ইন্টারনেটসহ ল্যান্ডফোনে আশা দেখছে বিটিসিএল

এককালের সোনার হরিণ পিএসটিএন বা ল্যান্ডফোনের দিকে আবার গ্রাহক টানতে ইন্টারনেটসহ সংযোগের উপর ভর করে সুদিনের আশায় বুক বেঁধেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ সংস্থার কর্মকর্তারা।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2021, 03:46 AM
Updated : 29 Jan 2021, 03:46 AM

তারা বলছেন, এখন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সংযোগ প্রক্রিয়া ‘ঝামেলাহীন’ এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ‘সহজলভ্য’ হওয়ায় গ্রাহকরাও সাড়া দিচ্ছেন। তবে চাহিদা অনুযায়ী সংযোগ দিতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি।

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ল্যান্ডফোনে বিনামূল্যে সংযোগ দেওয়া শুরু হলে চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

গিগাবাইট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপন), যা অপটিকাল ফাইবারের মাধ্যমে বিটিসিএল টেলিফোন পরিষেবার সঙ্গে ইন্টারনেট সরবরাহ করছে।

বিটিসিএলের সংযোগ নিতে ঢাকায় এক হাজার টাকা জামানত, এক হাজার টাকা সংযোগ ফি ও ১৫০ টাকা ভ্যাটসহ মোট দুই হাজার ১৫০ টাকা দিতে হত।

চট্টগ্রামে সংযোগ ফি ৫০০ টাকা এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সংযোগ ফি ৩০০ টাকা দিতে হত।

এখন ফি ছাড়াই সংযোগ নিতে পারছে আগ্রহী গ্রাহকরা।

বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিটিসিএলের ইন্টারনেটে সেবার মান ভালো থাকায় এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে সক্ষমতা না থাকায় অনেক জায়গায় এ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।”

বিটিসিএল এর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০২০ এর ১৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ জিপনের আবেদন পড়েছিল ১১ হাজার ৮৩৫টি। এর মধ্যে সংযোগ দেওয়া যাবে এ রকম ৬ হাজার ৮০৮ জনকে ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়েছিল।

পরে তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৪৬ জনকে সংযোগ দেওয়া হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে জিপনের মাধ্যমে দুই থেকে ১০ এমবিপিএস পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে বিটিসিএল।

বিটিসিএলের এ হিসাবে আবেদনকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই সংযোগ পাননি।

বিটিসিএলের ওই কর্মকর্তা জানান, ২০২০ এর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন সংযোগ হয়েছে ৩২ হাজারের বেশি। ল্যান্ডফোনের সংযোগ যেভাবে কমছিল, তা এখন এক জায়গায় স্থির হয়েছে।

এ বিষেয়ে বিটিসিএল এমডি বলেন, “অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে এ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাই সব জায়গায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মূল সড়কের পাশে রয়েছে এ রকম স্থাপনা বা কাছাকাছি জায়গায় এ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় সেবার পরিধি বাড়াতেও কাজ হচ্ছে।”

সেজন্য প্রায় তিন হাজার ৩১৪ কোটি টাকায় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (এমওটিএন) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে রফিকুল মতিন বলেন, কাজ শেষ হলে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করা যাবে।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ লাখ গ্রাহক ধারণ ক্ষমতার তিনটি এমআইএস কোর, ৫৬০টি ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিডব্লউবিএম রিং, দেশের সব জেলায় জিপন সেবা এবং ২০ লাখ গ্রাহক ধারণ ক্ষমতার বস সিস্টেম স্থাপন করা হবে বলে জানান রফিকুল।

তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ল্যান্ডফোনসহ উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

“জিপন ট্রিপল প্লে কেবলে তিনটি সেবা ইন্টারনেট, টেলিফোন ও টিভি চ্যানেল সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন শুধু ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবা দেওয়া হচ্ছে।”

আগামীতে এ দুই সেবার সঙ্গে কেবল টিভির সেবাও যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সেবা দিতে বিটিসিএল এগিয়ে আছে দাবি করে তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন (এনটিটিএন) সেবায় কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল রয়েছে। কোনো ওভারহেড কেবল নেই। অন্যান্য এনটিটিএনগুলোর ওভারহেড কেবল থাকায় প্রায়ই তাদের সংযোগে সমস্যা হয়, যা বিটিসিএলে হয় না।

রফিকুল মতিন বলেন, “এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা দেওয়া যাবে। সাধারণ ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ইন্টারনেট সংযোগ ও গতিতে যে সমস্যা প্রায়ই হচ্ছে, তা বিটিসিএলের গ্রাহকদের হবে না।

বর্তমানে যারা ল্যান্ডফোনসহ ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছেন, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “যে কোনো জায়গায় সমস্যা হওয়ার সাথে সাথে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সতর্কতা পেয়ে থাকি এবং সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হয়।”

এক সময় বছরের পর বছর অপেক্ষা এবং মোটা অংকের টাকা খরচ করে ল্যান্ডফোনের মালিক হওয়া সম্ভব ছিল। দেশে মোবাইল অপারেটররা সেবা শুরুর পর গ্রাহক হারাতে থাকে বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন সেবা।

বিটিসিএলের হিসাবে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দেশে ল্যান্ডফোনের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৭। আর ২০১১ সালে সারা দেশে ১০ লাখ লাখের মত গ্রাহক ছিল। এ কয়েক বছরে চার লাখের বেশি গ্রাহক হারিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

গত ডিসেম্বরে বিটিসিএলের সাধারণ ইন্টারনেট ও জিপনে উচ্চগতির ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৮টি, যা দিনে দিনে বাড়ছে।

বিটিসিএল পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মোহাম্মদ মোরশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মূলত ২০১১ সালের পর থেকে বিটিসিএলের ল্যান্ডফোনের চাহিদা কমতে থাকে। ২০১৮ সালের পর গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে ওঠানামা করছিল। ২০১৮ সালে থেকে গ্রাহক আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“বিশেষ করে জিপনে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ফ্রি সংযোগ অফার শুরু হওয়ার পর গ্রাহক বেড়ে চলছে।”