মহামারীর ১৬ মাসে ভয়ঙ্কর ৮ দিন

বাংলাদেশকে এত কম সময়ে এত বেশি মৃত্যু আর কখনও দেখতে হয়নি মহামারীর ১৬ মাসে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2021, 06:40 PM
Updated : 4 July 2021, 06:43 PM

২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই, এই আট দিনে করোনাভাইরাসে মোট ১০১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হাজারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে রোববার।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ২৬ জুন দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার অতিক্রম করে। সেই তালিকায় নতুন এক হাজার নাম যোগ হতে সময় লেগেছে মাত্র আট দিন।

এর আগে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত এপ্রিলে ১০ দিনে ১ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এতদিন সেটাই ছিল সবচেয়ে কম সময়ে হাজার মৃত্যু।

মার্চের মাঝামাঝি থেকে মের মাঝামাঝি ওই নাজুক সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সব রেকর্ড নতুন করে লিখতে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। তবে মধ্য মে পার করে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার ৬ শতাংশে নেমে আসায় অনেকে আশা দেখতে শুরু করেছিলেন, ভেবেছিলেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশ হয়ত পেরিয়ে এসেছে।

কিন্তু এ ভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন জুনের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার নিয়ে যায় ১৫ শতাংশের উপরে। আর রোববার তা প্রায় ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে। 

 

ভয়ঙ্কর এই আট দিনের প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে। গত এপ্রিলের রেকর্ড ২৭ জুলাই ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১ জুলাই সেই রেকর্ড ভেঙে ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর আসে। আর রোববার ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় সরকারের বুলেটিনে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

হাজার মৃত্যুর এই আট দিনে সব মিলিয়ে ৬১ হাজার ৭৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। এত কম সময়ে এত বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি মহামারী শুরুর পর। 

এই আট দিনের মধ্যে পাঁচ দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজারের বেশি। তার মধ্যে ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গত সোমবার থেকে কঠোর বিধি-নিষেধে দেশ অচল রেখে সংক্রমণ রোখার পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে সরকারকে। রাস্তায় বের হয়ে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় প্রতিদিনই গ্রেপ্তার হচ্ছে কয়েকশ মানুষ।

 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা।

এরপর কমে আসে দৈনিক মৃত্যু। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটলে গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

এর পরের এক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাতে মাত্র দশ দিন সময় নেয় করোনাভাইরাস; মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৫ এপ্রিল। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা একশর উপরে ছিল। 

এরপর ১৬ দিনে আরও এক হাজার মৃত্যুতে ১১ মে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

মে মাসের মাঝামাঝি পেরিয়ে মৃত্যুর গতি কিছুটা কমে। এক মাস পর ১১ জুন মোট মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়ায়।

কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে জুনের শুরু থেকেই দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছিল। ১৫ দিনেই হাজার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ২৬ জুন মোট মৃত্যু পেরিয়ে যায় ১৪ হাজার। পরের আট দিনে তা ১৫ হাজার হয়ে গেল।  

 

দেশে এ পর্যন্ত যে ১৫ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৬ জন। নারী ৪ হাজার ৩৮৯ জন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৭০.৮৭ শতাংশ, নারী ২৯.১৯ শতাংশ।

 

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃতদের ৫৬ শতাংশই ষাটোধ্বর্ব, ২৪ শতাংশের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ২০ বছরের নিচে বয়সীদের মৃত্যুর হার ২ শতাংশের কম।

 

এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ পর্যন্ত মারা যাওয় কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।  স্পষ্ট করলে, ৩৭ শতাংশ ছিলেন ঢাকা জেলার বাসিন্দা। আর সবচেয়ে কম মৃত্যু ময়মনসিংহ বিভাগে।

ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ৭২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ৮১৫, রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ১১২, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৪৩৬, বরিশাল বিভাগে ৪৩৯, সিলেট বিভাগে ৫৩৯, রংপুর বিভাগে ৬৫৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩৯ জন মারা গেছেন মহামারীতে।