“বড় কোম্পানিগুলো যদি মুড়ি, চানাচুর উৎপাদন করে, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কীভাবে টিকবে,” বলেন তিনি।
Published : 18 Feb 2024, 09:03 PM
দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ‘কেড়ে নিচ্ছে’ মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম।
তিনি বলেছেন, “বড় কোম্পানিগুলো যদি মুড়ি, চানাচুর উৎপাদন করে, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কীভাবে টিকবে?”
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় রহমাতুল মুনিমের এ মন্তব্য আসে।
বেশ কয়েক বছর ধরে টানা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার পরও দেশে এসএমই খাতের কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “এসএমইকে ওঠাতে পারছি না। বড় প্লেয়াররা এসএমইকে খেয়ে ফেলছে। এসএমইর ভবিষ্যত খুব অন্ধকার।”
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে চেয়ারম্যান বলেন, “এটা নিয়ে ভালো করে কাজ করা দরকার। সমস্যাটা কোথায়? কোথায় কাজ করতে হবে, এটা নিয়ে আরও গভীরে দেখা দরকার।
“কেনো এসএমই ফ্লারিশ করছে না। এনবিআরের তরফ থেকে নানা কিছু করে দিলাম, তারপরেও কেনো ভালো করছে না সেটা দেখা দরকার।”
তামাকে আরো কর চায় অর্থনীতি সমিতি
দেশের যুব সমাজকে তামাক থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সিগারেটের ওপর নতুন করে ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
অর্থনীতি সমিতি মনে করে, দেশের যুব সমাজকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব দূরে রাখতে প্রতিবছরই বিড়ি, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ সকল তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে শুল্ক বাড়ানো উচিত।
পাশাপাশি এই হারে শুল্ক বাড়ানো হলে শুধুমাত্র এ খাত থেকেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত কর আদায় সম্ভব বলেও সমিতি মনে করে।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম প্রাক বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব ধরনের সিগারেটের ওপর ৭০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ালে সিগারেটের দাম বাড়বে ১৩০ শতাংশ। এতে অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে।
“এর ফলে প্রায় ৭০ লাখ ধূমপায়ী সিগারেট ছেড়ে দেবে এবং প্রায় ৭১ লাখ তরুষ ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকবে এবং ৬০ লাখ লোকের অকালমৃত্যু রোধ করা যাবে।”
একইভাবে বিড়ির ক্ষেত্রে প্রতি ২৫ শলাকার প্যাকেটে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হলে নতুন করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বাড়বে বলে হিসাব দেখাচ্ছে অর্থনীতি সমিতি।
আইনুল ইসলাম দাবি করেন, বিড়ির ওপর ওই অতিরিক্ত কর বসানো হলে প্রায় ৩৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ি সেবনকারী বিড়ি ছেড়ে দেবেন। প্রায় ২৫ লাখ লোক অকালমৃত্যু রোধ সম্ভব হবে।
এছাড়া জর্দা, গুল, সাদাপাতা-আলাপাতাসহ সবধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর ৭০ শতাংশ হারে কর আরোপ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই হারে ভ্যাট বাড়ানো হলে এ খাত থেকেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ বাড়বে।
কালো ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার, সম্পদ কর এবং অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর বসিয়েও রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্থনীতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
এসব খাতসহ মোট ২৭টি নতুন খাতের ওপর নতুন করে কর বসিয়ে আগামী বাজেটে অর্থ যোগানের পাশাপাশি বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
আরো যা যা প্রস্তাব
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এদিন এসএমই ফাউন্ডেশন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি, ইংল্যান্ড ভিত্তিক করনিরীক্ষা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি, এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে।
‘এসএমএসি এসএমএসি অ্যাডভাইজেরি সার্ভিসেস লিমিটেড’ এর পরিচালক স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, “কর আদায় ব্যবস্থা যত সহজ করা হবে রাজস্ব আদায় তত বাড়বে। সাধারণ মানুষ যেন কর প্রদান ব্যবস্থাকে কঠিন কিছু মনে না করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী ও করদাতাদের কর প্রদানের প্রমাণপত্র বা কর সার্টিফিকেট প্রদান সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে। যেমন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলোতে গেলেও যেন করদাতা কর প্রদান প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে পারেন।”
এই সেবা চালু করা হলে আয়কর আদায় ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন স্নেহাশিস বড়ুয়া।
তিনি বলেন, জমি নিবন্ধনের ওপর কর হার কমিয়ে জমির মৌজা মূল্য বাস্তবসম্মত করা উচিত। তাহলে দেশে কালো টাকা কমবে, আবার এই খাত থেকে কর আদায়ও ‘ব্যাপকভাবে’ বেড়ে যাবে।
দেশে এসএমই শিল্পের বিকাশে এ খাতের পশ্চাদ-শিল্পের জন্য একটি পৃথক ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, এসএমই খাতের জন্য বিশেষ কর সুবিধা দিলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ ছোট ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরুষের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং মহিলা উদ্যোক্তার জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেন।
এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করযোগ্য আয়ের ওপর রেয়াত ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি।
সরকারি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ সীমা ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা এবং রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত নগদ ভর্তুকির উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।