অস্তিত্বহীন বা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণে নির্দেশনা এল।
Published : 25 May 2023, 01:06 AM
শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সবশেষ বাজারমূল্য কেনা দামের চেয়ে কম হলে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংককে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত- দুই ক্ষেত্রেই বিনিয়োগে এ নির্দেশনা মানতে হবে বলে বুধবার পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়, “সরকারি সিকিউরিটিজ বাদে অন্যান্য সিকিউরিটিজ (তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, পার্পেচুয়াল ইন্সট্রুমেন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড, ফান্ড/তালিকাভুক্ত কোন তহবিল ইত্যাদির সর্বশেষ বাজারমূল্য (ট্রেডেড প্রাইস) ক্রয়মূল্য অপেক্ষা কম হলে ক্রয়মূল্য ও সর্বশেষ বাজারমূল্যের পার্থক্যকে বিনিয়োগের মূল্য হ্রাসজনিত ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করে তার সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।’’
তালিকাভুক্ত ইক্যুইটি শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, পার্পেচুয়াল ইন্সট্রুমেন্ট ও মিউচুয়াল ফান্ড/তালিকাভুক্ত কোনো তহবিলের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে গেইন/লস নেট অফ করে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
আবার অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইক্যুইটি শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিটির নিট সম্পদ মূল্য (সম্পদ থেকে দায় বাদ দেওয়ার পর) কমে গেলে হ্রাসকৃত মূল্যের সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
অর্থাৎ কোনো ব্যাংক যদি কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পর তার নিট সম্পদ মূল্য কমে যায়, কমে যাওয়ার সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রভিশন আকারে সংরক্ষণ করতে হবে।
কোম্পানির অস্তিত্ব না থাকলে শতভাগ প্রভিশন
বিনিয়োগ করা কোম্পানির অস্তিত্ব যদি না থাকে বা কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে বা দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা না গেলে বিনিয়োগের সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
এর মানে হচ্ছে, এমন ক্ষেত্রে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০০ টাকা প্রভিশন আকারে সংরক্ষণ করতে হবে।
নন-কনভার্টেবল কমিউল্যাটিভ প্রিফারেন্স শেয়ারের ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকের প্রাপ্য নির্ধারিত সুদ/মুনাফা/নগদ ডিভিডেন্ড পাওয়া না গেলে প্রথম বছর শেষে আসল পরিমাণের উপর ২৫ (পঁচিশ) শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ এবং একটানা তিন বছর সুদ/মুনাফা/নগদ ডিভিডেন্ড অপরিশোধিত থাকলে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
নন-কনভার্টেবল বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক সুদ/মুনাফা/কুপন-পেমেন্ট না পেলে প্রথম বছরের জন্য আসলের ২৫ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
দ্বিতীয় বছরের জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ এবং একটানা তিন বছর অপরিশোধিত থাকলে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। তবে অনাদায়ী বেমেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বিবেচ্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের সারেন্ডার প্রাইস গড় ক্রয়মূল্য অপেক্ষা কম হলে, গড় ক্রয় মূল্য ও সারেন্ডার প্রাইসের পার্থক্যের সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
আগে সুদ-আসল মিলিয়ে প্রভিশন সংরক্ষণ হিসাব করার বিধান ছিল। নতুন নির্দেশনায় শুধু আসলের বিপরীতে প্রভিশন হিসাব করায় প্রভিশন সংরক্ষণের হার কিছুটা কমে আসবে।
অনাদায়ী সুদ পৃথক হিসাবে রেখে আদায় সাপেক্ষে ব্যাংকের আয় খাতে যোগ করা যাবে। প্রভিশন সংরক্ষণের তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিক শেষ পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
গত বছরের এপ্রিলে ব্যাংক খাতের ‘অন্যান্য’ সম্পদের শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন সংরক্ষণ করার নিদের্শনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ।
তার আলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ‘অন্যান্য’ সম্পদে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশন রাখার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ-সাইট সুপার ভিশন বিভাগ নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ করতে বলেছে।
যেকোনো ব্যাংকের মুনাফা থেকে অর্থ কেটে রেখে প্রভিশন সংরক্ষণ করে পৃথক একটি হিসাবে তা রাখতে হয়। ফলে সেই পরিমাণ আয় নিট মুনাফায় দেখাতে পারে না ব্যাংক। কোনো ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ বেড়ে গেলে তার নিট আয় কমে যায়।