“কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস পাচ্ছে না সেটা লিখিতভাবে জানান,” সংসদে বলেন তিনি।
Published : 07 May 2024, 09:30 PM
দেশ-বিদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাবে বলে সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
সরকারি, বেসরকারি, যৌথ উদ্যোগ এবং বিদেশের রপ্তানিকারক বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত পিডিবির কাছ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ পরিমাণ অর্থ পাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পিডিবির বিপুল এ দায়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবির পাওনাও রয়েছে।
মঙ্গলবার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য দেন।
নসরুল হামিদ বলেন, সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর কাছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিডিবির বকেয়া ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো পাবে ১৫ হাজার ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
একই সময় পর্যন্ত যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে বিদেশি কোম্পানিগুলো পিডবির কাছ পাবে ৫ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ভর্তুকির বিপরীতে পাওনা ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।
চাহিদার চেয়েও স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বেশি
স্বতন্ত্র সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়েও স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ বছর ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় ঘাটতি না থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।
এছাড়া অত্যাধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহ থাকার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। এজন্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রীর আশা, শিগগির সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার সক্ষম হবে।
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, বুধবার ‘প্রি বিড মিটিং’
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আহমদ হোসেনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, গভীর সমুদ্রে খনিজ সম্পদ আহরণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল, শেভরনসহ ১৭টি কোম্পানি এতে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা টুডি জরিপের ফলাফল নিয়েছে।
”আগামীকাল (বুধবার) তাদের সঙ্গে প্রি বিড মিটিং আছে।বিডিং প্রসেস আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। আশাকরি আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোম্পানি নিয়োগ করতে পারব। তারা এসব জায়গায় থ্রিডি সার্ভে করবে, ড্রিল করবে।”
প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, সমুদ্রে এ অনুসন্ধান কার্যক্রমে প্রায় ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। ৭ থেকে ৮ বছর পর তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে তা উত্তোলন করা যাবে।
কোন কারখানা গ্যাস পাচ্ছে না লিখিতভাবে জানান
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমীনের প্রশ্ন ছিল শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়া নিয়ে। বাসা-বাড়িতেও অপ্রতুল গ্যাস পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
এ দুই প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে দৈনিক উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ১৭০০ এমএমসিএফ এবং আমদানি হচ্ছে ১১০০ এমএমসিএফ। প্রায় ৩ হাজার এমএমসিএফ গ্যাস দৈনিক লাইনে দেওয়া যায়। এখন ৩৪০০-৩৫০০ এমএমসিএফ গ্যাসের বিপরীতে ঘাটতি প্রায় ৫০০ এমএমসিএফ।
তিনি বলেন, ”কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস পাচ্ছে না সেটা লিখিতভাবে জানান। কোনো কোম্পানি গ্যাস পায় না এমন লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস রাখার জন্য।
”বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সমস্যা আছে। চাপের সমস্যা আছে। সে কারণে আমরা বিকল্প এলপিজি ব্যবহারের কথা বলছি। আমরা বাসা বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছি না বা দেব না। আমাদের উদ্দেশ্য হল পাইপলাইনের গ্যাস শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করব। এলপিজি বাসা-বাড়ি, গাড়িতে ব্যবহারে পরিকল্পনা ভবিষ্যতে আমাদের রয়েছে।”
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশজেুড়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলেও বৃহত্তর ময়মনসিংহে সমস্যা হচ্ছে। কারণ সেখানে গ্যাসের স্বল্পতা। জামালপুরের দুটো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে।
টাকার কারণে একটির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না। আরেকটি অন্য কারণে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।
পল্লী বিদ্যুতের লোকসান ৫২৪ কোটি টাকা
ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ২৯ টাকা।
তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় হয়েছিল ৩১ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৭১ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার ৪৪৭ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মুনাফা হয়েছে ৫০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এ সময়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৯ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের লোকসানের মূল কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খুচরা মূল্যহার পাইকারি মূল্যহারের চেয়ে কম হওয়া। ভবিষ্যতে মূল্য সমন্বয় হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো লোকসান থেকে মুক্ত হবে।
পার্বত্য অঞ্চলে ৬ কূপ খননের পরিকল্পনা
সরকার দলীয় এমপি আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ছয়টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকার দলীয় এমপি হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে কয়লাভিত্তিক ৪ হাজার ৮৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে চালু আছে। প্রতিবেশী ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমদানি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট। ৩ হাজার ৭০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।