ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না, অভিযোগ মিমের

“যেখানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, আমার অভিভাবক। তাকে আমার পাশে থাকার কথা, তিনি উল্টো আমার বিরুদ্ধে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রশ্রয় দিচ্ছেন,” বলেন মিম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 10:32 AM
Updated : 21 March 2024, 10:32 AM

যৌন হয়রানি ও পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ তোলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম বিভাগের চেয়ারম্যানের কারণে ‘ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না’ বলে অভিযোগ তুলেছেন।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নিচতলায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “তিনি (বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম) যেভাবে ডিবিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা অনুচিত। চেয়ারম্যানের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে আমার ন্যায়বিচার।

“যেখানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, আমার অভিভাবক। তাকে আমার পাশে থাকার কথা, তিনি উল্টো আমার বিরুদ্ধে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।”

সংবাদমাধ্যমে মীম যখন কথা বলছিলেন, সে সময় তার বাবাও সেখানে ছিলেন।

এই শিক্ষার্থী ‍বলেন, “এ ক্যাম্পাস আমার নিজের ঘরের মত। কিন্তু এখানেই আমি নিরাপদ নই। আমি ক্যাম্পাসে আসা অনেক কমিয়ে দিয়েছি। আপনারা দেখেছেন চেয়ারম্যান কীভাবে অভিযুক্ত শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতেছে। গতকাল (বুধবার) ডিবি প্রধান (গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ) আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, আমাকে কেউ আর হুমকি দেবে না। যদি কেউ আমাকে কোনোভাবে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমি যেন তাদেরকে জানাই।

“এরপর ডিবি প্রধানের কথায় আশ্বস্থ হয়ে আজ আমি ক্যাম্পাসে এসেছি। হুমকি-ধমকিও পাচ্ছি না। তবে আমি আমার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আর এখন থেকে আমিও অবন্তিকার বিচার চেয়ে আন্দোলনের সঙ্গে থাকব।”

এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনার মধেই কোর্স শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন মিম।

ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তার কোর্স শিক্ষক প্রভাষক আবু শাহেদ ইমন ২০২১ সালে অ্যাকাডেমিক কাজে তাকে নিজের কক্ষে ডেকে ‘যৌন হয়রানি’ করেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করায় বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম তাকে ‘ফেল করিয়ে দেন’।

মিমের অভিযোগ ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ দাবি করে প্রভাষক আবু শাহেদ ইমন এর আগে বলেন, “অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভূতিকে পুঁজি করে সে (মিম) গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে।”

আর মিমকে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলছিলেন, “মিম ক্লাসই করত না। যেখানে ৬০ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারে না, সেখানে মিম পরীক্ষা দিয়েছে। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নাই।”

দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শরণাপন্নও হয়েছেন মিম।

মঙ্গলবার বঙ্গভবনে জমা দেওয়া এক লিখিত আবেদনে ‘বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার’ চেয়েছেন এই শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে তার জীবনটাকে ‘পুনরুদ্ধার করার’ আকুল আর্জি জানিয়েছেন।

তার আগে মিম গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে গিয়েও ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার ডিবি কার্যালয়ে ওই ছাত্রী এবং দুই শিক্ষককে ডাকা হয়। তাদের বক্তব্য শোনেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ।

এ বিষয়ে মিমের বাবা কাজী আব্দুল কুদ্দুস বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিবি থেকে শিক্ষক ইমন এবং চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিমকে ডেকেছেন। তাদেরকে গুরুত্বের সাথে বলেছেন, আমাদের সাথে তারা যেন কোনোরূপ অন্যায় না করেন, ভয়ভীতি না দেখান।

“উপাচার্যের সাথেও কথা হলে তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উপাচার্য বলেছেন, আগে যা হয়েছে এবং এখন যা হচ্ছে এসব বিষয় তিনি দেখছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে মিমকে যেভাবে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে বলে তিনি আশ্বস্থ করেছেন। আমরা আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনের কাছ থেকে আমরা ন্যায় বিচার পাব।”

আরো পড়ুন-

Also Read: প্রতিকার চেয়ে রাষ্ট্রপতির দুয়ারে জগন্নাথ শিক্ষার্থী মিম