করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ২৬ জুন দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার অতিক্রম করে। সেই তালিকায় নতুন এক হাজার নাম যোগ হতে সময় লাগল মাত্র আট দিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৫৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৬৫ জনে।
গতবছর মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এরচেয়ে বেশি মৃত্যু আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।
দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম দিন ১৪৩ জনের রেকর্ড মৃত্যর খবর আসে। কিন্তু সেই রেকর্ড তিন দিনও টিকল না।
মাঝে এক দিন কম থাকলেও দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও সাড়ে আট হাজারের ঘর ছাড়িয়েছে। গত এক দিনে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৬১ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জনে।
কেবল ঢাকা বিভাগেই গত এক দিনে ৪২০৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। খুলনা বিভাগেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
আর যে ১৫৩ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫১ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকায় মারা গেছেন ৪৬ জন।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৪ হাজার ৬৯৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনে রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার তা ১৫ হাজার ছাড়াল। একই দিনে রেকর্ড ১৫৩ মৃত্যুর খবর এল।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ। রাস্তায় বের হয়ে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে কয়েকশ মানুষ।
লকডাউনের মধ্যে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা কমেছে। লকডাউন শুরুর আগে যেখানে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছিল, শনিবার হয়েছে ৩০ হাজারের কম। কিন্তু এক দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ২৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২২ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনায় মারা যাওয়া ৫১ জনের মধ্যে ১২ জনই ছিলেন খুলনা জেলার বাসিন্দা।
এছাড়া চট্গ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
এই ১৫৩ জনের মধ্যে ৭০ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাদের ৯৬ জন ছিলেন পুরুষ, ৫৭ জন ছিলেন নারী। ১১৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৯ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয় ৩ জনকে।
ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ২৯৪৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগে রাজবাড়ীতে ২৬০ জন, টাঙ্গাইলে ১৯৫ জন, গাজীপুরে ১২৯ জন, ফরিদপুরে ১১৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১১২ জন এবং মাদারীপুরে ১০৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৯৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯২ জন, বাগেরহাটে ১৫৩ জন, খুলনায় ১৫০ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৪০ জন, সাতক্ষীরায় ১২৫ জন, ঝিনাইদহে ১১৩ জন এবং নড়াইলে ১২১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৬৯ জন, বগুড়ায় ১৯৪ জন, নাটোরে ১৭৬ ও পাবনায় ১৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩২ জন, দিনাজপুরে ১০৭ জন; চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় ৩৬৯ জন, কুমিল্লায় ১৪১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১৮৪ জন, সিলেট জেলায় ১৬৮ জন এবং বরিশাল জেলায় ১২১ জন নতুন রোগী ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৩টি ল্যাবে ২৯ হাজার ৮৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৫৬০টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ যা আগের দিন ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।