তারা বলছেন, কোভিডের এই দুটি ধরনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা; আর ওই পার্থক্যটুকুই হয়ে উঠতে পারে রোগীর জীবন-মরণের প্রশ্ন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেল্টায় সংক্রমিত যে রোগীরা উচ্চ-ঝুঁকিতে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে দুই ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি দারুণ কাজে লাগতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এ দুই পদ্ধতি বেশ কার্যকর।
কিন্তু ওমিক্রনের বেলায় ওই ওষুধগুলোতে উপকার পাওয়ার আশা কম; তাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় এক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি কার্যকর হতে পারে, কিন্তু তার সরবরাহ খুবই কম।
কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হল আরটিপিসিআর পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় রোগীর শরীর থেকে ভাইরাসের নমুনা নিয়ে মিলিয়ে দেখা হয় সেটি করোনাভাইরাস কি না।
কিন্তু সেটা করোনাভাইরাসের কোন ধরন, ডেল্টা না ওমিক্রন, তা কেবল আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ধরা সম্ভব না। সেজন্য প্রয়োজন হয় জিন বিন্যাসের বিশ্লেষণ বা জিনোম সিকোয়েন্সিং।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে যে হারে রোগী বাড়তে তাতে সবার জন্য ওই পরীক্ষা করার চিন্তা বাস্তবসম্মত না।
এ পরিস্থিতিতে মেরিল্যান্ডের মত রাজ্য কোভিডের চিকিৎসা দিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে, যেখানে নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মোটাদাগে ৫৮ শতাংশই থাকছে ওমিক্রনের রোগী। আবার ক্যালিফোর্নিয়ার মত রাজ্যে এখনও প্রাধান্য বজায় রেখেছে ডেল্টা।
এই হিসাবটা করা হচ্ছে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কমিউনিটিভিত্তিক রোগীদের নমুনা থেকে পাওয়া ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করে সেখানে পাওয়া ওমিক্রনের রোগীদের সংখ্যার ভিত্তিতে ধরে।
আর স্বাস্থ্য বিভাগ ওই আঞ্চলিক ডেটা কিংবা নিজস্ব ডেটার ওপর নির্ভর করে ক্লিনিক ও হাসপাতালের এলাকাভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকে।
ডেল্টায় সংক্রমিতদের ক্ষেত্রে রিজেনেরন ও এলি লিলির তৈরি করা দুটি অ্যান্টিবডি থেরাপি বেশ কাজে দিচ্ছে। অন্যদিকে ওমিক্রনের রোগীদের ক্ষেত্রে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন ও ভির বায়োটেকনোলজির তৈরি করা আরেক ধরনের অ্যান্টিবডি থেরাপি ভালো ফল দেখিয়েছে।
রিপাবলিকান নেতারা ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হলেন, তারা বললেন, এখনো ডেল্টার ছোবল তাদের এলাকায় আছে।
এরপর মঙ্গলবার সিডিসি তাদের হালনাগাদ তথ্যে জানাল, আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনে সংক্রমিতের হার ৫৯ শতাংশ। অবশ্য তার আগে গত ৩১ ডিসেম্বেই ফের ডেল্টার ওষুধ সরবরাহ শুরু হয়েছিল।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিজের সহকারী পরিচালক ড. অ্যালেক্স গ্রেনিঞ্জার বলেন, যেহেতু দুই ভ্যারিয়েন্টই সক্রিয়, সেহেতু আগামী কয়েক সপ্তাহ রোগীদের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে খুবই কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যারা করোনাভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, ড. গ্রেনিঞ্জার তাদের একজন। কিন্তু কোন রোগী ডেল্টায় আক্রান্ত আর কে ওমিক্রনে সংক্রমিত, তা বোঝার সহজ কোনো পদ্ধতি পাওয়ার বিষয়ে তিনিও আশাবাদী নন।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক সিডেনার বলেন, জিনোম-সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ভাইরাসের ধরন শনাক্ত করতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। ফলে হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে যখন চিকিৎসা শুরু করা দরকার, সেই সময়ের মধ্যে জানা যায় না ওই ভাইরাস ডেল্টা না ওমিক্রন। ফলে প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।