কোভিড: এক দিনে শনাক্ত বেড়ে সাড়ে ছয়শ ছাড়াল

দেশে ফের সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয়শ ছাড়িয়ে গেছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার আবার ৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে তিন মাস পর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 11:16 AM
Updated : 3 Jan 2022, 12:32 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬৭৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে চার জনের।  

এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর, সেদিন ৭০৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছিল।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৪০ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ; সোমবার তা বেড়ে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে।

এর বেশি শনাক্তের হার সর্বশেষ ছিল গত ২ অক্টোবর; সেদিন প্রতি ১০০ পরীক্ষায় ৩ দশমিক ৪১ জনের কোভিড পজিটিভ এসেছিল।

এরপর এত দিন ধরে শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচেই ছিল। এক সময় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ২১৪ জন। তাদের নিয়ে মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭১ জন এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন।

গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের শনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুরো বিশ্বেই আবার সংক্রমণ বাড়ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ১০৬টি দেশে পৌঁছে গেছে ওমিক্রন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এ ধরনটিরই প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে এখন।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিদেশফেরত সাতজনের মধ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণের তথ্য দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। তবে কেবল বিদেশ প্রত্যাগতদের ক্ষেত্রে নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে দেশের ভেতরে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৩ হাজার ২১৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ১৭০ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ।

আর ওই সাত দিনে মারা গেছেন আরও ১৭ জন, আগের সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।

এই ১৭ জনের মধ্যে ১০ জনেরই কোনো না কোনো ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। তাদের ৮০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ৭০ শতাংশই কোভিড টিকা নেননি।

রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার তথ্য এসেছিল, মৃত্যু হয়েছিল ১ জনের। সেই হিসেবে তার পরের ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী বেড়েছে ১১৭ জন, মৃত্যুও বেড়েছে।   

কেবল ঢাকা জেলাতেই ৫৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৮৪ শতাংশের বেশি। দেশের ২৮ জেলায় নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।

গত একদিনে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে দুজন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা; একজন রাজশাহীর এবং একজন খুলনা বিভাগের ।

তাদের মধ্যে তিনজন নারী, একজন পুরুষ। সবার বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। একজন সরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ১৯ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮১২টি নমুনা।

এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। এ বছর ৩১ অগাস্ট তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২৯ কোটি ২ লাখের বেশি রোগী।