কোভিডের মৃদু সংক্রমণও প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কে, বলছে গবেষণা

যারা মৃদুভাবেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মস্তিষ্কের দ্রুত বয়স বৃদ্ধিসহ অন্যান্য পরিবর্তনের কারণ হতে পারে এই রোগ, এমনটাই জানা গেছে নতুন একটি গবেষণা থেকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2022, 03:50 PM
Updated : 9 March 2022, 04:04 PM

বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মস্তিষ্কের হলুদ অংশ দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে এবং মস্তিষ্কের টিস্যুতে বেশি অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে।

গবেষণায় অনেকগুলো পরিবর্তন ধরা পড়েছে মস্তিষ্কের সেই অংশে, যেখানে ঘ্রাণের অনুভূতিটি নিয়ন্ত্রণ করে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এ ধরনের সবচেয়ে বিস্তৃত পরিসরের গবেষণা এটি।

এ গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোয়েনয়েলে দোয়াউদ বলেন, “এমনকি মৃদু আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত না হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে মস্তিষ্কের যে স্পষ্ট পার্থক্য আমরা দেখেছি, তা আমাদের অবাক করেছে।”

২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত, সংক্রমিত হওয়ার আগে ও পরে গড়ে সাড়ে চার মাসের ব্যবধান রেখে ৪০১ জনের মস্তিষ্কের চিত্র সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেন দোয়াউদ ও তার সহকর্মীরা। এই বিশ্লেষণের ফলাফল তারা তুলনা করেন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি এমন ৩৮৪ জন ব্যক্তির মস্তিষ্কের চিত্র বিশ্লেষণের ফলাফলের সঙ্গে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া এই দুই দলের সদস্যদের বয়স, আর্থসামাজিক অবস্থান এবং উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার মতো ঝুঁকির বিষয়গুলোতে সঙ্গতি রাখা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী ৪০১ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৫ জনকে কোভিড সংক্রমণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।

অংশগ্রহণকারী ৭৮৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৮১ বছরের মধ্যে এবং সবাই যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংকের অংশ। ২০১২ সালে সেদেশে সরকারি এই স্বাস্থ্যতথ্য ভাণ্ডারের কাজ শুরু হয়।

দোয়াউদ বলেন, সাধারণত মানুষ বছরে গড়ে তার মস্তিষ্কের হলুদ অংশ থেকে শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হারায়। মূলত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের স্মৃতি সম্পর্কিত অংশে এই ক্ষয় হয়। কিন্তু এই গবেষণার মূল্যায়নে দেখা গেছে, যারা আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে গড়ে অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ টিস্যুর ক্ষয় হয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

মস্তিষ্কের চিত্র বিশ্লেষণের পাশাপাশি এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের এক্সিকিউটিভ ও কগনিটিভ (নির্বাহী ও সজ্ঞানীয়) কার্যক্রমও পরীক্ষা করা হয় ট্রায়াল মেকিং টেস্ট ব্যবহার করে। সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই ট্রায়াল মেকিং টেস্ট করা হয়।

গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন, যাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি ক্ষয় হয়েছে, তারাই ওই পরীক্ষায় সবচেয়ে খারাপ ফল করেছেন।

দোয়াউদ জানান, মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি যে অংশে হয়েছে, তা অলফ্যাক্টরি সিস্টেম বা ঘ্রাণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে কেন এমনটি হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

“হয়ত এক থেকে দুই বছর পর আবার এসব অংশগ্রহণকারীকে পরীক্ষা করা হলে এ বিষয়ে কোনো ইংগিত মিলতে পারে। সেরকম পরিকল্পনা আমাদের আছে।”

গবেষণায় সংক্রমণ এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে কিছু যোগসূত্র মিললেও এর কারণ বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়। আগের গবেষণাগুলোতেও দেখা গেছে, যাদের ঘ্রাণ অনুভূতি একাধিকবার ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নষ্ট হয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের হলুদ অংশের ক্ষয়ের সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ঘ্রাণশক্তি আদৌ নষ্ট হয়েছিল কিনা, তার মূল্যায়ন এবারের গবেষণায় করা হয়নি।

গবেষকরা বলেছেন, তারা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের যে চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন, তা কেবল মুহূর্তের পরিস্থিতির তথ্য দেয়। তবে তারা এটাও বলেছেন, এই ফলাফল কোভিড সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলঝেইমার ও অন্যান্য স্মৃতিভ্রংশ রোগের কারণ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ব্রেইন হেলথের নিউরোলজিস্ট রিচার্ড আইজ্যাকসন বলেছেন, এ গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা সতর্কতা জারি করার মত পর্যাপ্ত নয়।