‘ডিজিটাল ঋণ বিতরণ’ বাংলাদেশেও শুরু

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও চালু হল ডিজিটালি ঋণ বিতরণ সেবা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2020, 12:21 PM
Updated : 21 July 2020, 12:21 PM

একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি সিটি ব্যাংক এবং দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ এটি চালু করেছে।

কোনো জামানত ছাড়া ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের এই ঋণ বিকাশের গ্রাহকরা তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাবেন। ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।

সেবাটি নিয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যকর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ব্যাংক ঋণকে প্রযুক্তির সহায়তায় আরও জনমুখী করতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

“ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে যে কোনো মানুষের জরুরি অর্থের প্রয়োজন হলে তারা যেন তাৎক্ষণিকভাবে ন্যূনতম অর্থটি পায়, সেজন্যই আমরা বিকাশের সহায়তায় এই প্রকল্পটি চালু করেছি।”

তিনি বলেন, “এই ডিজিটাল ঋণের জন্য কোনো ধরনের জামানত লাগবে না। যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে সঙ্গেই সঙ্গেই এই ঋণ পাওয়া যাবে।

“আমরা প্রথম দেশে এই সেবা চালু করতে পেরে গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি, আজ থেকে চার-পাঁচ বছর পর এই ডিজিটাল ঋণ সেবা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ সুদেই এই ঋণ বিতরণ করা হবে জানিয়ে মাসরুর বলেন, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই ডিজিটাল ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন নির্বাচিত বিকাশ অ্যাপ গ্রাহক।

প্রকল্পের সফল সমাপ্তি শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে বিকাশ গ্রাহকদের জন্য এই সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়ার বিষয়ে মাসরুর বলেন, ঋণ নেওয়ার পর তিন মাসে, সম-পরিমাণ তিন কিস্তিতে নির্ধারিত তারিখে গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধিত হয়ে যাবে। পরিশোধের তারিখের আগে গ্রাহক এসএমএস এবং অ্যাপের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন পাবেন।

সিটি ব্যাংক ও বিকাশের কর্মকর্তারা জানান, পাইলট প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার জন্য নির্বাচিত গ্রাহকরা তাদের বিকাশ অ্যাপে ঋণ বা লোন আইকনটি দেখতে পাবেন। ঋণ নিতে গ্রাহককে তার ই-কেওয়াইসি ফরমে (নো-ইয়োর কাস্টমার ফর্ম) বিকাশে দেওয়া তথ্য সিটি ব্যাংককে দেওয়ার সম্মতি দিতে হবে। পরবর্তীতে ঋণের পরিমাণ এবং নিজের পিন দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা পেয়ে যাবেন।

বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই ঋণের সঙ্গে প্রযোজ্য সুদ ও অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালিত হবে।

চীন, ভারত, ফিলিপিন্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের ঋণ প্রকল্পে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট সুবিধা দেয় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের অ্যাফিলিয়েট ‘অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল’।

এই প্রকল্পেও গ্রাহকদের ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট করবে এই বিশ্বখ্যাত ফিনটেক প্রতিষ্ঠানটি।

সিটি ব্যাংকের এই ডিজিটাল ঋণ গ্রহণকারীরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন কিনা, তা মূল্যায়িত হবে। পরবর্তীতে যে কোন ধরনের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেই এই মূল্যায়ন বিবেচিত হবে।

কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিধিবিধান অনুসরণে সিটি ব্যাংক ঋণ খেলাপির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে।

মাসরুর বলেন, “আমরা সবসময়ই গ্রাহকের প্রয়োজনে আরও কাছে থাকার চেষ্টা করি। আমাদের দেশে অনেকেরই, বিশেষত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হঠাৎই অর্থের প্রয়োজন হয়। সেটি কিভাবে আরও সহজে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে সেই অর্থ ব্যবহার করতে পারেন, সেটি মাথায় রেখেই এই ডিজিটাল ঋণ সেবা চালু করেছি।”

উদ্যোগটি নিয়ে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিক জামানতবিহীন এই ঋণ প্রান্তিক মানুষ, তরুণ সমাজ, প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”