সিনোফার্মের টিকা দেশে প্রস্তুত করতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে এনে বোতলজাতকরণ ও সরবরাহের জন্য যৌথ  চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ সরকার ও ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2021, 01:37 PM
Updated : 16 August 2021, 02:19 PM

এই চুক্তির আওতায় চীন থেকে বাল্ক টিকা এনে বাংলাদেশে ভায়ালে ভরা এবং লেবেলিংয়ের কাজটি করবে ইনসেপ্টা। তাদের কাছ থেকে সরকার সেই টিকা কিনে নেবে।

সব ঠিক থাকলে ‘মাস তিনেকের মধ্যে’ ইনসেপ্টা দেশে কোভিড টিকার কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) এই চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির চুক্তিতে সই করেন।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ”ইনসেপ্টার প্রস্তুতি আছে, চায়নিজদের পক্ষ থেকে ফর্মালিটিজ আছে। তিন মাসের আগেও হতে পারে, বেশি সময়ও লাগতে পারে।”

টিকার কাজে ইনসেপ্টার সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জাহিদ মালেক বলেন, “তাদের অনেক সক্ষমতা। যদি ১০ ডোজের ভায়াল হয়, প্রায় ৪ কোটি ডোজ প্রতি মাসে বানাতে পারবে। আর যদি ভায়ালে ডোজ কমে যায়, তাহলে সেটার অনুপাতে সংখ্যা কমে যাবে।”

সরকার ইনসেপ্টার মাধ্যমে কত টিকা কিনবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যতটুকু আমাদের প্রয়োজন, ততটুকু আমরা অর্ডার দেব। তারা সেটা বানিয়ে ফেলবে।”

এভাবে বাল্ক এনে দেশে বোতলজাত করার পর টিকা কিনতে সরকারের কেমন খরচ হবে,. সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে।

তিনি বলেন, “আশা করি, কম দামেই আমরা পাব। আর দেশে উৎপাদন হলে তাড়াতাড়ি ও ঠিক সময়েই পাব।”

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ সিনোফার্মের কাছ থেকে সাড়ে সাত কোটি ডোজ টিকা কিনবে বলে এর আগে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে দেড় কোটি ডোজের বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে। 

গত মে মাসে ক্রয় সংক্রান্ত  কমিটির সভায় সরকারিভাবে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছিলেন, প্রতি যোজের দাম পড়বে ১০ ডলার।

কিন্তু সেদিন টিকার দাম গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করায় টিকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। বলা হয়, দাম প্রকাশের বিষয়টি চীন ভালোভাবে নেয়নি।

পরে ১৪ জুলাই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সিনোফার্মের কাছ থেকে প্রাথমিক চুক্তিমূল্যের চেয়ে কম দামেই দেড় কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেই মূল্য ছাড়ের পর প্রতি ডোজের দাম এখন কত পড়বে, সে তথ্য অর্থমন্ত্রী সেদিন দেননি।

সোমবারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংযান বলেন, যৌথ উৎপাদন চুক্তির আওতায় প্রথম দিকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা পাবে বাংলাদেশ সরকার।

”আমরা যৌথ সহযোগিতার চুক্তি করছি স্থানীয় ডিসপেন্সিংয়ের জন্য। চুক্তির অধীনে কাজ শুরু হলে ইনসেপ্টা প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে মহামারী মোকাবেলায় ৫০ লাখ করে টিকা দেবে।”

ফাইল ছবি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘নিশ্চয়তা দিয়েছেন’, টিকা সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।

”আর এই চুক্তির মাধ্যমে যৌথ উৎপাদনে গেলে আমরা কম দামে ও সহজে টিকা পাব। ‍দেশবাসীকে আমরা বলতে পারি, টিকার জন্য আপনাদের অভাব বোধ করতে হবে না। আপনারা শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এখন ইনসেপ্টা যৌথ উৎপাদন করবে এবং সরকার তা কিনে নেবে।

”সরকারিভাবেও আমরা টিকার যৌথ উৎপাদন করব। সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।”

প্রাথমিকভাবে চীন থেকে বাল্ক টিকা এনে বোতলজাত করলেও পরে বাংলাদেশেই যাতে পুরোপুরি টিকা উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ও কাঁচামালের সহযোগিতা পেলে আমরা এখানেই টিকা উৎপাদন করতে পারব। তাহলে আমাদের পাশাপাশি অন্যদের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হবে।”

চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং দাবি করেন, বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ ও যৌথ উৎপাদনে তার দেশের কোনো ‘রাজনৈতিক অভিলাষ’ কিংবা ’অর্থনৈতিক হিসাবনিকাশ’ নেই।

”টিকাকে জনগণের সম্পত্তি ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট শি, এর অংশ হিসাবে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের কাউন্সেলর জি রঙ, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ইনসেপ্টার চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির উপস্থিত ছিলেন।