সবজিতে বাঁচানো টাকা যাচ্ছে চাল-তেলে

বাজারে বাড়তে শুরু করেছে শীতের সবজির যোগান, কমছে দামও। তবে ক্রেতাদের স্বস্তি ফিকে হয়ে যাচ্ছে সরু চাল আর সয়াবিন তেলের বেড়ে যাওয়ায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2020, 10:39 AM
Updated : 20 Nov 2020, 10:39 AM

শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, পীরেরবাগ আর কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারিতে মিনিকেট চালের দাম গত ১০ দিনে কেজিতে ১/২ টাকা করে বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে স্বর্ণা ও বিআর-২৮ চালের দামও। অবশ্য নতুন আসা পাইজাম, মিনিকেট ও স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ১/২ টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।

পীরেরবাগে খুচরা দোকান মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রেতা ফেরদৌস মনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিনিকেটের দাম কেন যে বাড়ল বুঝতে পারলাম না। অবশ্য এবার ধানের দাম অন্যবারের চেয়ে বেশি যাচ্ছে। পুরান ধানের দামও বেশি, নতুন যে আমন এসেছে তার দামও কিছুটা বেশি বলে জানতে পেরেছি।”

তিনি জানান, রশিদের মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) ২৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২৭৫০ টাকা হয়েছে। গুটি স্বর্ণা ২১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২২৫০ টাকা হয়েছে। নতুন আমন ধানের পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকা, পুরান পাইজাম চাল ২৪৫০ টাকা।

“সবকিছু মিলিয়ে চালের দাম এখন বাড়তি। সিদ্ধ কাটারি বিক্রি হচ্ছে বস্তা ২৬০০ টাকায়, নাজিরশাইল প্রতিবস্তা এখন ২৭২০ টাকা,” বলেন ফেরদৌস।

কারওয়ান বাজারের রনি রাইস এজেন্সিতে মিনিকেট প্রতি বস্তা ২৬৫০, নাজির ২৭০০, বিআর আঠাশ ২৪০০, পাইজাম ২৩৫০, গুটি স্বর্ণা ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এখানকার বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন ধরেই চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৭০ টাকা বাড়তি। কেনা দাম বেশি পড়ায় খুচরায়ও দাম বেড়েছে।

এদিকে গত ১০ দিনে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে বলে কারওয়ান বাজারের দোকানিরা জানিয়েছেন।

গত দুই মাস ধরেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছিল। এখন নতুন করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হল। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেলের দামও এই সপ্তাহে কেজিতে ২/৩ টাকা বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, পুষ্টি ব্র্যান্ডের ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা আছে ২২৮ টাকা। রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতল ৫৭০ টাকা, বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের দাম ৫৫৫ টাকা।

এই বাজারের দোকানি মোজাফফর হোসেন জানান, অধিকাংশ সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে বেড়েছে। সে অনুযায়ী খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।

“রূপচাঁদার পাঁচ লিটার এখন ৫২০ টাকায় বিক্রি করছি, যা আগে ৪৮০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকায় বিক্রি করতাম। বসুন্ধরার পাঁচ লিটারও ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৪৮০ টাকায় বিক্রি করছি।”

আরেক দোকানি মুনির হোসেন জানান, খোলা সয়াবিন তেলর দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে এখন ৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকায়।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে মোটর সাইকেলে করে স্ত্রীকে নিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছিলেন সমীর দে।

তিনি বলেন, “অধিকাংশ শাক সবজির দাম কমেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম বেশ খানিকটা বেড়ে গেছে। সবজিতে যে টাকা সেইভ করতে পেরেছিলাম পাঁচ লিটার তেল কিনতে তা চলে গেছে।”

অবশ্য কারওয়ান বাজারে সব পণ্যের দামই তুলনামূলক কম বলে জানান সমীর।

বাজারে রাসুন, আদা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। অবশ্য কারওয়ান বাজারে দাম কমলেও  পীরেরবাগ, বড়বাগ কিংবা অন্যান্য মহল্লায় এর প্রভাব এখনো পড়েনি।

কারওয়ান বাজারে দেশি ভালো জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকা। এছাড়া মিশরের পেঁয়াজ ৩০ টাকা, চায়না ৩২ টাকা এবং হাইব্রিড পেঁয়াজ ৫৯ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

চায়না আদার দাম এখনও দেড়শ টাকা হলেও বাজারে কেরালার ভালো মানের আদা পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকায়। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের নতুন আদাও বাজারে এসেছে, দাম প্রতিকেজি ১২০ টাকা। চায়না রসুন ১০০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মসলা বিক্রেতা সনজিত বালা বলেন, “এক মাস আগে আদার দাম খুব বেড়ে গিয়েছিল। এখন দেশি আদা বাজারে এসেছে। ভারতের কেরালা থেকেও আমদানি বেড়েছে। তাই আদার কমে এসেছে।”

কারওয়ানবাজারে এদিন ভালোমানের মুলা ৩০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, সিম ৫০ টাকা, ফুল কপি, বাধা কপি একটি ৩০ টাকা, শসা ৬০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১২৫ টাকা বিক্রি হলেও পীরেরবাগে তা পাওয়া গেছে ১১৫ টাকায়। ফার্মের ডিমের দামও কিছুটা কমে প্রতি ডজন ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।