এক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারিত হবে টাকা নেওয়ার দিনে থাকা ডলারের দর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাকে ‘স্পট’রেট বলছে।
Published : 15 Feb 2024, 09:52 PM
তারল্য চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা দিয়ে টাকা নেওয়ার সুবিধা চালু হল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার ‘কারেন্সি সোয়াপ’ নামের এ পদ্ধতি চালু করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে।
এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা নেয়ার সুযোগ থাকবে। পুনরায় টাকা পরিশোধ করে সমপরিমাণ ডলার নিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
এক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারিত হবে টাকা নেওয়ার দিনে থাকা ডলারের দর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাকে ‘স্পট’রেট বলছে।
ডলারের বেলায় সুদহার নির্ধারিত হবে ‘সোফর’ (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) এর ৯০ দিনের সুদহার অনুযায়ী।
এ সুদহার প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউকে ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথোরিটি (এফসিএ) এর অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিএমই গ্রুপ।
সিএমই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুয়ায়ী, সিএমইর তিন মাসের সুদহার বৃহস্পতিবার ছিল ৫ দশমিক ৩৫শতাংশ।
আর টাকার বেলায় সুদহার নির্ধারণ করা হবে ব্যাংক রেট অনুযায়ী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। বর্তমানে ব্যাংক রেট হচ্ছে চার শতাংশ।
শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ঠিক হবে শরীয়াহ অনুযায়ী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নিরবাহি পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর তাৎক্ষণিক টাকা নেওয়ার সুযোগ হবে। এতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচও কমবে।”
সর্বনিম্ন ৫০ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা বা সমপরিমাণ টাকা ‘কারেন্সি সোয়াপ’ এ অদল বদল করা যাবে।
বর্তমানে একটি ব্যাংক চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে টাকা নিতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার নিতে পারবে- এমন বাধ্যবাধকতা নেই। নতুন এ ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পরে সেই ডলার ফেরত নিতে পারবে- এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও লাভবান হবে।
ব্যাংকগুলোর দেওয়া ডলার রিজার্ভে যোগ হবে। আর ব্যাংকগুলো তার চাহিদার সময়ে ডলার নিতে পারবে।
বতর্মানে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে এ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে পারে। আবার ডলার ধারও নিতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডলার ফেরত দিতে না পারলে সুদ পরিশোধ করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়।
সময় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতিতেও রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ২০২২ সালের জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাজার থেকে ডলার তুলে নেয়। আবার প্রয়োজনে বিক্রিও করে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে এখন শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে।