পশ্চিমের বাজার নিয়ে ‘শঙ্কায়’ বিজিএমইএ

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও মন্দায় আগামী মৌসুমের কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে বলে জানান তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2022, 03:47 PM
Updated : 10 Sept 2022, 03:47 PM

পশ্চিমা বিশ্বে আসন্ন মন্দার হাতছানিতে দেশের প্রধান রপ্তানিখাত পোশাক শিল্পের চলমান উচ্চ প্রবৃদ্ধি আগামী দুই এক মাসের মধ্যে নেতিবাচক দিকে রূপ নেওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

শনিবার ঢাকার উত্তরায় পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনটির নির্মাণাধীন কমপ্লেক্সে মিট দ্য প্রেসে লিখিত বক্তব্যে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আগামী ১২ থেকে ১৮ নভেম্বর ঢাকায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ শিরোনামের বহুমাত্রিক এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত মে মাসেও পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় এ আয়োজন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিল বিজিএমইএ।

এদিন সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ফারুক হাসান বলেন, গত বছরের অগাস্ট থেকে চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত পোশাক রপ্তানিতে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে কারণে গত অর্থবছরে এ শিল্পখাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-অগাস্টে প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। কিন্তু এই দুই মাসে ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে।

অন্যতম রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার কারণে আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। এসব বিবেচনা করে আগামী মাসগুলোতে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।“

এ আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি পোশাক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্বে তুলে ধরতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিংয়ের বৈশ্বিক ধারনা পরিবর্তন করার কথা তুলে ধরেন।

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে টেকসই ও উদ্ভাবনমূলক শিল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

আগামী ১২ থেকে ১৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান অতিথি হিসেবে সপ্তাহব্যাপী এ ইভেন্টের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

যা থাকছে

৩৭তম আইএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন, তৃতীয় ঢাকা অ্যাপারেল সামিট, ঢাকা অ্যাপারেল এক্সপোজিশন, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো, প্রতিযোগিতাভিত্তিক অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম (যেমন সাসটেইনেবল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, সাসটেইনেবল ফ্যাশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড, মেইড ইন বাংলাদেশ উইক ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড, এনআরবি অ্যাওয়ার্ড) দিয়ে সাজানো হয়েছে সম্মেলন ও প্রদর্শনীর পরিধি।

এর বাইরে বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারের উদ্বোধন এবং বিইউএফটিতে দিনব্যাপী বিশেষ কর্মশালা থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইভেন্টের বিভিন্ন আয়োজনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন ফারুক হাসান।

ঢাকা অ্যাপারেল সামিট

দুই দিনের ঢাকা অ্যাপারেল সামিটের তৃতীয় সংস্করণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনরা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

এতে সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ব্র্যান্ড, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়নে নয়টি সেশন থাকবে।

ঢাকা অ্যাপারেল এক্সপো

পোশাক, বস্ত্র এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য পণ্য নিয়ে ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এটি বৈশ্বিক ক্রেতা ও তাদের প্রতিনিধিদেরকে একই ছাদের নীচে প্রতিযোগিতামূলক সোর্সিং অফারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য ও পরিষেবা বিষয়ে ধারণা গ্রহণের সুযোগ করে দেবে।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো

ইতোমধ্যে এ প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক ডেনিম ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে জানান ফারুক হাসান। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ এই ডেনিম এক্সপোর আয়োজন করবে ১৫ ও ১৬ নভেম্বর।

সাসটেইনেবল ডিজাইন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড

প্রথমবারের মত পোশাক শিল্পে টেকসই ডিজাইন ও উদ্ভাবনের প্রচারণায় এ পুরস্কার দেওয়া হবে। বিজিএমইএ সভাপতির কথায়, এটি একটি অনন্য প্লাটফর্ম তৈরি করবে যেখানে স্থানীয় প্রতিভাবান ডিজাইনাররা তাদের সেরা 'ইনোভেশন এবং কালেকশনগুলো' সিরিজ আকারে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন।

বাংলাদেশের তরুণ পেশাদার ও স্নাতকরা এতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বহুজাতিক ব্র্যান্ড, রিটেইলার ও দেশি প্রস্তুতকারকদের কাছে নিজেদের প্রতিভা উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন ১৬ নভেম্বরের এ আয়োজনে।

এমআইবি ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড

মেইড ইন বাংলাদেশ উইকে ‘সিইং থ্রো ইউর আইজ’-কে প্রতিপাদ্য করে এক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার অয়োজন করা হয়েছে। সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য, শিল্প ও অর্থনীতি, মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে অনুষ্ঠানটি ১৬ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত হবে।

এনআরবি অ্যাওয়ার্ড

অনাবাসী বাংলাদেশীদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আরও সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি মন্তব্য করে বিজিএমইএ সভাপতি এ ইভেন্টে এসব গুণি ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর একটি প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন।

ফ্যাশন ইনোভেশন রানওয়ে শো

বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা যেন তাদের উদ্ভাবণমূলক পণ্য উপস্থাপন করতে পারেন, সেজন্য ফ্যাশন ইনোভেটিভ রানওয়ে শোর আয়োজন থাকছে।

এর মাধ্যমে প্রদর্শন করা হবে বাংলাদেশ কিভাবে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শিল্পের জন্য দায়িত্বপূর্ণ এবং টেকসই মূল্য-সংযোজিত ডিজাইন উদ্ভাবন করতে পারে। এর মাধ্যমে শিল্পে সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং এবং ম্যাচমেকিং হবে।

সাসটেইনেবল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড

বিজিএমইএ ও জিআইজেড যৌথভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পরিবেশগত, সামাজিক ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রগুলোতে যেসব উত্তম চর্চা রয়েছে, সেগুলোকে স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য এ পুরস্কার দেওয়ার আয়োজন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম ও খন্দকার রফিকুল ইসলাম, পরিচালক শেহরিন সালাম ঐশি, ফয়সাল সামাদ, হারুন অর রশিদ, ভিদিয়া অমৃত খান ও নীলা হোসনে আরা এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।