ফাইজারের কোভিড পিলও বাংলাদেশে মিলবে ‘কম দামে’

ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক পিল ‘প্যাক্সলোভিড’ বাংলাদেশসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের ৯৫টি দেশে সরবরাহ করতে পারবে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2021, 01:44 PM
Updated : 16 Nov 2021, 02:35 PM

আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য গোষ্ঠী মেডিসিন্স প্যাটেন্ট পুলের (এমপিপি) সঙ্গে লাইসেন্স ভাগাভাগির আওতায় দ্বিতীয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। 

স্বেচ্ছায় লাইসেন্সিং ভাগাভাগির যে চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় জাতিসংঘ সমর্থিত এমপিপি ফাইজারের পিএফ-০৭৩২১৩৩২ ওষুধটির নিজস্ব সংস্করণ তৈরিতে যোগ্য জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের ‘সাব-লাইসেন্স’ দিতে পারবে।

‘প্যাক্সলোভিড’ ব্র্যান্ড নামে পিলটি প্রস্তুতকারকদের কাছে বিক্রি করবে ফাইজার। 

এই ৯৫টি দেশের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ওষুধটি বিক্রিতে রয়্যালটি নেবে না ফাইজার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বেশ কম দামে ওষুধটি মিলতে পারে। 

চুক্তির আওতায় অন্য দেশগুলোও ততদিন রয়্যালটি ছাড় পাবে, কোভিড যতদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ঘোষণা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি’ পরিস্থিতি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত থাকবে।

কোভিড-১৯ টিকার অন্যতম শীর্ষ প্রস্তুতকারক ফাইজার বলছে, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তার এই পিল মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়ষ্ক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর সুযোগ ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে।

এইচআইভির জেনেরিক ওষুধ রিটোনাভিরের সঙ্গে যুক্ত করে ওষুধটি কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে।

ফাইজারের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী মার্ক অ্যান্ড কো. একই প্রক্রিয়ায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জেনেরিক ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’ তৈরির লাইসেন্স দিয়েছে। ওষুধটি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি তৈরি করে বাজারেও এনেছে।

কোভিডের কার্যকর চিকিৎসার হাপিত্যেশের পাশাপাশি খুবই কম দামে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে প্রস্তুতকারকদের উপর চাপ রয়েছে বলে লাইসেন্স ভাগাভাগির এই ‘অস্বাভাবিক’ উপায় বের করা হয়েছে।

এমএমপির নির্বাহী পরিচালক চার্লস গোর বলেন, “কোভিড-১৯ এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষের প্রতিরক্ষায় আমাদের অস্ত্রভাণ্ডারে নতুন আরেকটি অস্ত্র যোগ হলো বলে আমার খুবই আনন্দিত।”

কয়েক মাসের মধ্যে ফাইজারের ওষুধটির জেনেরিক সংস্করণ বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন গোর।

লাইসেন্স চুক্তির আওতায় থাকা এই ৯৫টি দেশে বিশ্বের প্রায় ৫৩ শতাংশ মানুষের বাস। এর মধ্যে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ ও সাব-সাহারা আফ্রিকার উচ্চ-মধ্যম-আয়ের দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত।

এর বাইরে গত পাঁচ বছরে নিম্ন-মধ্যম থেকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোও এর আওতায় পড়বে বলে ফাইজার ও এমএমপি বলেছে।

ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বৌরলা এক বিবৃতিতে বলেন, “কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়াবহতা কমাতে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

কে কোথায় বাস করেন এবং তাদের পরিস্থিতি কি তা বিবেচনা না করে এই উদ্ভাবনের সুযোগ যাতে পৃথিবীর সব মানুষ পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করার উপর জোর দেন তিনি।

ফাইজার বলছে, প্রতিটি দেশের আয়ের ভিত্তিতে স্তরায়িত দর নির্ধারণী পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা ওষুধটি বিক্রি করবে। যুক্তরাষ্ট্রে এর একটি কোর্সের দাম মার্কের মতোই প্রায় ৭০০ ডলার নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।

প্রায় ১০০টির বেশি দেশে কোভিড-১৯ পিল মলনুপিরাভির সরবরাহে এর আগে চুক্তি করেছে মার্ক। তারপরও ব্যাপক সংখ্যায় নিম্ন ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোতে অনেকের কাছে ওষুধটি পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।