কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তায় নতুন ‘অ্যাকর্ড’

‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এর ধারাবাহিকতায় দুই বছর মেয়াদী একটি নতুন চুক্তিতে সই করেছে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক রিটেইল ব্র্যান্ডগুলো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 03:46 PM
Updated : 25 August 2021, 04:48 PM

রয়টার্স জানিয়েছে, রিটেইল কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে এই চুক্তির ফলে কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের মত চুক্তিতে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে। 

‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’ নামে নতুন এই চুক্তি আসছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে বুধবার বাংলাদেশ অ্যাকর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আগের অ্যাকর্ডে যে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলো সই করেছিল, তারা নতুন চুক্তিতেও রয়েছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের চুক্তি করার কথাও বাংলাদেশ অ্যাকর্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছিল, যে উপাদানগুলোর কারণে আগের অ্যাকর্ড সফল হতে পেরেছিল, এবার নতুন চুক্তিতে সেগুলোকে আরও এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বিদেশি অনেক সংগঠন বাংলাদেশি পোশাক বর্জনের ডাক দেয়।

সেই প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। আর একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট পরিচিতি পায় অ্যালায়েন্স নামে।

পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার।

এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেড় হাজারের বেশি কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা, যেখানে ২০ লাখের মত কর্মী কাজ করে।

আগের সেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট। তার পরদিন থেকেই নতুন চুক্তি কার্যকর হবে।

রয়টার্স জানিয়েছ, প্রায় ২০০ রিটোইলার ২০১৩ সালের অ্যাকর্ডে সই করেছিল, যাদের মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, ইনডিটেক্স, ইউনিক্ল, হুগো, বস আর অ্যাডিডাসের মত বড় কোম্পানিও ছিল। নতুন চুক্তিতে কারা রয়েছে সেই তালিকা ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করার কথা রয়েছে। 

ইউনিক্লর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, তারা নতুন অ্যাকার্ড দেখেননি, তবে সাধারণভাবে তারা আইনি বাধ্যবাধকতা রেখে একটি নতুন চুক্তির ধারণাকে সমর্থন করেন, যেখানে স্বাধীন পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকবে এবং অন্যান্য দেশেও যা সম্প্রসারণ করা যাবে। 

নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা একমত হয়েছেন যে, নতুন কোন কোন দেশে এই চুক্তি সম্প্রসারণ করা যায়, তা আগামী ছয় মাসের মধ্যে তারা ঠিক করবেন। আপাতত অন্তত একটি দেশে আগামী দুই বছরের মধ্যে একই ধরনের চুক্তিতে তারা পৌঁছাতে চান। 

রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেতা কোম্পানিগুলো আইনি বাধ্যবাধকতার চুক্তিতে আপত্তি তোলায় গত মে মাসে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির আলোচনা থমকে গিয়েছিল।

টার্গেট, ওয়ালমার্ট, ভিএফ কর্পোরেশনের মত বড় মার্কিন কোম্পানি ২০১৩ সালে অ্যাকর্ডে যুক্ত হতে আপত্তি তোলে। পরে তারা অ্যালায়েন্স নামে আলাদা জোট করে চুক্তিতে আসে, কিন্তু সেখানে রিটেইলারদের চুক্তি মানতে আইনি বাধ্যবাধকতায় আনার সুযোগ ছিল না। 

ওয়ালমার্ট রয়টার্সকে বলেছে, নতুন অ্যাকর্ডেও তারা যুক্ত হয়নি। টার্গেট আর ভিএফ করপোরেশন এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নে সাড়া দেয়নি।