২৬ মার্চ জগন্নাথ হলে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যার ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষক নুরুল উলা।
Published : 27 Mar 2024, 05:27 PM
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে গণহত্যার ভিডিওচিত্র ধারণকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নূরুল উলার অবদানের স্বীকৃতির দাবি উঠেছে।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে মঙ্গলবার বুয়েটের কাউন্সিল ভবনে এক আলোচনা সভায় উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার এই দাবি তুলেছেন বলে বুধবার এ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জগন্নাথ হলের মাঠে দাঁড় করিয়ে ছাত্র শিক্ষকদেরকে গুলি করে হত্যার ভিডিওটি সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই ভিডিওটি আলোচনা সভার শুরুতে প্রদর্শন করা হয়।
স্বাধীনতা দিবসে ড. নূরুল উলার সাক্ষাৎকার সম্বলিত একটি লিফলেটও প্রকাশ করেছে বুয়েট।
উপাচার্য সত্য প্রসাদ বলেন, “নূরুল উলা স্যারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে আমাদের কিছু একটা করা উচিত। সেটা হতে পারে নূরুল উলা স্যার যে ল্যাবরেটরিতে কাজ করতেন, সেটা উনার নামে নামকরণ করা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবন উনার নামে নামকরণ করা কিংবা নূরুল উলা স্যারের নামে স্কলারশিপ চালু করা। সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো যেতে পারে।”
১৯৭১ সালে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন নূরুল উলা। তাকে বঙ্গবন্ধু একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেছিলেন জানিয়ে বুয়েট উপাচার্য বলেন, “নূরুল উলা মাত্র নয় দিনে গোটা বাংলাদেশ কাভার করে এমন একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিয়েছিলেন।"
বুয়েট যে কোনো কাজ করতে পারে জানিয়ে সত্য প্রসাদ বলেন, “আমরা যদি না পারতাম তাহলে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু নূরুল উলা স্যারকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলতেন না।
"আমাদের শক্তি আছে, বুদ্ধি আছে, মেধা আছে কাজেই আমাদের দক্ষতা, প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো উচিত। আমাদের মেধা দিয়ে যাতে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারি আজকের দিনে আমাদের এই প্রত্যয় হওয়া উচিত।”
উপাচার্য বলেন, “বঙ্গবন্ধু আমাদের বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষকদের ভালোবাসতেন। তিনি বুয়েটের প্রথম সমাবর্তনে এসেছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স করে দিয়েছিলেন। বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ছিল।”
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জব্বার খাঁন বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এত বর্ণাঢ্য ইতিহাস, আমাদের চর্চার অভাবে হারিয়ে যাবে, তা হতে পারে না “
তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য নিষ্ঠুরতা পরিহার করতে হবে, প্রতিশোধমূলক নিষ্ঠুরতা থেকে সরে আসতে হবে। ২০৪১ সালের যে বাংলাদেশ তার জন্য আমাদের ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান আছে। এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আমরা কীভাবে নিজেদের উপযুক্ত করব সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে কি না সেটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”
মুখ্য আলোচক স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেন, "নূরুল উলা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ভিডিও করেছেন সেটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বুয়েটের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এআই ব্যবহার করে এই ডকুমেন্টকে আরো আপডেট করা যেতে পারে। স্বাধীনতার এসব দলিলসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে অন্যথায় ইতিহাস বিকৃতি ঘটতে পারে।"
বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট, পরিদপ্তর ও দপ্তরের পরিচালক, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক, অফিস প্রধানগণ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।