ক্রেতারা বলছেন পোশাকের দাম এবার অনেক বেশি। স্বীকার করছেন বিক্রেতারাও। তারা বলছেন, ভিড় হলেও ক্রেতারা কিনছেন কমই।
Published : 30 Mar 2024, 08:09 AM
মিরপুর ১১ নম্বরের সবুজ বাংলা সমবায় সমিতি মার্কেটের ইকরা কর্নারে বিক্রেতা মামুন শেখকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল।
দোকানটিতে বিক্রি হয় শার্ট-প্যান্টের কাপড়। পাশ দিয়েই ক্রেতাদের কাপড় দেখে দেখে যেতে দেখা গেল। কেউ কেউ আবার দাম করে চলে যাচ্ছেন।
মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “মানুষ তো ভালোই আসতেছে। কিন্তু কেউ তো কিনে না। দাম নাকি বেশি মনে হচ্ছে। বাড়ছে কিছুটা, তবে না বাড়ালে তো আমরাও চলতে পারব না।”
পাশের দোকান সামিয়া ফেব্রিক্সে কাপড়ের দাম-দর করতে দেখা গেল কালশীর বাসিন্দা নিলয় হোসেনকে।
তিনি বলেন, “আমরা যারা মোটামুটি আয়ের মানুষ তাদের জন্য এবার কেনাকাটা করাটা কঠিন হয়ে গেছে। ছুটি পেয়ে আসছিলাম কিছু কেনাকাটা করতে, কিন্তু মনে হচ্ছে পারব না। কোথাও কমে পেলে সেখান থেকে নেওয়ার চেষ্টা করব।”
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ঢাকার বিপণিবিতান ও পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে বেশ ভিড় দেখা গেলেও বিক্রেতারা বলছেন, কেনাবেচা এখনো সেভাবে জমেনি। তারা বলছেন, মাসের শুরুতে বেতন ও বোনাস হলে ‘আসল ভিড়’ দেখা যাবে। অন্যরা ক্রেতারা আপত্তি তুলছেন পোশাকের দাম নিয়ে। তারা বলছেন, এবার দাম অনেকটাই বেশি চাইছেন বিক্রেতারা।
সামিয়া ফেব্রিক্সের বিক্রেতা জয়নুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতেই এখন এই কাপড়গুলো কম বিক্রি হয়। সবাই রেডিমেড কাপড় কিনতে চায়, তারমধ্যেও অন্যান্য বার যারা আসত তারাও নিচ্ছে না।
এবার কাপড়ের দাম কেমন বেড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোয়ালিটি অনুযায়ী একেক কাপড়ে একেক রকম দাম বেড়েছে।”
মোহাম্মদীয়া মার্কেটের নোবেল পাঞ্জাবি শোরুম এর বিক্রেতা এবিএম সাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত মঙ্গলার স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে দোকানগুলোতে ভিড় বেশি ছিল। দুদিন পরই আরেকটি ছুটির দিন আসায় খুব একটা ক্রেতা মার্কেটে আসেনি বলে জানালেন তিনি।
দোকানটিতে বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি।
সাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওইদিন মার্কেটে হালকা চাপ ছিল। আজকে তেমন নাই। এবার অন্য বারের চেয়ে বিক্রিও কম হচ্ছে৷”
নূর আলম পাঞ্জাবি অ্যান্ড লুঙ্গি স্টোরের বিক্রেতা নাসিম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের জন্য পাঞ্জাবি মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পরে বাড়বে হয়ত। মানুষের আয় কম, বেতনও পায়নি অনেকে এজন্যও কম বিক্রি হতে পারে এবার।”
সন্তান ও বাবার জন্য পাঞ্জাবি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন জীবন আহসান। তিনি বলেন, “দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে নিজের জন্যও একটা কিনতাম।
“এই মার্কেট থেকেই গত বছর ১২০০ টাকায় পাঞ্জাবি কিনেছি, এবার সেটা ১৬০০ নিল।”
নিউ আল আমিন শাড়ি বিতানে বিক্রি হচ্ছে কাতান, বেনারসি, সুতি, প্রিন্ট, সিল্ক, টাঙ্গাইল ও জামদানি শাড়ি। দোকানটির বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছুটির দিন হলেও বিক্রি বাড়েনি। কেউ ভালো বিক্রি করছে, কারও কম বিক্রি হচ্ছে।
“কাপড়ের দাম বাড়তি৷ সুতার দাম বেড়েছে তো তাই। খাওয়ার জিনিসেরও তো দাম বেশি, এগুলো মিলিয়েই দাম বাড়ে৷”
আইভী সিল্ক হাউজে ক্রেতাদের শাড়ি পছন্দ করতে দেখা গেল। নিজের ও পরিবারের জন্য শাড়ি কিনতে আসার কথা বললেন তারা।
ক্রেতা নাসিমা আক্তার বলেন, “ঈদে শাড়ি পড়তে ভালো লাগে; আর এক ঈদেইতো কেনাকাটা হয় তাই নিতে আসলাম।
“দাম বাড়ছে, তারপরও কিনতে তো হবেই কিছু না কিছু।”
দোকানটির বিক্রেতা মনীর চোধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্রি কম হলেও অনেকেই শাড়ি পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু কেউ কেউ দেখে চলে যায়। কেন চলে যায় বুঝতে পারছি না।”
নান্নু মার্কেটেও কিছু দোকানে ভিড় আর কিছু দোকান ফাঁকা দেখা গেল। প্যান্ট শার্টের দোকান লাবণ্য ফ্যাশনে বিক্রেতাদের গল্প করতে দেখা গেল।
বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটু আগে কিছু ক্রেতা আসছিল। এখনো তেমন বাজার জমেনি। আর কিছুদিন গেলে বিক্রি বাড়তে পারে।”
পাশের দোকান এসএম ফ্যাশনে কয়েকজন ক্রেতাকে কাপড় পছন্দ করতে দেখা গেল। দোকানের বিক্রেতা নাফিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ যেমন আসে তার অর্ধেক বিক্রি হচ্ছে। দাম করে চলে যায় সবাই।”
মিরপুর-১০ নম্বরের হোপ প্লাজা মার্কেটের আব্দুল্লাহ ফ্যাশনে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের থ্রি-পিস, ওয়ান পিচের কাপড়।
দোকানটির বিক্রেতা মোজাম্মেল হক পল্টন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যদিনের মতই কাস্টমার আসছে। এবার তেমন বিক্রি হচ্ছে না।”
জমে উঠছে নিউ মার্কেট এলাকার বিক্রি
ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোর বিক্রি জমে উঠেছে।
ছুটির দিন শুক্রবারে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। বিক্রেতারা আশা করছেন, সন্ধ্যার পর সেই ভিড় আরো বাড়বে।
শুক্রবার রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নূর জাহান মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতারা জামা-কাপড়, জুতা, অলঙ্কারসহ বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য ভিড় করছেন দোকানে। পরিবারের নানা বয়সীদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঢাকার শনির আখড়া থেকে নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন চাকরিজীবী গোলাম কিবরিয়া।
তিনি বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় সব ধরনের জিনিস পাওয়া যাওয়ায় এখানে এসেছেন তিনি।
“ছুটির দিন জ্যাম না থাকায় সহজে আসতে পেরেছি। আজকে বাচ্চাদের জন্য কেনা-কাটা করলাম। বেতন-বোনাস পেলে পরের সপ্তাহে নিজের জন্য কিনব।”
আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দিতে গাউসিয়া মার্কেট থেকে পছন্দের বিভিন্ন শাড়ি কিনেছেন রাফেজা খাতুন। তিনি বলেন, “এখানে অনেক রিজনেবল প্রাইসে কেনাকাটা করা যায়। তাছাড়া এখানে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যায়।”
চন্দ্রিমা মার্কেট থেকে পাঞ্জাবি ও প্যান্ট কিনেছেন রেজাউল করিম। সবসময় চন্দ্রিমা ও নূরজাহান মার্কেট থেকে কেনাকাটা করার কথা জানালেন তিনি।
রেজাউল বলেন, “এখানে সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটা করা যায়। তবে এবার জিনিসপত্রের দাম অনেকটা বেড়েছে।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের এ সময়টাতেই তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এবার ঈদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ বাড়তি আমেজ নিয়ে আসার কথা জানালেন তারা।
নিউ সুপার মার্কেটের আলিফ ফ্যাশনে বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের বিভিন্ন ফ্যাশনের পাঞ্জাবি-পায়জামা।
দোকানটির বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। ক্রেতারা ঈদের পোশাকের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের পোশাকও কিনছেন।”
গাউসিয়া মার্কেটের শাড়ির দোকান জননী বস্ত্রবিতানের বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ঈদে তারা দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের শাড়ি নিয়ে এসেছেন।
“ঈদের সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। এবার ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে।”
ভিড় ফুটপাতে
মিরপুর-১১ নম্বরের মোহাম্মদীয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাতে এক শ্রেণির ক্রেতাকে কেনাকাটা করতে দেখা গেল।
সেখানকার ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটে কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা এসব ফুটপাত।
ভ্যানে সন্তানের জন্য কাপড় পছন্দ করছিলেন রাজিয়া বেগম। তিনি বলেন, “মার্কেট ঘুরে এসে এখান থেকে কিনতেছি। আমাদের নতুন কাপড় হলেই হয়, মান বা নতুন ডিজাইন নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না।”
বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অল্প দামে বিক্রি করতে পারছি তাই এরা নিচ্ছে। দোকানে তো ভাড়াসহ অন্যান্য বিষয় আছে, যার কারণে তাদের খরচও বেশি। আমাদের বাড়তি খরচ না থাকায় বেশি দাম রাখি না।”
মিরপুর ১০ নম্বরের হোপের গলির ফুটপাতেও ক্রেতাদের সমাগম দেখা গেছে। পোশাক কিনে বাসায় যাচ্ছিলেন তানিয়া আক্তার। তিনি বলেন, “এখানকার পোশাকগুলো ভালো, দামও কম তাই এখান থেকেই কিনে নিলাম।”