চাল-তেলের বাজার লাগামহীন

চাল ও ভোজ্যতেলের বাজারে লাগাম নেই; ঊর্ধ্বমুখী গতিতে থাকা এই দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে আরও বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2020, 11:57 AM
Updated : 2 Oct 2020, 11:58 AM

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে বলে রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাল বিক্রেতারা।

বাজার নিয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি না থাকার কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন ক্রেতা সাধারণ।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো ব্র্যান্ডের এক লিটারের বোতলের দাম চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ১১৪-১১৫ টাকা হয়েছে।

দুই লিটারের বোতলের দাম করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা। আর পাঁচ লিটারের সয়াবিনের বোতলের নতুন দাম ৫৫০-৫৫৫ টাকা করা হয়েছে।

একমাসের ব্যবধানে দুইবার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। বাড়তি দামের পণ্য খুচরা বাজারে এখনও না পৌঁছালেও ডিলাররা আগেই জানিয়ে দিচ্ছেন বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান।

মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকার মার্জিয়া স্টোরের বিক্রেতা খুরশেদ আলম জানান, তার দোকানে নতুন দামের তেল এসেছে। প্রায় সব কোম্পানিই বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটার প্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটার বোতলের গায়ের মূল্য এখন ৫৫০ টাকা। এক মাস আগেও এটি ছিল ৫২৫ টাকা।

“দুই লিটার বোতলের দাম ২২৬ টাকা, এটি ছিল ২১৬ টাকা। এক লিটার ১১০ টাকা থেকে দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১৫ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের বোতলের দাম ৫৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮ টাকা করা হয়েছে।”

রামপুরা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি মাইদুল ইসলাম মাহিন জানান, তারা আগের দামের তেলই বিক্রি করছেন। শনিবার থেকে বাড়তি দামে ডিলাররা তেল দিয়ে যাবে বলে জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুনছি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের এক লিটার সয়াবিনের দাম ১১৪ টাকা; এটি ছিল ১১০ টাকা। ফ্রেশের পাঁচ লিটারের মূল্য করা হয়েছে ৫৫০ টাকা।”

শান্তিনগর বাজারের মমতা স্টোরের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “নতুন দামে তেল এখনও আমাদের দোকানে আসেনি। তবে যেসব তেল বিক্রি করলে আমাদের ১০-১৫ টাকা থাকতো, সেখানে ডিলাররা আরেকটু বেশি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে আগে বোতলের গায়ের মূল্য থেকে ক্রেতাদের আমরা একটু ছাড় দিতে পারলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।”

রামপুরা বাজারে মালিবাগ হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এর কারণ, সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল।

“মিডিয়াতে যেগুলো নিয়ে লেখালিখি হয় কেবল সেগুলো নিয়েই সরকারের লোকেরা কিছুটা দৌঁড়ঝাপ দেয়। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব হলো- কঠোর অবস্থান নিয়ে মনিটরিং করা। সেটা আমরা দেখছি না।”

বাজারে বোতলজাত সয়াবিল তেলের অন্যতম বড় সরবরাহকারী সিটি গ্রুপ তীর ব্র্যান্ডের নামে তেল সরবরাহ করে।

তেলের দামের বিষয়ে শিল্প গ্রুপটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিশ্বজিৎ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে, যে কারণে আমাদেরও বাড়াতে হয়েছে।

তবে সব কোম্পানির তরফ থেকে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করে অনুমোদন নিয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে বাজারে সব ধরণের চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামের মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। আর সরু মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়।

রামপুরার বিক্রমপুর রাইস স্টোরের মালিক আলী আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছ। বিশেষ করে মোটা চালের দাম একটু বেশি।

তিনি জানান, মানভেদে মিনিকেট চালের প্রতি ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৮০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর মোটা চালের বস্তা দুই হাজার ৪৫০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা আলী আহসান বলেন, “বলা হচ্ছে ময়ালে (কৃষকের গোলা) ধানের দাম বেড়েছে। যে কারণে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

“তবে আসল ঘটনা কী সেটা তো আমরা এখানে বসে থেকে বলতে পারব না।”

শান্তিনগর বাজারের মেসার্স ফিরোজ রাইস স্টোরের মালিক ফিরোজ আলম জানান, প্রতি কেজি লতা/পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা। স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকার চালের আড়তদার ওয়াহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিলাররা কারসাজি করে এই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা আগে থেকেই কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় একদিনে ধানের মণপ্রতি দাম ৫০ টাকা করে কমেছে বলে জানান তিনি।

“সরকারের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকলে আমরা আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।”

৬০ টাকার কমে সবজি নেই

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কোনো সবজিই কেজিতে ৬০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে না। শুক্রবার নগরীর মালিবাগ কাঁচাবাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, খিলগাঁও কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই সবজির বাজার চড়া। বেশিরভাগ সবজি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তারা জানান, সিমের কেজি ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এটি বেশ কিছুদিন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। টমেটো ১১০-১২০ টাকা, করলা ৯০-১০০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, বেগুন ৯০-১১০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, মূলা ৭০ টাকা, ঢেড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখি ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ কাঁচাজাবারের এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক দফা বন্যা এবং অতি বৃষ্টির কারণে সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে, যে কারণে বাজারে সবজির দাম বেশি।

এই বাজারে সবজি কিনতে আসা সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা আবু সালেহ মিয়া দাম নিয়ে বিস্ময় করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সবজির বাজার রীতিমত আগুন! কোনো সবজিই তো নিম্নে ৭০ টাকা, ঊর্ধ্বে ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

“এ সময়ে অন্য বছরের তুলনায় সবজির দাম অনেক বেশি মনে হল। প্রয়োজন থাকলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে অল্প-স্বল্প করে সবজি নিয়ে চালাতে হচ্ছে।”