পর্যটনের বিকাশে কর ও শুল্ক ছাড় চান ব্যবসায়ীরা

বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে ভিসা সহজ করা, বিমান ভাড়ায় বিশেষ সুবিধা দেওয়া, পর্যটন শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2024, 10:32 AM
Updated : 29 Feb 2024, 10:32 AM

দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে ট্যুর অপারেটরদের ওপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং আবাসিক হোটেলের ওপর আরোপিত ভ্যাটের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

সেইসঙ্গে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে ভিসা সহজ করা, বিমান ভাড়ায় বিশেষ সুবিধা দেওয়া, পর্যটন শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড় এবং সরকারি রিক্যুইজিশনের নামে পর্যটনের ব্যবসায়ীদের ‘হয়রানি বন্ধের’ দাবি জানিয়েছে তারা।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে ট্যুর, ট্র্যাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয় বলে বৃহস্পতিবার সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “পর্যটন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। আমাদের জিডিপিতে এই খাতের অবদান মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। একে অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পর্যটন খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।”

পর্যটন খাতের সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আহ্বান করেন তিনি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে পর্যটনবান্ধব নীতিমালা উন্নয়নে এফবিসিসিআই কাজ করবে বলে জানান মাহবুবুল আলম।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, “পর্যটন গোটা অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে। সরকার ও বেসরকারি খাত সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই শিল্পকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিবে সেই কর্মপরিকল্পনা জরুরি।”

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল অংশীজনের মতামতের প্রতিফলন যাতে তেমন একটি সুপারিশমালা করে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পর্যটন খাতে ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের কথা তুলে ধরে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন বলেন, “ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর টয়লেট ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা উন্নত করা জরুরি। এটা একজন টুরিস্টের মৌলিক প্রয়োজনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। স্পটের নিকটবর্তী টয়লেট ব্যবস্থা উন্নত না করা গেলে টুরিস্টরা সেখানে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। পাশাপাশি পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বিষয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সমস্বরে কথা বলা উচিত।”

স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জন্য পর্যটন শিল্প হতে পারে তৈরি পোশাকের পরে অন্যতম বৃহৎ খাত।

বৈশ্বিক পর্যটকদের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে দেশের পর্যটন পণ্য ও সেবা উন্নয়নসহ ‘এক জেলা এক পণ্য’ ভিত্তিতে কৌশল গ্রহণের পরামর্শ তার।

কমিটির চেয়ারম্যান এবং ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াব) সদ্য সাবেক সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, “সুযোগ পেলেই আমাদের দেশের পর্যটন সেবার মানকে ভারত, ভূটান ও শ্রীলঙ্কার পর্যটন সেবার সঙ্গে তুলনা করা হয়। অথচ পর্যটন উন্নয়নে তারা যেসব নীতি সহায়তা পাচ্ছে, আমরা সেরকম পাচ্ছি না।

“উল্টো পর্যটন মৌসুমে সরকারি রিক্যুইজিশন নামে আমাদের হোটেল ও রিসোর্টের রুম, বোট-হাউজ এবং অন্যান্য সেবা অনেকটা জোরপূর্বক দখল করে রাখা হচ্ছে। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।”

বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জটিলতা কমানোর আহ্বান জানান টোয়াবের সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি ব্লগারদের দেশে এনে ঘুরে দেখানো, হাই-কমিশনে নিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সেলরদের কাজে লাগানোরও পরামর্শ দেন তিনি।

পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে ‘বিটুবি’ সেশন আয়োজনের পরামর্শ দেন কোরেশী।

বিদেশি পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর প্রয়োজনে ‘ইন-বাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের’ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে প্রবেশের সীমাবদ্ধতা দূর করার আহ্বান জানানো হয় বৈঠক থেকে।