আসছে আইপিএলে পান্ত কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারলেই সেটা বাড়তি পাওয়া হবে বলে মনে করেন দিল্লি ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ।
Published : 07 Feb 2024, 04:34 PM
সড়ক দুর্ঘটনার সেই দু:সহ স্মৃতি পেছনে ফেলে একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন রিশাভ পান্ত। হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে, পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন আগেই। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে এবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার পালা। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা পান্তের জীবন থেকে লম্বা একটা সময় কেড়ে নিলেও তার আত্মবিশ্বাসে যেন কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। তার দল দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিংয়ের বিশ্বাস, পান্ত হয়তো পুরো আইপিএলেই খেলার আশায় আছে। তবে, বাস্তবতার নিরিখে তিনি অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ওই দুর্ঘটনায় পড়েন পান্ত। তার হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। কবজি, অ্যাঙ্কেল, পায়ের অগ্রভাগসহ চোট পান নানা জায়গায়। আর আঘাত পান পিঠে ও মাথায়। এরপর শুরু হয় তার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দীর্ঘ পালা।
এখন অবশ্য অনেকটা সুস্থ তিনি। ফিরছেন জিমে, শুরু করেছেন অনুশীলনও। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে নিজের অগ্রগতির কথা নিজেই জানান দিয়েছেন পান্ত। আগামী আইপিএলে চোখ রেখে তৈরি হচ্ছেন তিনি।
আগামী মার্চের শেষ দিকে আইপিএল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে পুরোপুরি ফিট হয়ে যাবেন বলে আশায় আছেন পান্ত। কিন্তু পন্টিংয়ের এমনটা মনে হচ্ছে না। পান্তকে পুরো আসরে পাওয়া নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি। খেলতে পারলেও কিপারের দায়িত্ব ও অধিনায়কত্ব পালন করতে পারবেন কিনা পান্ত, সংশয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সফলতম ব্যাটসম্যান ও ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়কদের একজন পন্টিং।
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) দ্বিতীয় মৌসুম থেকে ওয়াশিংটন ফ্রিডমের কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন পন্টিং। মেলবোর্নে বুধবার এনিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানেই ওঠে পান্তের প্রসঙ্গ। দিল্লির কোচও তুলে ধরেন তার ভাবনা ও পান্তের চাওয়ার কথা।
“রিশাভ খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, (আইপিএল) খেলার জন্য সে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। তবে আমরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নই, সে কতটা পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে, সে উন্নতি করেছে এবং ভালোভাবে দৌড়াচ্ছে। তবে এটাও বলতে হবে, প্রথম ম্যাচ থেকে আমরা স্রেফ ৬ সপ্তাহ দূরে। তাই নিশ্চিত নই, এই বছর তাকে উইকেটরক্ষক হিসেবে পাব কিনা।”
“তবে আমি শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, এখন যদি তাকে জিজ্ঞাসা করি, সে বলবে, ‘আমি সবগুলো ম্যাচই খেলব, প্রতি ম্যাচেই কিপিং করব এবং চার নম্বরে ব্যাটিং করব।’ সে এমনই, তবে আমরা ভালো কিছুর আশার থাকব। সে দৃঢ়চরিত্রের একজন ক্রিকেটার। অবশ্যই সে আমাদের অধিনায়ক। গত বছর তার অভাব আমরা প্রবলভাবে অনুভব করেছি।”
ওই দুর্ঘটনা পান্তের জন্য কতটা ভয়ংকর ছিল, কদিন আগে সেটা নিজেই বলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দুর্ঘটনায় পড়ার পর তার মনে হয়েছিল, আর হয়তো বাঁচবেন না তিনি।
বলতেই হবে, ভাগ্য সহায় ছিল পান্তের। রাতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি নিজ শহর উত্তরাখন্ডের রুর্কিতে। ভোরের দিকে একটু তন্দ্রামতো আসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে লেগে উল্টে যায় তার গাড়ি, একটু পর আগুন ধরে যায়। সেসময় উল্টো দিকের রাস্তা ধরে যাচ্ছিল হারিয়ানা রোডওয়েজের একটি বাস। পাশেই একটি গাড়িকে দুর্ঘটনায় পড়তে দেখে বাসের চালক সুশিল কুমার ও তার সহকারী পারামজিত বাস থামিয়ে ছুটে গিয়ে জলন্ত গাড়ি থেকে বের করেন পান্তকে।
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে মাঠের বাইরে থাকা পান্তের দুর্ঘটনা কতটা ভয়ংকর ছিল, বুঝতে পারছেন পন্টিংও। তাই আসছে আইপিএলে পান্ত কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারলেও সেটা দিল্লির জন্য বোনাস মনে করছেন দলটির কোচ।
"গত ১২-১৩ মাসে যত কিছুর মধ্য দিয়ে সে গেছে, তা যদি বুঝতে পারেন... ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনা ছিল এটি। এমন দুর্ঘটনা, যেটি থেকে বেঁচে গিয়েই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে সে, ক্রিকেট খেলতে পারা তো বহু দূরের ব্যাপার।"
“আমরা কেবল ভালো কিছুর প্রত্যাশা করব এবং আশায় থাকব সে যেন মাঠে থাকতে পারে এবং খেলতে পারে। সব ম্যাচে যদি নাও হয়, তাকে যদি ১৪ ম্যাচের ১০টিতে কিংবা যতগুলো ম্যাচেই পাওয়া যায়, সেটাই আমাদের জন্য বোনাস।”