তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় বলে উল্লেখ করা হয়।
Published : 15 Oct 2022, 08:21 PM
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়া এর কোম্পানিগুলো বাধাগ্রস্থ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক বিরোধী কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন করে এই অভিযোগ করে।
এতে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) এবং প্রত্যাশাসহ কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়; মানববন্ধন শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় বলে মানববন্ধনে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, “বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করেন। দেশে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, যা তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে অনেক বেশি।
“তামাক ব্যবহারজনিত এই ক্ষয়ক্ষতি এবং ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল- এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনা প্রদান করেন।”
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ- এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে এবং এর বাস্তব আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
“সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে এবং তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তাতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে।”
তবে আইন সংশোধনের এই উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করতে তামাক কোম্পানিগুলো নানা কুটকৌশল করছে বলে অভিযোগ করেন মোস্তাফিজুর।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের অভিযোগ করেন তামাক কোম্পানিগুলো কখনই জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। তারা তরুণদের বেছে নেয় এবং নানাভাবে তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করে। এই কোম্পানিগুলো বর্তমান সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগকে ভিন্নপথে নিতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
“আমরা আশা করি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই সংশোধিত আইন মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে, সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯০ শতাংশ করা।
সিটিএফকের সহায়তায় মানববন্ধনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, ডরপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, নাটাব, ধূমপান মাদক ও দুর্নীতি বিরোধী ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।