“গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে সংহত করা এই গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য,” বলেন গবেষক দলের প্রধান কাজী মারুফুল ইসলাম।
Published : 13 Jan 2025, 12:14 AM
রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে একটি গবেষণায় অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘রাজনীতিমুক্ত’ স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শাসন ও নীতি বিষয়ক গবেষণা দলটির এই গবেষণার তথ্য রোববার এক সেমিনারে তুলে ধরা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের ২ হাজার ৪০ শিক্ষার্থীর এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।
তাদের মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ৬৪ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। আর ছাত্রী ৯৭৬ জন বা ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতামত দেওয়া সবচেয়ে বেশি ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ২২ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। আর সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ১ শতাংশের বয়স ২৫ এর বেশি।
ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গবেষণাটি করা হয়েছে। সে সময় পুলিশ, জনপ্রসাশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ১১ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে আলাদা সেন্টার স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। ৮ শতাংশ পুলিশের জনবল বাড়ানোর কথা বলেছেন। ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে এর মাধ্যমে বাহিনীটির সব নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন। আর ৪২ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। আর পুলিশের বেতন ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুলিশের সেবা নিতে যাওয়াদের ১১ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন তারা কোনো সেবা পাননি। স্বাভাবিকভাবে সেবা পাওয়ার কথা বলেছেন ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, সেবা নিতে ঘুষ বা রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ ব্যবহারের কথা বলেছেন ৩১ দশমিক ২ শতাংশ।
৯ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সুপারিশে সেবা পেয়েছেন। সেবা পেলেও পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেছেন ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে, “পুলিশ কর্মকর্তারা মূলত শাসনক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাদের আদেশ বাস্তবায়ন ও ইচ্ছে পূরণে আগ্রহী। দায়হীন পুলিশ সরকারি দলের রাজনৈতিক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।”
‘রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায় না’, এমন মতও গবেষণায় উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন শাসন ও নীতি বিষয়ক গবেষক দলের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জুলাই আন্দোলনের প্রধানতম শক্তি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান মতামত ও সুপারিশ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করার জন্য এ গবেষণা।
“কাউকে ছোট করতে নয়, গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে সংহত করা এই গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য।”
মারুফুল ইসলাম বলেন, “জননিরাপত্তা বাড়াতে শিক্ষার্থীরা সেবার মান বাড়ানোর মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্কের উন্নয়ন, আইন যুগোপযোগী করা ও জনসম্পৃক্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।”
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং।
সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
পুরোনো খবর: