অসাধু চর্চা কে করছে, তা এখন পরিষ্কার: ভোক্তার ডিজি

“তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর এগুলো আমদানি নির্ভর পণ্য। আন্তর্জাতিক সমস্যায় আমাদের হাত নেই, কিন্তু ইন্টারনাল সমস্যাটা, সেখানে আমাদের কাজ করার অনেক কিছু আছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2024, 01:18 PM
Updated : 24 Jan 2024, 01:18 PM

পণ্যের দাম বাড়ানোর মতো অসাধু চর্চা সব জায়গায় চলছে মন্তব্য করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছে, এই অসাধু চর্চা কে করছে, তা এখন পরিষ্কার। 

রোজায় চিনি, তেল, খেজুর, ছোলাসহ এ জাতীয় পণ্যগুলোর দামে কারসাজি করলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। 

রোজাকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বুধবার দুপুরে টিসিবি ভবনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিমিয় সভায় এ কথা বলেন তিনি। 

তিনি বলেন, “রমজানে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য যেমন চিনি, তেল, খেজুর, ছোলা, ডাল এ জাতীয় পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। এমনিতে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টন তেল-চিনি কনজিউম করি সারা বাংলাদেশে। আর রমজানে এর চাহিদা ডাবল হয়ে যায়। যে অতিরিক্ত চাহিদা সেটার যোগান তো আমাদের দিতে হয়। মজুদ ও সাপ্লাই ধরে রাখা এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জের মতো। এটা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি এবং এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন।” 

এসময় তিনি আন্তর্জাতিক নানা সংকট তুলে ধরে বলেন, “তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর এগুলো আমদানি নির্ভর পণ্য। আন্তর্জাতিক সমস্যায় আমাদের হাত নেই, কিন্তু ইন্টারনাল সমস্যাটা, সেখানে আমাদের কাজ করার অনেক কিছু আছে।” 

হঠাৎ করে নির্বাচনের সময় চালের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গ টেনে ভোক্তার ডিজি বলেন, “অজুহাত দেওয়া হয়েছে, ধানের দাম বেড়েছে। প্রতিটা গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুদ আছে। এই চাল কি বাড়তি ধানের চাল? এই চাল তো তারা ছয় মাস ধরে মজুদ করছে। যদি মিলে বস্তায় ২ টাকা করে বাড়ে সেটা কেন ভোক্তা পর্যায়ে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়ল? এই জায়গায় তো সেই অসাধু চর্চা চলছেই। এই অসাধু চর্চা কে করছে তা আমাদের কাছে এখন পরিষ্কার।” 

বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি ৬০-৭০ টাকা থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ টাকার উপরেও বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, “এইগুলো পণ্য উৎপাদন ব্যয় সর্বোচ্চ আট থেকে দশ টাকা পার কেজি। কৃষকরা বিক্রি করছে ২৫ টাকায়। কৃষকরা লাভবান হোক আমরা তো সেটাই চাই। তাহলে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। কিন্ত সেটি কেন ভোক্তা পর্যায়ে ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে?” 

সাপ্লাই চেইন ম্যানেজম্যান্ট সফটওয়্যার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কতটুকু উৎপাদন করছে, কোন ডিলার বা ব্যবসায়ী মাল নিয়ে কোন জেলায় যাচ্ছেন, সে জেলায় উনি গিয়েছেন কিনা, সেটা আমরা সফটওয়্যার দিয়ে ট্র্যাক করব।” 

তিনি দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেন, “আপনারা সুন্দরভাবে ব্যবসা করুন। যেমন চালের বাজার ২ টাকা বেড়ে যাওয়ার পরে আট-দশ টাকা বেড়ে গেল, সেই জায়গাতে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব।” 

সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, “এখন ব্যবসায়ীরা শুধু টাকা কামায় তা নয়, কিছু কিছু ব্যবসায়ী দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছে। এখন ডলারের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেন দিচ্ছে না, সেখানে একটু নজর দেওয়া দরকার। ব্যবসায়ীরা শুধু লাভ করছেন না, তারা নির্যাতিতও হচ্ছেন।” 

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, “ব্যবসায়ীদের একেবারে দোষ নাই, এমন বলছি না। দাম বাড়ার জন্য বাজারটা একটু স্লো করতে হয়। বাজার যারা স্লো করে দেয় তাদের নিউজে আনতে হবে। মানুষের আয়-রোজগার কমেছে, কিন্তু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।” 

সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদারসহ বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।