মৃতদের ২০ জনই পুরান ঢাকার, আক্রান্ত দেড় শতাধিক

বাংলাদেশ নভেল করোনাভাইরাসে যে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জনই পুরান ঢাকার বাসিন্দা।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 04:26 PM
Updated : 17 April 2020, 04:26 PM

রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন দেশড়’র বেশি মানুষ। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ‘লকড-ডাউন’ করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক ভবন।

পুরান ঢাকার ১০টি থানা এলাকার মধ্যে যে শ্যামপুরে গত সপ্তাহেও কোনো কোভিড-১৯ রোগী ছিল না, সেখানে গত দুই দিনে ১০ জন শনাক্ত হয়েছেন।

সব মিলিয়ে মোট ১৬২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন ১০ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

তাদের দেওয়া তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চকবাজারে ২৭ জন। আর ওয়ারি ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় শনাক্ত হয়েছে ২৫ জন করে। এরপরে রয়েছে বংশাল থানায় ১৯ জন এবং লালবাগে ১৫ জন।

মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে চকবাজারের চারজন। এছাড়া  কোতোয়ালি, বংশাল ও সূত্রাপুরে তিনজন করে, ওয়ারি, লালবাগ ও গেন্ডারিয়ায় দুইজন করে এবং কামরাঙ্গীরচরে একজন। শ্যামপুর ও হাজারীবাগে ২২  আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যাননি।

শুক্রাবারও পুরান ঢাকায় বেশ কয়েকজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার হরনাথ ঘোষ লেন ও অরফানেজ রোডে পাঁচজন শনাক্ত হয়েছেন। এই থানা এলাকায় এ পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় আড়াইশ ভবন ‘লকড-ডাউন’ করা হয়েছে।

আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকার মানুষদের সচেতনতা কম দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজন- অপ্রয়োজনে যখন তখন বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে মানুষ।”

কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, নভেল করোনাভাইরাসে মোট ২৫ জন আক্রান্ত হলেও তাদের ২০ জনই শাঁখারিবাজার এলাকার।

কয়েক দিন আগে শাঁখারিবাজারের একটি ভবনের তিন তলায় একটি মরদেহ কয়েক ঘণ্টা ধরে পড়ে ছিল, সেই উত্তম ধর এবং তার তিন দিন আগে মারা যাওয়া তার স্ত্রী কল্পনা ধর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

“তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”

সুব্রত সুর নামে ওই এলাকার একজন বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরান ঢাকা ঘনবসতি, কিন্তু আমাদের শাঁখারিবাজার অনেক বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে একটি ফ্ল্যাটে একটির বেশি দুটি টয়লেট নেই।

“উত্তম ধর ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। কিন্তু তারা যদি তথ্য গোপন না করতেন তাহলে এই অবস্থার সৃষ্টি হত না।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে যাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের অনেককে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাসায় থাকার মতো এসব রোগীদের অবস্থা নেই। ফলে আমাদের শাঁখারিবাজারে সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে।”

বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন পর্যন্ত এই থানা এলাকায় ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে শতাধিক ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

ওয়ারি থানা এলাকায় ২৫ জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এবং তাদের মধ্যে দু্জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ওসি আজিজুল হক জানিয়েছেন।

হাজারীবাগ থানা এলাকায়ও ১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন ওসি ইকরাম আলী মিয়া।

তিনি বলেন, “এখানে এখনও কারও মৃত্যু হয়নি। এলাকার অন্তত ১২টি বাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়েছে।”

সূত্রাপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, তার থানায় এলাকায় ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

গেন্ডারিয়া থানার ওসি মো. সাজু মিয়া জানান, এই এলাকায় ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন দুইজন।

লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আসলাম উদ্দিন বলেন, ১৫ জনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। তাদের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি এলাকা আগেই থেকেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

ঘনবসতিপূর্ণ কামরাঙ্গীরচরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে চারজন, আর একজন মারা গেছেন বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা আনোয়ার জানিয়েছেন।

শ্যামপুর থানার ওসি মফিজুল আলম বলেন, এতদিন তার থানা এলাকা ‘ভালো ছিল’। তবে গত দুই দিনে ১০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ১০টি এলাকা ‘লকড ডাউন’ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৬৬ জনের মধ্যে নভেল ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩৮ জনে।

এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৫ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৫৮ জন।