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। দিনের শুরুতে জীবন পাওয়া জো রুট থামেন ক্যারিয়ার সেরা ২৬২ রান করে।
দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৪৫৪ রান। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর মাত্র তিনটি। আর সব মিলিয়ে দেশের বাইরে এটিই সর্বোচ্চ; আগের সেরা অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও বিল পিন্সফোর্ডের ৪৫১ রান, ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দা ওভালে।
পাঁচশর দুয়ারে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারাতে পারত; কিন্তু নাসিম শাহর ওভাবে মিড উইকেটে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন বাবর। ১৮৬ রানে জীবন পান রুট।
কয়েক ওভার পরই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রুট। ইংল্যান্ডের হয়ে সাতটি দ্বিশতক নিয়ে তার সামনে এখন শুধু ওয়ালি হ্যামন্ড। সব মিলিয়ে অবশ্য ১২টি দ্বিশতক নিয়ে ধরাছোঁয়ার প্রায় বাইরে ব্র্যাডম্যান।
অন্যপ্রান্তে সাবলীল ব্রুককে কোনো বোলারই তেমন কঠিন সময় দিতে পারেননি। আঘা সালমানের বলে বাউন্ডারি মেরে দলের ছয়শ পূর্ণ করেন ব্রুক। কিছুক্ষণ পর তিনি পৌঁছে যান ক্যারিয়ার প্রথম দ্বিশতকে।
একই ইনিংসে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যানের ডাবল সেঞ্চুরির মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি। চেন্নাইয়ে ১৯৮৫ সালে ভারতের বিপক্ষে মাইক গ্যাটিং (২০৭) ও গ্রায়েম ফওলার (২০১) করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পর প্রথম সেশনে আর সুযোগ পায়নি পাকিস্তান। ২৯ ওভারে ১৬৬ রান করে ইংল্যান্ড। মধ্যাহ্ন বিরতির পর আড়াইশতে যেতে সময় লাগেনি ব্রুকের। আর বিরতির আগেই এই মাইলফলক স্পর্শ করেন রুট।
টেস্ট ইতিহাসে একই ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের আড়াইশ ছাড়ানো রানের মাত্র তৃতীয় ঘটনা এটি।
দলকে সাতশ পার করিয়ে আঘা সালমানের আপাত সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন রুট। ৩৭৫ বলের ইনিংসে ১৭টি চার মারেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। অর্থাৎ ১৯৪ রান তিনি দৌড়ে নেন।
রুটের বিদায়ের পর আরও বাড়ে ইংল্যান্ডের রানের গতি। ইনিংস ঘোষণার আগে খেলা আর ১৪ ওভারে তারা নেয় ১২০ রান। মাত্র ৪৯ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন ব্রুক ও জেমি স্মিথ। দুবার জীবন পেয়ে ২৪ বলে ৩১ রান করে আউট হন জেমস।
এর আগেই সাইম আইয়ুবের বলে বাউন্ডারি মেরে মাত্র ৩১০ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ব্রুক। টেস্ট ক্রিকেটে এর চেয়ে কম বল খেলে ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে কেবল ভিরেন্দার শেবাগের, ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ বলে।
দলকে আটশর কাছে রেখে আউট হন ব্রুক। মাঠ ছাড়ার সময় স্বাগতিক ফিল্ডারদের অভিবাদন পান তিনি। এর দুই ওভার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন পোপ। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাকিস্তান।
স্বাগতিকদের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন নাসিম ও সাইম। সাত বোলারের ছয়জনই খরচ করেন একশর বেশি রান। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৬ বোলারের একশ বা তার বেশি রান খরচের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একশ বা তার বেশি রান দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের ৬ বোলার।
সড়কের মতো উইকেটে বোলারদের নিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ছেলেখেলা করলেও, চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামতেই বদলে যায় চিত্রনাট্য। শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে তারা।
ইনিংসের প্রথম বলেই ক্রিস ওকসের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন আব্দুল্লাহ শাফিক। পরের দুই ওভারে আসে আরও দুটি সুযোগ। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে গাস অ্যাটকিনসনের বলে ওকস এবং পরের ওভারে ওকসের বলে অ্যাটকিনসন ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন।
দুবারই বেঁচে যান শান মাসুদ। সুযোগের ফায়দা অবশ্য নিতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। চা বিরতির পর অ্যাটকিনসনের বলে জ্যাক ক্রলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
টিকতে পারেননি বাবর আজমও। অ্যাটকিনসনের লেংথ ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন পাকিস্তানের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। ব্যর্থতার ধারা আরেকটু লম্বা করে মাত্র ৫ রানে ফেরেন তিনি।
পরের ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ২৫ রান করা সাইম আইয়ুব। পঞ্চাশের আগে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান আর সাউদ শাকিলও দ্রুত বিদায় নিলে তাদের বিপদ আরও বাড়ে।
শেষ দিকে প্রায় এক ঘণ্টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন সালমান আলি আঘা ও আমের জামাল। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৭৬ বলে তারা যোগ করেন ৭০ রান। সালমান ৪১ ও জামাল ২৭ রান নিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চতুর্থ দিন শেষে)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৫৬
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৪৯২/৩) ১৫০ ওভারে ৮২৩/৭ (ডিক্লে.) (রুট ২৬২, ব্রুক ৩১৭, স্মিথ ৩১, ওকস ১৭*, অ্যাটকিনসন ২, কার্স ৯*; আফ্রিদি ২৬-১-১২০-১, নাসিম ৩১-০-১৫৭-২, আবরার ৩৫-০-১৭৪-০, জামাল ২৪-০-১২৬-১, সালমান ১৮-০-১১৮-১, সাইম ১৪-০-১০১-২, শাকিল ২-০-১৪-০)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৩৭ ওভারে ১৫২/৬ (শাফিক ০, সাইম ২৫, মাসুদ ১১, বাবর ৫, শাকিল ২৯, রিজওয়ান ১০, সালমান ৪১*, জামাল ২৭*; ওকস ৮-১-২৯-১, অ্যাটকিনসন ১০-২-২৮-২, বাশির ৬-০-৩২-০, কার্স ১০-১-৩৯-২, লিচ ৩-০-২০-১)