রিহ্যাব মেলায় অধিকাংশই খুঁজছেন ছোট ফ্ল্যাট

মাথা গোঁজার স্থায়ী একটি ঠিকানা পেতে ছোট আকারের ফ্ল্যাটের দিকে ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ দেখছে আবাসন মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2021, 01:14 PM
Updated : 27 Dec 2021, 01:14 PM

সোমবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচদিনব্যাপী রিহ্যাব আবাসন মেলার শেষ দিনে এমন কথা জানান আবাসন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।  

‘কৃষিবিদ রিয়েল এস্টেট’র সেলস অব মার্কেটিং অফিসার গাজী শাহেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবছর ক্রেতাদের চাহিদা হচ্ছে ৮৫০ বর্গফুট থেকে ১,২০০ বর্গফুটের মধ্যের ফ্ল্যাটগুলো। বেশিরভাগ ক্রেতাই রেডি ফ্ল্যাট কিনে এক্ষুণি উঠে পড়তে চাইছেন।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছর রিহ্যাব ফেয়ার হয়নি। এবার মেলা জমে উঠলেও ক্রেতাসমাগম অন্যান্য বছরের মতো নয়।

সরকারি বিভিন্ন সুবিধার কারণে গত দুই বছরে মহামারীর মধ্যেও রেডি ফ্ল্যাট বিক্রি সন্তোষজনক বলে জানালেন শাহেদ।

তিনি বলেন, “সরকার সিঙ্গেল ডিজিটের ঋণের সুবিধা দিয়েছে। পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ লগ্নি করে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ দেওয়ার ফলে মহামারী পরিস্থিতিতেও ভালো বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় এক হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। কৃষিবিদ গ্রুপ গত বছর ৩৬টি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে।”

মেলার ভেতরেও দুটি ফ্ল্যাট ও চারটি প্লট বিক্রি হয়েছে জানিয়ে গাজী শাহেদ বলেন, “সার্বিকভাবে বলতে গেলে মেলার পরিস্থিতি সন্তোষজনক।”

আবাসন মেলায় ১২টি চলমান প্রকল্প এবং ভবিষ্যতে ভবন নির্মাণের জন্য ১২টি পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এলডোরাডো।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হাবিবা বলেন, “১,২০০ থেকে ১,৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতি বর্গফুট ৪,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬,৫০০ টাকার মধ্যে আমাদের ফ্ল্যাটগুলো রয়েছে।”

তিনি জানান, রাজধানীর ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, উত্তরা, নাখালপাড়া, খিলগাঁও, আগারগাঁও এলাকায় তাদের ভবন রয়েছে। ভূমি মালিকদের সঙ্গে যৌথ অংশদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনগুলো নির্মাণ করা।

রিহ্যাব আবাসন মেলায় এবারের আয়োজনে ২২০টি স্টল বসেছে। এর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও যোগ দিয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়ে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার টিকেট কেটে মেলায় বিভিন্ন ফ্ল্যাট, প্লট, নির্মাণ সামগ্রী এবং গৃহঋণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন আবাসন প্রত্যাশীরা।

মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবি অনামিকা। তিনি জানান, আবাসন খাত সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য এধরনের আবাসন মেলা একটি সুন্দর সুযোগ।

তিনি বলেন, “আমি বেশ কিছু নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছি, নিজের নম্বর তাদেরকে দিয়ে এসেছি। এখন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

বৃহস্পতিবার মেলার প্রথম দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও শুক্রবার ছুটির দিন থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। মেলার শেষ দিন দুপুরের পরও ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে ভরপুর হয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণ।

পূর্বাচল আবাসিক এলাকা ঘিরে প্রকল্প

মেলায় যেসব প্লট বিক্রির কোম্পানি এসেছে তাদের বেশিরভাগ প্রকল্পই রাজধানীর পূর্ব প্রান্তে পূর্বাচল আবাসিক এলাকা ঘিরে। এছাড়া ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দুই প্রান্তেও রয়েছে কিছু আবাসিক প্রকল্প।

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৩০ নম্বর ও ২২ নম্বর সেক্টরের পূর্বপ্রান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠা পূর্বাচল ‘মেরিন সিটি’ প্রকল্পে রেডি প্লটগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতি কাঠা ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আর মাটি ভরাটের অপেক্ষায় থাকা প্লটগুলো চার থেকে ছয় বছরের কিস্তিতে পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকাঠা ১০ লাখ টাকায়।

প্রকল্পের বিক্রয়কর্মী গোলাম মোর্শেদ সনেট বলেন, “আমাদের প্রকল্পটি পূর্বাচলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকেশনে পড়েছে। তাই আমরা আগ্রহীদের নিজস্ব যানবাহনে ঘুরিয়ে দেখানোর অফার দিচ্ছি। মেলা উপলক্ষে কিছু মূল্যছাড়ও রয়েছে।” 

পূর্বাচলে কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কাছাকাছি কিছু জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী আবাসন প্রকল্প’। মেলায় স্টল নিয়ে নিজেদের প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন এই প্রকল্পের কর্মীরা।

প্রবাসী পল্লী গ্রুপের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ সাগর বলেন, “মেলায় এসে কোম্পানির প্রস্তুতির কথা গ্রাহকের সামনে তুলে ধরছি। গত দুই দিনে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। পুরোনো ক্রেতারা আমাদের দেখতে পেয়ে আস্থাবোধ করছেন।”

কাঞ্চন ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে ভুলতা-গাউছিয়া এলাকায় ‘এশিয়ান টাউন’ নামের একটি আবাসন প্রকল্পের মার্কেটিং বিভাগের কর্মী ফারুক সোবহান বলেন, “আমাদের প্রকল্প অনেকাংশেই দৃশ্যমান। তাই ক্রেতা চাহিদাও বেশি।”

তিনি জানান, রেডি করা প্লট প্রতি কাঠা ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ৩ কাঠা এবং ৫ কাঠা আয়তনের প্লটগুলোর দিকে ক্রেতার চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে।

কাছাকাছি এলাকায় ‘গ্রিনল্যান্ড টাউন’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামান জানান, ১,২০০ বিঘার ওপর এই প্রকল্প। এর মধ্যে অর্ধেক জমি কেনা হয়ে গেছে। প্রতিকাঠা নগদ ৪ লাখ টাকা এবং কিস্তিতে ৬ লাখ টাকায় জমি দেওয়া হচ্ছে।