সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে দ্রুত পরীক্ষায় গুরুত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ কোন পর্যায়ে ছড়িয়েছে, তার প্রকৃত অবস্থা বুঝতে দ্রুত যত বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 01:06 PM
Updated : 4 April 2020, 02:56 PM

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসে একথা বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, “আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বেশি নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে আমরা এখনও প্রকৃত পরিস্থিতিটা বুঝছি না। তাই আমরা যত বেশি সংখ্যক নমুনা পাব, তা দ্রুত পরীক্ষা করব।

“মাদারীপুরের শিবচরে এক জায়গায় মোট ১০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। সেটা কিন্তু একটা ক্লাস্টার। কিন্তু এ ধরনের ক্লাস্টার বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন পর্যন্ত তেমন পাই নাই। তাই যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করব, আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারব, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কোন পর্যায়ে রয়েছে।”

এদিন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে নয়জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের দুইজন বিদেশফেরত, পাঁচজন বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে এসেছেন। আর বাকি দুজনের কন্টাক্ট ট্রেসিং বা তাদের রোগের উৎস এখনও স্পষ্ট নয়।

চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুই মাসের বেশি সময় পর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর।

শুরুতে শুধু আইইডিসিআরেই এই রোগ শনাক্তের পরীক্ষা চলছিল। তাতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য চালু করা হটলাইনে ফোন করেও অনেকে পরীক্ষা করাতে না পারার অভিযোগ করেন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৬ মার্চ আক্রান্ত দেশগুলোকে সন্দেহভাজন প্রতিটি রোগীকে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিল।

পরে বাংলাদেশে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ঢাকায় আইইডিসিআর ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, আইপিএইচ, আইসিডিডিআর,বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইদেশীতে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ পরীক্ষা।

এছাড়াও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কোভিড-১৯ পরীক্ষা চলছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এপ্রিলের মধ্যেই সারা দেশের ২৮টি স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা হবে।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা করতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ার কথা স্বীকার করে নেন মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “এখন সারা বাংলাদেশের উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করছি। সেই নমুনাগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে আসে পরীক্ষার জন্য। সে সমস্ত তথ্য সারা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করতে আমাদের একটু সময় লেগে যাচ্ছে। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা কিন্তু বেশি না। প্রত্যেকটি উপজেলা বা জেলায় তো আর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা যাবে না।”

ধীরে ধীরে নমুনা সংগ্রহের সংখ্যাও বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৭০ জন রোগীর মধ্যে কত জনের কন্টাক্ট ট্রেসিং হয়েছে সে প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা সকলের কন্টাক্ট ট্রেসিং করেছি। যখনই একটা টেস্ট পজিটিভ হয়, তখন রেজাল্ট পাবলিশ করার আগেই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ শুরু করি।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ নিয়ে তিনি বলেন, “যাদের আমরা শনাক্ত করেছি ইতোমধ্যে তারাই সোর্স অব ইনফেকশন। ধরা যাক, কেউ বিদেশ থেকে ফিরেছেন, তাদের এক বা একাধিক জনের মধ্যে আমরা ভাইরাসটি পেয়েছি। কাজেই ওনার সাথে সংস্পর্শে যিনি এসেছেন, তিনি পরবর্তীতে যদি পজিটিভ হন, তিনিও সোর্স অব ইনফেকশন। সোর্স অব ইনফেকশন তো এভাবেই বের করতে হবে। যে কয়জন আক্রান্ত তারাই সোর্স অব ইনফেকশন।

“যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যেমন মিরপুরের একটা ঘটনা- তারা নামাজ পড়তেন একসাথে, বাড়িতে যেতেন একসাথে, হাঁটাহাঁটি করতেন। কাজেই এটা তাদের পরিবারের সদস্য না, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতেন।  তাই এটাকে কমিউনিটি সংক্রমণ বলাই যায়।”

আবুল কালাম আজাদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে।

“সেখানে আমরা সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিৎ, সে বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করব।”

‘নিজ ভূমিকা পালন না করলে মুক্তি সহজ নয়’

নভেল করোনাভাইরাস যেন সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনগণকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। লকডাউনে জরুরি সেবা ব্যতীত সব ধরনের যান চলাচল ও বাইরের কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে।

ঘরের বাইরে এলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নানাভাবে বলা হলেও তা মানছেন না অনেকে।

তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা খেয়াল করে দেখেছি, সরকার যত ব্যবস্থাই নিক না কেন, মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার নিজ ভূমিকা যদি সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে করোনাভাইরাসের সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়।”

গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ৭২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জন রোগীকে হাসপাতালের আইসোলেশনে আনা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।